সন্তানদের যিনি পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন তাঁদের মা-বাবাও জন্মেছেন সেই চিকিৎসকের হাতেই। বলিপাড়ার একাধিক পরিবারের সন্তানসম্ভবার ভরসা ছিলেন তিনিই। কোনও সমস্যায় পড়লে তাঁর শরণাপন্ন হতেন তারকারা। দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের জন্য তিনি বলিপাড়ার প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন অচিরেই।
২০১৬ সালে জন্ম হয় করিনা কপূর খান এবং সইফ আলি খানের প্রথম সন্তান তৈমুর খানের। সেই তৈমুরের জন্ম হয় সুনাওয়ালার হাতেই। অবাক করার মতো বিষয় হল তৈমুরের মা করিনা কপূর খান ও তাঁর দিদি করিশ্মা কপূরের জন্মও তাঁরই হাতে।
তাঁর মৃত্যুতে চিকিৎসাক্ষেত্রে একটি যুগের অবসান ঘটল বলে মনে করছেন তাঁর সহকর্মী চিকিৎসকেরা। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া বলিপাড়ায়ও। বহু তারকার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যক্তিগত মুহূর্তের সঙ্গে গভীর ভাবে জড়িত ছিলেন এই খ্যাতনামী চিকিৎসক।
২০১৬ সালে জন্ম হয় করিনা কপূর খান এবং সইফ আলি খানের প্রথম সন্তান তৈমুর খানের। সেই তৈমুরের জন্ম হয় সুনাওয়ালার হাতেই। অবাক করার মতো বিষয় হল তৈমুরের মা করিনা কপূর খান ও তাঁর দিদি করিশ্মা কপূরের জন্মও তাঁরই হাতে।
একই ভাবে রণবীর কপূরের মেয়ে রাহার জন্মের সময়ও উপস্থিত ছিলেন সুনাওয়ালা। ঠিক একই ভাবে ১৯৮২ সালে রণবীরকে পৃথিবীর আলো দেখান সুনাওয়ালা। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে বিরাট কোহলি ও অনুষ্কার মেয়ে ভামিকার জন্মও হয়েছিল সুনাওয়ালার হাতেই।
স্ত্রী রোগ সম্পর্কিত চিকিৎসাশাস্ত্রে সুনাওয়ালার অন্যতম উল্লেখযোগ্য অবদান হল ‘পলিথিন আইইউডি’ আবিষ্কার। ১৯৬০ সালে এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন তিনি। জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা হত এবং সেই সময় নিরাপদ বিকল্প হিসাবে পরিচিত ছিল এটি। বর্তমানে যে প্রক্রিয়াগুলো ব্যবহার করা হয় তার আগে এই পদ্ধতিকেই নিরাপদ বলে মনে করা হত।
মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তারকা পরিবারের চিকিৎসক হলেও নিয়মিত অন্য রোগীদের পরামর্শ দিতেন একই ভাবে। হাসপাতালে তাঁর পরামর্শ ফি ছিল ৪ হাজার টাকা। অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব থেকে অবসর নেওয়া সত্ত্বেও তিনি নিয়মিত রোগী দেখতেন ও পরামর্শ দিতেন।
অবসর গ্রহণের পরও পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন এই চিকিৎসক। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত হাসপাতালের পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেছেন তিনি।
সুনওয়ালা ছিলেন মুম্বইয়ের ওয়াদিয়া মেটার্নিটি হাসপাতালের প্রফেসর এমেরিটাস। এ ছাড়া ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ প্রিনেটাল ডায়াগনসিস অ্যান্ড থেরাপির’ প্রতিষ্ঠাতা-প্রেসিডেন্ট এবং ‘ফ্যামিলি প্ল্যানিং অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’র সাম্মানিক মেডিক্যাল ডিরেক্টরের পদ অলঙ্কৃত করেছেন এই বিখ্যাত চিকিৎসক।
বলিউড তারকা থেকে সাধারণ রোগিণী, সকলের কাছেই তিনি ছিলেন ভরসার জায়গা। ১৯৯১ সালে নারী স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনায় অসামান্য অবদানের জন্য সুনওয়ালাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হয়েছিল।
তাঁর রোগীরা জানিয়েছেন রুস্তম অত্যন্ত বিনয়ী, ভদ্র এক জন চিকিৎসক ছিলেন। রোগীদের প্রতি তাঁর যত্নশীলতার কারণে চোখ বন্ধ করে ভরসা করেছেন সকলে। তাঁর এই জনপ্রিয়তাই তাঁকে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছিল।
ভারতের ফেডারেশন অফ অবস্টেট্রিক অ্যান্ড গাইনেকোলজিক্যাল সোসাইটিজ়ের প্রাক্তন সভাপতি হৃষিকেশ পাই বলেন, ভারতে তাঁর হাত ধরেই বন্ধ্যাত্ব সংক্রান্ত চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছিল সুনাওয়ালার হাত ধরেই।
সুনাওয়ালার জীবনীকার হলেন তাঁরই এক রোগিণী রশ্মি উদয় সিংহ। তিনি নিজে টানা ৪০ বছর ধরে সুনাওয়ালার পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। রশ্মির পুত্রসন্তানকে প্রসব করান ও হিস্টেরেক্টমির চিকিৎসা করেন সুনাওয়ালা। তাঁর জীবনী লিখতে পাঁচ বছর সময় লাগে রশ্মির।
সেখানে রশ্মি লিখেছেন, প্রিয় বন্ধুর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত থাকার পর রোগীর সন্তান প্রসব করাতে ঠিক সময়ে হাজির হয়েছিলেন তিনি।
ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে সিইও মিনি বোধনওয়ালা সংবাদমাধ্যমে জানান, ‘‘আমরা তাঁর সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে সৌভাগ্যবান।’’ উত্তরাধিকারী হিসাবে সুনাওয়ালা রেখে গিয়েছেন পুত্র ফিরোজ সুনাওয়ালাকে। তিনিও বাবার মতোই ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত।
সব ছবি :সংগৃহীত।