সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে চার দিনের হেফাজতে চায় সিবিআই। —ফাইল চিত্র।
বার বার তাঁকে তলব করা হচ্ছে। আদালত তাঁকে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে। কিন্তু তিনি হাজিরা দিচ্ছেন না। প্রতি বারই অসুস্থতার কারণ দেখাচ্ছেন। আদালত সব দেখছে। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’র মামলায় এমনটাই মন্তব্য করলেন বিচার ভবনের বিচারক। কী ভাবে ‘কাকু’কে হাজির করানো যায়, তা এ বার আদালত বিবেচনা করবে, জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার বিচারভবনে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে ‘কাকু’র মামলার শুনানি ছিল। তাঁর আইনজীবী জামিনের জন্য আবেদন জানান। জামিনের বিরোধিতা করে সিবিআই। এই মামলায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে আদালতে ‘কাকু’কে হাজির করানো হয়েছিল। তাঁকে নিজেদের হেফাজতে চায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু ‘কাকু’র আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, সশরীরে হাজির না-করানো গেলে কী ভাবে ‘কাকু’র পুলিশ হেফাজত সম্ভব? মঙ্গলবারও ‘কাকু’র চার দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানায় সিবিআই। বিচারক বলেন, ‘‘ওঁকে তো সশরীরে হাজির করানো হয়নি। কী ভাবে পুলিশ হেফাজত সম্ভব?’’
কাকুর আইনজীবী সেলিম রহমান জানান, ইডির মামলায় তাঁর মক্কেলের জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতেই সিবিআই তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। না-হলে এত দিন পর্যন্ত তারা চুপ ছিল। ‘কাকু’র বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পর সিবিআই এত দিন আর কিছু করেনি, আদালতে দাবি করেন আইনজীবী। সিবিআই পাল্টা জানায়, প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় ‘কাকু’র যোগ পাওয়া গিয়েছে। এই মামলায় অন্য অভিযুক্ত সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়, কুন্তল ঘোষদের মতো ‘কাকু’ও অযোগ্য প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলেছিলেন। অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা পাঠিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক বলেন, ‘‘প্রথম দিন থেকেই অভিযুক্তের পুলিশ হেফাজত চাইছে সিবিআই। কিন্তু উনি সশরীরে হাজিরা না-দিতে পারলে সিবিআই কী করবে! গত কয়েক দিনে যা যা হয়েছে, তার জন্য তো সিবিআই দায়ী নয়। আদালত সব দেখছে।’’ ‘কাকু’র মামলার শুনানি চলাকালীন তাঁর আইনজীবী দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির সর্বময় নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়ালের জামিন মামলার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেন। কিন্তু বিচার ভবনের বিচারক জানিয়েছেন, ওই মামলার নির্দেশ সব ক্ষেত্রে চলে না। সব মামলার নিজস্ব কিছু বিষয় থাকে। ফলে কেজরীর মামলার উদাহরণ এ ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশকে প্রভাবিত করবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। বিচারকের মন্তব্য, ‘‘এ বার আমি দেখছি, কী ভাবে ওঁকে (সুজয়কৃষ্ণ) সশরীরে হাজির করানো যায়। এখন যে হেতু সিবিআই ওঁর পুলিশ হেফাজত চাইছে, আমাকে দেখতে হবে আইন কী বলছে।’’ উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতিতে ইডির মামলায় আগেই জামিন পেয়েছেন ‘কাকু’। কিন্তু তিনি প্রেসিডেন্সি জেলেই রয়েছেন। জেলের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তাঁর। সোমবারও ভার্চুয়াল মাধ্যমে তাঁকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। সে দিন তিনি কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়েছিলেন। মঙ্গলবার ‘কাকু’কে বসে হাজিরা দিতে দেখা গিয়েছে। সিবিআই জানিয়েছে, ‘কাকু’ সুস্থ হওয়ার পর তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হবে। অন্য দিকে, ‘কাকু’র আইনজীবী সব ক্ষেত্রেই তাঁর জামিনের আর্জি জানিয়েছেন।