ফাইল চিত্র।
রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, কিছু বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলার পরে আবার শিক্ষক নিয়োগের মামলায় সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে এ বার অনুসন্ধানের কেন্দ্রে এসেছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) পাঁচ সদস্যের নজরদার কমিটি। ২০১৬ সালে শিক্ষক নিয়োগের যে-পরীক্ষা (এসএলএসটি) হয়েছিল, তার ভিত্তিতে বকেয়া নিয়োগ শেষ করার জন্য ২০১৯ সালে ওই কমিটি গঠন করা হয়। বিচারপতি এ দিন নির্দেশ দেন, সিবিআইয়ের যুগ্ম অধিকর্তা বা সমতুল পদের কোনও অফিসারকে মাথায় রেখে অনুসন্ধান কমিটি গড়তে হবে। এসএসসি-র নজরদার কমিটির ভূমিকা নিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে অনুসন্ধান চালিয়ে রিপোর্ট পেশ করতে হবে সিবিআই-কে। এর পাশাপাশি সার্বিক দুর্নীতির বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২১ মার্চ।
রাজ্য সরকারের তরফে এ দিন সিবিআই অনুসন্ধানের বিরোধিতা করা হয়। কিন্তু মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও ফিরদৌস শামিম দাবি করেন, নজরদার কমিটিতে সরকারি আধিকারিকেরা আছেন। শিক্ষক নিয়োগে ওই কমিটির ভূমিকা আগে সামনে আসেনি। তাই নিরপেক্ষ অনুসন্ধান প্রয়োজন।
শিক্ষক নিয়োগের অন্য একটি মামলায় সিবিআই অনুসন্ধানের উপরে বুধবার সাময়িক স্থগিতাদেশ দিয়েছে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই প্রসঙ্গের উল্লেখ করে মামলাকারীর আইনজীবীরা জানান, ওই বিষয়ের বিচারের জন্য নির্ধারিত ডিভিশন বেঞ্চ অনুপস্থিত থাকায় সাময়িক স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। দু’টি মামলা ভিন্ন ধরনের বলেও কোর্টে জানান তাঁরা। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এ দিনের নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা করতে পারে রাজ্য।
স্কুলে শিক্ষক, ‘গ্রুপ সি’ বা তৃতীয় শ্রেণি এবং ‘গ্রুপ ডি’ বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে এর আগেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। রাজ্য সরকার সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আর্জি জানায়। বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও বিচারপতি রবীন্দ্রনাথ সামন্তের ডিভিশন বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ খারিজ করে গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীর পদে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগের মামলায় প্রাথমিক ভাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিটি কোনও রিপোর্ট দিতে পারেনি। পরে সেই সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।
মামলাকারীর অন্যতম আইনজীবী ফিরদৌস শামিম আদালতের বাইরে জানান, এ দিনের মামলাটির প্রেক্ষিত অনেক বড়। ২০১৯ সালে সরকারি অফিসার ও প্রতিনিধিদের নিয়ে কেন নিয়োগে নজরদার কমিটি বসানো হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মামলা চলাকালীন কমিটির কাজকর্ম নিয়েও নানা প্রশ্ন সামনে এসেছে। সরকারি নজরদারি কমিটির অধীনেই কী ভাবে দুর্নীতি হল, সেটাই বড় প্রশ্ন। তাই কমিটির ভূমিকা অনুসন্ধানের আওতায় এসেছে। তা ছাড়া কোন কোন বিষয়ে নিয়োগে গরমিল আছে, তা-ও সার্বিক অনুসন্ধানের আওতায় এসেছে। তাই আগের মামলাগুলির থেকে এ দিনের মামলাটি পৃথক।
এসএসসি-র ওই নজরদার কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন শান্তিপ্রসাদ সিংহ। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব, শিক্ষামন্ত্রীর ওএসডি বা অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি এবং স্কুলশিক্ষা দফতরের এক জন ডেপুটি ডিরেক্টর সেই কমিটিতে ছিলেন। ছিলেন দফতরের এক জন আইন-আধিকারিকও। পদাধিকারবলে এসএসসি-র তৎকালীন চেয়ারম্যান ওই কমিটিরও চেয়ারম্যান ছিলেন। বুধবার ওই কমিটির অন্যতম সদস্য এবং এসএসসি-র উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে হাজির হন। সেই সময় কমিশনের এক অফিসার
কোর্টে জানান, শান্তিপ্রসাদবাবুর মৌখিক নির্দেশে তিনি কম্পিউটার থেকে নিয়োগের সুপারিশপত্র
প্রিন্ট করতেন।
ফিরদৌস শামিম এ দিন জানান, ওই নজরদার কমিটিতে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের এক প্রভাবশালী আধিকারিক এবং অন্য চার জন ছিলেন। তাঁদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখতে হবে সিবিআইকে।