৫ নভেম্বর, ২০২০। বিভীষণদের বাড়িতে এসেছিলেন অমিত শাহ।
৫ নভেম্বর, ২০২০। সে দিন খবরের শিরোনামে ছিলেন বিভীষণ হাঁসদা। বাঁকুড়ার অখ্যাত চতুর্ডিহি গ্রামের দিনমজুর বিভীষণের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারতে এসেছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সঙ্গে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ থেকে কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ আরও অনেকে। বাড়ি ঘিরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। সংবাদমাধ্যমের ভিড়। সেই দিনই অমিতকে কাছে পেয়ে অসুস্থ মেয়ে রচনার কথা বলেছিলেন বিভীষণ। প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন, ছেলেবেলা থেকে ডায়াবেটিসে ভোগা মেয়ের দিল্লির এমসে চিকিৎসা হবে। কিন্তু ন’মাসকেটে গেলেও রচনার দিল্লি যাওয়া হয়নি। এখনও বাঁকুড়ার চিকিৎসকের ভরসাতেই বিভীষণের পরিবার। তবে একটা বড় উপকার হয়েছে। শাহি সফরের পর থেকে মেয়ের ওষুধ, ইনসুলিনের খরচ দিচ্ছে বিজেপি। যদিও বিভীষণ ও তাঁর স্ত্রী মনিকার চাওয়া একটাই, শাহের প্রতিশ্রুতি মতো দিল্লিতে চিকিৎসা হোক।
তখন বিধানসভা নির্বাচনের ‘ওয়ার্ম আপ’ পর্ব। রাজ্যে এসে জেপি নড্ডা থেকে অমিত শাহ, বিজেপি-র সর্বভারতীয় নেতারা প্রতিটি সফরে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছেন। কৃষক, বাউল, শ্রমিক— নানা ভাগে গৃহকর্তা বাছা হয়। আদিবাসী পরিবার হিসেবে বিভীষণদের বাড়িতে যান অমিত। নিজেরা মোটা চালের ভাত খেলেও অমিতের জন্য সরু চাল রেঁধেছিলেন মনিকা। সঙ্গে রুটি, ডাল, পটলভাজা, শুক্তো আর আলুপোস্ত। শেষ পাতে চাটনি আর গুজরাতি অমিতের প্রিয় পাঁপড়ভাজাও ছিল। কাঁসার থালার উপর কাঁচা শালপাতায় শাহকে খাবার পরিবেশন করার স্মৃতি মনে করালেন মনিকা। সেই সঙ্গে বললেন, ‘‘আমার মেয়ে সেই ছোট থেকেই অসুস্থ। চিকিৎসা হচ্ছে, কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম ভাল ডাক্তার দেখাতে দিল্লি নিয়ে যাব। কিন্তু এখনও সেটা হল না। কবে যে হবে!’’
সেই দিনের কথা মনে আছে বিভীষণের। আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন, অমিতের কাছ থেকে চেয়ে নেবেন মেয়ের চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি। ছেলেমেয়েকে নিয়ে ছবিও তুলেছিলেন অমিত। সেই সব ছবি টুইট করে আপ্যায়নে খুশি অমিত লিখেছিলেন, ‘চতুর্ডিহি গ্রামে শ্রী বিভীষণ হাঁসদাজির বাড়িতে চমৎকার বাঙালি খাবার খাওয়ার সুযোগ পেলাম। কোনও শব্দই তাঁদের আতিথেয়তা বর্ণনা করতে পারবে না।’
Had amazing Bengali food at Shri Vivishan Hansda ji’s home in Chaturdhi village.
— Amit Shah (@AmitShah) November 5, 2020
No words can express their warmth and hospitality.
চতুরডিহি গ্রামে শ্রী বিভীষণ হাঁসদা জীর বাড়িতে চমৎকার বাঙালী খাবার খাওয়ার সুযোগ পেলাম।
কোনো শব্দই তাদের আতিথেয়তা বর্ণনা করতে পারবেনা। pic.twitter.com/pdeMCEa6Xp
বিভীষণের মেয়ে রচনা ‘টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস’-এ আক্রান্ত। এখন দিনে তিন বার ইনসুলিন নিতে হয়। সেই সঙ্গে অন্যান্য ওষুধও আছে। শাহ চলে যাওয়ার পরে স্থানীয় সাংসদ সুভাষ সরকার বিভীষণের বাড়িতে এসেছিলেন। রচনার চিকিৎসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখে সুগারের পরিমাণ জানতে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থাও করেন। তখন সুভাষ সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘‘বিভীষণবাবুর মেয়ে রচনা ডায়াবিটিসে আক্রান্ত জানতে পেরে অমিত’জির নির্দেশে আমরা তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। অমিত’জি জানিয়েছেন, প্রয়োজনে রচনাকে এমসে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হবে।’’ কিন্তু সেটা এখনও হয়নি।
প্রতি মাসে রচনার চিকিৎসা বাবদ খরচ হয় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার মতো। বিভীষণ জানিয়েছেন, ওষুধ কেনার পরে প্রতি মাসে সাংসদের দফতরে চলে যান তিনি। আর প্রতি বারই তিনি এমসের কথা মনে করিয়ে দেন। জানিয়েছেন বিভীষণ। এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন সুভাষ। কিন্তু রচনার চিকিৎসার খরচ দেওয়া এখনও বন্ধ করেননি। কিন্তু এমসে নিয়ে যাওয়া হবে কবে? আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে তাঁকে ফোন করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। বাঁকুড়ার বিজেপি বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর দানা বলেন, ‘‘আমরা ভুলে যাইনি। ডাক্তারবাবু (সুভাষ সরকার) দিল্লি থেকে ১৫ তারিখের পরে ফিরবেন। তিনি এলেই এ নিয়ে কথা বলব। আসলে করোনা পরিস্থিতির কারণে এত দিন চাইলেও কিছু সম্ভব হয়নি। এ বার আস্তে আস্তে বিধিনিষেধ শিথিল হচ্ছে। দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।’’
শাহ তাঁর বাড়িতে আসায় অনেক বিতর্ক তৈরি হয়েছিল সেই সময়। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের এক তৃণমূল সদস্যা চলে গিয়েছিলেন বিভীষণদের বাড়িতে। মনিকাকে শাড়ি উপহারও দেন। পরে রচনার চিকিৎসার জন্য বাঁকুড়া ১ নম্বর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক মেডিক্যাল অফিসারকে নিয়ে বিভীষণের বাড়িতে যান স্থানীয় বিডিও। মেডিক্যাল অফিসার রচনাকে পরীক্ষা করে কিছু ওষুধও দেন। তা নিয়েও অনেক জলঘোলা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বেসরকারি চিকিৎসাতেই ভরসা রাখে হাঁসদা পরিবার। বিভীষণের কথায়, ‘‘আমি আশা করি সুভাষবাবু ব্যবস্থা করবেন। আমি আর কিছু চাই না। শুধু চাই মেয়েটার ভাল চিকিৎসা হোক।’’