WB Panchayat Election 2023

ভাঙড় থেকে বসিরহাট: মনোনয়নে ‘প্রশাসনিক ব্যর্থতা’ নিয়ে নবান্নের ব্যাখ্যা তলব হাই কোর্টের

বিচারপতি জানালেন, আদালত মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু কিছুই পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এটা কী হচ্ছে? আমার আশা ছিল এত কিছুর পরে ভাঙড় থানা অন্তত এফআইআর করবে।’’

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৩ ১২:৪৮
image of high Court

কলকাতা হাই কোর্ট। — ফাইল চিত্র।

মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়া প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ রাজ্য পুলিশ। প্রার্থীদের পুলিশি পাহারা দিয়ে মনোননয়ন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার যে নির্দেশ হাই কোর্ট দিয়েছিল, তা-ও মানা হল না। এমন ঘটনা ঘটলে উপযুক্ত ভাবে তদন্ত করে দেখতে হবে। শুক্রবার মন্তব্য করলেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। তাঁর নির্দেশ, এই পুরো ঘটনা নিয়ে রাজ্যকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। আগামী মঙ্গলবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

রাজ্যে মনোনয়ন জমা করাকে কেন্দ্র করে বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ উঠেছে। আইএসএফ, বিজেপি, কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের মনোনয়ন জমা করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি মান্থা নির্দেশ দিয়েছিলেন, বিরোধী প্রার্থীদের পাহারা (এসকর্ট) দিয়ে মনোনয়ন কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে পুলিশকে। মামলাকারীদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, পুলিশি পাহারার মধ্যেই এক জনকে গুলি করে মারা হয়েছে। কয়েক জন আক্রান্ত। তাঁর প্রশ্ন, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে কী ভাবে হামলা হল? এই প্রসঙ্গেই বিচারপতির নির্দেশ, মামলকারীরা যে সব অভিযোগ করেছেন, তা নিয়ে রাজ্যকে রিপোর্ট দিতে হবে। জানাতে হবে, হাই কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও কেন ওই প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারলেন না। রাজ্যকে আরও জানাতে হবে, আদালতের নির্দেশ থাকার পরেও যে পুলিশকর্মীরা নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, তাঁদের বিরুদ্ধে কেন কোনও পদক্ষেপ করা হবে না।

Advertisement

এই বিষয়ে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার সঙ্গে কথোপকথন যে ভাবে এগোল:

বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য: বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের নির্দেশে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য পুলিশ ‘এসকর্ট’ করে নিয়ে যাচ্ছিল প্রার্থীদের। পুলিশের সামনেই গুলিতে তাঁদের মধ্যে এক জনকে খুন করা হয়। আরও কয়েক জন আক্রান্ত। এক দুষ্কৃতীর বন্দুকের গুলি শেষ হয়ে গেলে তাঁকে ধরে ফেলেন স্থানীয়েরা। ওই দুষ্কৃতী জানান, সওকত মোল্লা পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। আদালতের নির্দেশকে অমান্য করে এই ধরনের পরিকল্পনামাফিক হামলা কেন?

বিচারপতি মান্থা: যে অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, সাধারণ ঘটনার ক্ষেত্রেও পদক্ষেপ করা উচিত। রাজনৈতিক দলের কথা বাদই দিলাম। আদালত মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু কিছুই পদক্ষেপ চোখে পড়ল না। এটা কী হচ্ছে? আমার আশা ছিল, এত কিছুর পরে ভাঙড় থানা অন্তত এফআইআর করবে। সেটিও করা হল না! এ সব কল্পনা করা যায় না। আদালতের নির্দেশের পরেও নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ রাজ্যের পুলিশ।

মনোনয়ন জমা করাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার আবার ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় চার ঘণ্টায় ৪০ হাজার মনোনয়ন জমা পড়েছে। যার অর্থ, এক এক জন প্রার্থীর মনোনয়ন জমা করার জন্য গড়ে ২ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছে। এর থেকে বোঝা যায়, রাজ্য সরকার কিছু একটা গন্ডগোল করেছে এবং গণতন্ত্রকে ঠাট্টা করেছে।’’

মনোনয়ন জমা দেওয়ার শুরুর দিন থেকেই ভাঙড়ে অশান্তির অভিযোগ উঠেছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন, বৃহস্পতিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই হিংসার অভিযোগ ওঠে সেখানে। বিজয়গঞ্জ বাজার রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। সেখানকার কাঁঠালিয়া মোড়ে তৃণমূল এবং আইএসএফের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। বোমাবাজি এবং গুলি চালানোর অভিযোগও উঠেছে। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বিজয়গঞ্জ বাজারে। স্থানীয়দের দাবি, কমপক্ষে ১০০টি বোমা পড়ে। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বহু গাড়ি। ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারদিক। দুপুর ৩টেয় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরও চলতে থাকে অশান্তি। চারিদিকে বোমাবাজি, গুলিবৃষ্টি চলতে থাকে। আইএসএফের অভিযোগ, তাদের ৮২ জন প্রার্থী যাতে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন, সেই নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। ভাঙড় এবং কাশীপুর থানা থেকে পুলিশ তাঁদের পাহারা (এসকর্ট) দিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় হামলা হয় শোনপুর বাজারের কাছে। বোমা-গুলি চলে। তাতেই আইএসএফ কর্মী মইনউদ্দিন গুলিবিদ্ধ হন এবং পরে তিনি মারা যান বলে দাবি করে আইএসএফ। অন্য দিকে, তৃণমূল বিধায়ক শওকত মোল্লার দাবি, তৃণমূল কর্মী রশিদ মোল্লাও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। তিনি জীবনতলার বাসিন্দা। তাঁর তিনটি গুলি লেগেছে বলে তৃণমূলের দাবি। স্থানীয় সূত্রে খবর, ভাঙড়ের সংঘর্ষে জখমদের মধ্যে সেলিম মোল্লা এবং মনিরুল মোল্লা নামে দুই যুবককে ভর্তি করানো হয়েছে কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে। তাঁদের দেহে বুলেটের ক্ষত রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।

মনোনয়নের শেষ দিনে গুলি চলে চোপড়াতেও। বাম-কংগ্রেস কর্মীরা মিছিল করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চলে বলে অভিযোগ। গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে দাবি, গুলিতে এক জন সিপিএম কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। বেশ কয়েক জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। যদিও পুলিশের তরফে এ বিষয়ে কিছু স্বীকার করা হয়নি। এই সব ঘটনা নিয়ে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি মান্থা রাজ্যের ব্যাখ্যা চেয়েছেন।

Advertisement
আরও পড়ুন