ED on Abhishek Banerjee

ইডির দাবি, এখনও ‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর সিইও অভিষেক, যদিও ভোট হলফনামা তা বলছে না

দু’বার লোকসভা নির্বাচন জিতেছেন অভিষেক। তৃণমূল সাংসদ দু’বারই নির্বাচন কমিশনকে যে হলফনামা দিয়েছেন, তাতে কোথাও ‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস’ সংস্থার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের কথা নেই।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৩ ১৭:৫১
ইডির দাবি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হলফনামার সঙ্গে মিলছে না।

ইডির দাবি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হলফনামার সঙ্গে মিলছে না। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে অনেক আগেই ইডি গ্রেফতার করেছে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে। ‘কালীঘাটের কাকু’ নামে পরিচিত সুজয়কৃষ্ণের পুরনো অফিসে সোমবার রাত থেকে তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। বুধবার সেই তল্লাশির কথা প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে ইডি। সেই বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। সেই সূত্রেই বুধবার থেকে আবার চাপানউতর শুরু হয়েছে শাসক তৃণমূল এবং বিরোধী বিজেপির। টুইট-যুদ্ধ শুরু হয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং অভিষেকের মধ্যে।

Advertisement

ইডির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কলকাতায় ‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে সংস্থার তিনটি জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছে সোম ও মঙ্গলবার। দাবি করা হয়েছে, ওই সংস্থায় চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) হিসাবে এক সময়ে চাকরি করেছেন সুজয়কৃষ্ণ। পাশাপাশিই লিখিত বিবৃতিতে ইডির দাবি, ‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর চিফ এগজ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও) তৃণমূলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে লেখা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদে ছিলেন অভিষেক।

যদিও ডায়মন্ড হারবারের দু’বারের সাংসদ অভিষেকের ২০১৪ বা ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার সময়ে নির্বাচন কমিশনে জমা-দেওয়া হলফনামা পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, তাঁর ওই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকার কোনও তথ্য নেই। ২০১৪ সালের হলফনামায় তিনি জানিয়েছিলেন, ‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’ সংস্থার ১০ টাকা মূল্যের এক হাজারটি শেয়ার রয়েছে তাঁর। ২০১৯ সালে তার কথাও নেই।

ওয়াকিবহালদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটে লড়ার আগে অভিষেক ওই সংস্থার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। ইডি তাদের প্রেস বিবৃতিতে যে বাক্যটি লিখেছে, তার অর্থ অভিষেক এখনও ওই সংস্থার ‘সিইও’। আগে তিনি ছিলেন ‘ডিরেক্টর’। অভিষেক আগে ওই সংস্থার ‘ডিরেক্টর’ থাকলেও এখন তাঁর সঙ্গে সংস্থাটির কোনও সংশ্রব নেই। ফলে ইডি কোথা থেকে ওই তথ্য পেল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলার অবকাশ থেকে যাচ্ছে। লিখিত বিবৃতিতে তারা যা বলেছে, তা আইনানুগ পথে প্রমাণ করা যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ী একাংশ।

ইডির প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

ইডির প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সুজয়কৃষ্ণকে ইডি গ্রেফতার করে গত ৩০ মে। ইতিমধ্যেই ইডি চার্জশিট জমা দিয়েছে। তাতে সুজয়কৃষ্ণের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। গ্রেফতার করার আগেই জানা গিয়েছিল, সুজয়কৃষ্ণ একটা সময় পর্যন্ত ‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর কর্মী ছিলেন। তিনিই প্রথম অভিষেকের নামোল্লেখ করেছিলেন সংবাদমাধ্যমে। তিনি একাধিক বার বলেছিলেন, ‘‘আমার সাহেবকে কেউ ছুঁতে পারবে না।’’ সাহেবের নাম জিজ্ঞাসা করায় তিনি জবাব দিতেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।’’

গত রবিবার আমেরিকায় চোখের চিকিৎসা পর্ব মিটিয়ে কলকাতায় ফেরেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। তার পর দিনই ‘লিপ‌্স অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালায় ইডি। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত চলে তল্লাশি। তা নিয়ে মঙ্গলবারেই সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার তিনি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি কর্মসূচিতে বক্তৃতা করতে গিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে রোজই ওরা অত্যাচার করছে। কালকেও সারা রাত… আমাকে কেউ বলেনি। আমি আইনজীবীর কাছ থেকে জানতে পেরেছি। ছেলেটা পরশু দিন ফিরেছে। হঠাৎ করে চলে গিছে তার চার-পাঁচটা জায়গায়। সকাল ছ’টায় খবর পেলাম বাবুরা বেরিয়েছে।’’

প্রথম ‘আমাদের বাড়িতে’ বললেও মমতা পরে স্পষ্ট করে দেন যে, তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে কোনও তল্লাশি হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘বাজে কথা বলে লাভ নেই, ওরা হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে যায়নি।’’ প্রসঙ্গত, ৩০বি হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটেই মমতা থাকেন। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় অভিষেকের ঠিকানাও সেটিই।

ইডি কোনও তল্লাশি চালালে সব সময়ে প্রেস বিবৃতি দিয়ে তা সংবাদমাধ্যমকে জানায় এমন নয়। তবে মঙ্গলবার মমতা ইডির তল্লাশির পদ্ধতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘কোথাও কোথাও তালা ভেঙেও ঢুকছে। চা করার লোক থাকলেও বার করে দেওয়া হচ্ছে। কে গ্যারান্টি দেবে ওরা নিজেরাই বিস্ফোরক, বন্দুক বা ব্যাগভর্তি টাকা রেখে দেবে না?’’ এর পরেই বুধবার প্রেস বিবৃপ্তি দিয়েছে ইডি। তাতে শিক্ষক নিয়োগ তদন্তে এখনও পর্যন্ত কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তারও উল্লেখ রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তে নেমে জানা যায়, সুজয়কৃষ্ণ শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত অভিযোগের সঙ্গে যুক্ত। এখনও পর্যন্ত এই তদন্তে ইডি ১২৬.৭০ কোটি টাকা উদ্ধার ও বাজেয়াপ্ত করেছে। এই মামলায় এখনও পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বিবৃতিতে বলে জানিয়েছে ইডি। সেখানে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূল বিধায়ক ও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য, কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুজয়কৃষ্ণের নাম রয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement