সাগরদিঘি উপনির্বাচনে স্থানীয় প্রার্থীর উপর ভরসা রাখলেন মমতা। ফাইল চিত্র।
সাগরদিঘির উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হলেন দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তৃণমূলের তরফে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষণায় দেখা গিয়েছে, ওজনদার প্রার্থীর বদলে স্থানীয় প্রার্থীর উপরেই ভরসা রেখেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। উপনির্বাচনে এখনও কোনও রাজনৈতিক দল তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। সেই দিক থেকে উপনির্বাচনের যুদ্ধে শাসকদল অনেকটাই এগিয়ে গেল বলে অনেকের ধারণা। গত বছর ২৯ ডিসেম্বর প্রয়াত হন রাজ্যের মন্ত্রী তথা সাগরদিঘির বিধায়ক সুব্রত সাহা। হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। তাঁর শূন্য আসনেই ভোট হচ্ছে সাগরদিঘিতে।
জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা সাংসদ খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, প্রার্থী দেবাশিস বর্তমানে সাগরদিঘি ব্লক তৃণমূলের সভাপতি। দীর্ঘ দিন ধরেই দলের সঙ্গে যুক্ত তিনি। তবে কোনও কোনও মহল থেকে সাগরদিঘির প্রার্থী হিসেবে নাম ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পুত্র অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের নাম। কিন্তু শেষমেশ স্থানীয় প্রার্থীর উপরেই ভরসা রাখলেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।
২০১১ সাল থেকেই সাগরদিঘি তৃণমূলের দখলে। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটে মুর্শিদাবাদে যে ৪টি আসনে তৃণমূল প্রার্থী দিয়েছিল, তারই একটি ছিল সাগরদিঘি। তৃণমূলের জন্য বরাদ্দ ৪ আসনেই তৎকালীন মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী গোঁজ প্রার্থী দিয়েছিলেন। গোঁজ প্রার্থীর কারণে অন্য ৩ জন তৃণমূল প্রার্থী পরাজিত হলেও, সাগরদিঘিতে জিতেছিলেন প্রয়াত সুব্রত। ২০১১ সালের পর ২০১৬ ও ২০২১ সালের সাগরদিঘিতে জোড়াফুল ফুটিয়ে হ্যাট্রিক করেছিলেন তিনি। কিন্তু গত বছর ২৯ ডিসেম্বর সুব্রত প্রয়াত হলে, উপনির্বাচন জরুরি হয়ে পড়ে সাগরদিঘিতে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়ন দাখিল করা যাবে এই উপনির্বাচনে। ২৭ ফেব্রুয়ারি ভোট, ফলাফল ঘোষণা হবে ২ মার্চ।
প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে উপনির্বাচনের যুদ্ধে তৃণমূল খানিকটা হলেও এগিয়ে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ এই আসনে প্রার্থী দেওয়ার আগে এখনও বৈঠক করার কর্মসূচি রয়েছে বিজেপির। আর অন্য দিকে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস মুখে জোটের কথা বললেও, সাগরদিঘি আসনে দু’পক্ষই প্রার্থী দেওয়ার পক্ষপাতী। তাই এ হেন পরিস্থিতিতে, সাগরদিঘি পুনর্দখল তৃণমূলের কাছে সহজ বলেই মনে করছেন জঙ্গিপুরের তৃণমূল সাংসদ খলিলুর।
তবে স্থানীয় প্রার্থী নাম ঘোষণা হওয়া খুশি মুর্শিদাবাদ জেলার তৃণমূল নেতারা। মুর্শিদাবাদ জেলার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘দিদি স্থানীয় প্রার্থী নির্বাচন করে ‘ভোকাল ফর লোকাল’ হয়েছেন বলেই আমরা মনে করছি। কারণ, বিগত কয়েকটি উপনির্বাচনে ওজনদার প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছিল তৃণমূল।’’ তাঁদের উদাহরণে যেমন আসানসোল লোকসভার উপনির্বাচনে শাসকদলের প্রার্থী ছিলেন প্রবীণ অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিংহ। তেমনই বালিগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করা গায়ক রাজনীতিক বাবুল সুপ্রিয়। আবার খড়দহের উপনির্বাচনে কলকাতা থেকে পাঠানো হয়েছিল তৃণমূল মন্ত্রিসভার সদস্য শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে। তাই মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের নেতারা ধরেই নিয়েছিলেন মন্ত্রী সুব্রতর শূন্য আসনে আসতেই পারেন কোনও ওজনদার তৃণমূল নেতা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনও চমক না দিয়ে সাগরদিঘির স্থানীয় নেতৃত্বের ওপরেই ভরসা রেখেছে মমতার দল।