বিপক্ষের আইনজীবীদের প্রতি কয়েক জন বিচারপতির 'ব্যবহার' নিয়ে দাবি পাল্টা দাবিতে সরগরম হল কলকাতা হাই কোর্ট। — নিজস্ব চিত্র।
বিপক্ষের আইনজীবীদের প্রতি কয়েক জন বিচারপতির ‘ব্যবহার’ নিয়ে দাবি পাল্টা দাবিতে সরগরম হল কলকাতা হাই কোর্ট। শুক্রবার বচসা তৈরি হয় আইনজীবীদের দু'টি গোষ্ঠীর মধ্যে। ওই বিচারপতিদের এজলাস বয়কটের জন্য প্রস্তাব আনার চেষ্টা হয় বলেও অভিযোগ! তবে তা এখনও হয়নি। এবং ওই বিচারপতিদের নাম প্রকাশ্যে আনেনি কোনও পক্ষই। আবার বয়কটের কথাও অস্বীকার করছেন বিপক্ষের আইনজীবীরা।
শুক্রবার সকালে হাই কোর্টে শুনানি পর্ব সবে শুরু হবে। একে একে এজলাসে আসছেন বিচারপতিরা। ঠিক এমন সময়ই আইনজীবীদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এক পক্ষের দাবি, কয়েক জন বিচারপতির এজলাস বয়কট করতে চান বিপক্ষরা। আর বিপক্ষের দাবি, বয়কট নয়, বার ও বেঞ্চের সুসম্পর্কের আবেদন করেছি আমরা। হাই কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণাভ ঘোষ বলেন, ‘‘যে বিচারপতিরা মামলকারীর হয়ে বিপক্ষের প্রতিকূল রায় দিচ্ছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে। বিশেষ করে দু'জন বিচারপতির কথা বলা হচ্ছে। যাঁরা নাকি ওই আইনজীবীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। অথচ তাঁদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বয়কটের সিদ্ধান্ত পাশ হয়নি। উল্টো দিকের কাউকে বলতে দেওয়া হয়নি। মাইক কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৃণমূল আইনি সেল এটা করছে। এ বিষয়ে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে আমরা চিঠি দিচ্ছি।’’
আবার এই বক্তব্যের বিপক্ষে গিয়ে বারের সম্পাদক বিশ্বব্রত বসু মৌলিক বলেন, ‘‘বয়কটের কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস যৌথ ভাবে আমাদের বিরুদ্ধে একটা এজেন্ডা নিয়েছে। নির্দিষ্ট করে কোনও বিচারপতির বেঞ্চের নামে আমরা বলতে পারি না! কিন্তু কিছু ঘটনা ঘটেছে। ২২০ জন সদস্য মিলিত ভাবে অভিযোগ দিয়েছে। তা মিটিয়ে বার এবং বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করছি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘প্রচুর মামলা পড়ে রয়েছে, যা নিয়ে আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানাব। যাতে করে বিভিন্ন বেঞ্চে দেওয়া যায় তা দেখার জন্য। প্রধান বিচারপতি আমাদের ভীষণ ভাবে সহযোগিতা করছেন।’’
প্রসঙ্গত, স্কুল সার্ভিস কমিশনের কয়েকটি মামলায় সিবিআইকে দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। স্কুলে গ্ৰুপ-ডি, গ্ৰুপ-সি কর্মী নিয়োগ এবং নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগ মামলায় সিবিআইকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয় বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চ। যা নিয়ে আপত্তি জানায় রাজ্য। ডিভিশন বেঞ্চে অবশ্য তার অনেকগুলিই স্থগিত হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া কিছু দিন আগে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চে একটি মামলার শুনানি চলাকালীন সরকারি আইনজীবী ‘ফোরাম শপিং’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। আইনের ভাষায় যার অর্থ, যে বিচারপতির কাছে মনের মতো বিচার পাওয়া যায় সেখানে মামলা করা। মামলাটি করেছিল বিজেপি। যদিও ওই আইনজীবী বিচারপতির উদ্দেশে ওই ‘শব্দবন্ধ’ ব্যবহার করেননি বলেই দাবি।