বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
নানা অভিযোগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসচিবের বিরুদ্ধে পোস্টাল পড়ল গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে। মঙ্গলবার রাতে ‘সাধারণ ছাত্রছাত্রীবৃন্দ’ নামে দেওয়া ওই সব পোস্টারে ‘অর্থ তছরুপ’, হস্টেলের ঘর দখল, ছাত্রছাত্রীদের আক্রমণের মতো কয়েকটি অভিযোগ তোলা হয়েছে। কর্মসচিব (রেজিস্ট্রার) সুজিত চৌধুরীর দাবি, অভিযোগগুলির সঙ্গে তাঁর দফতরের যোগ নেই। এ সব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করা হয়েছে। পোস্টারগুলির দায় কোনও ছাত্র সংগঠনই নেয়নি। উপাচার্যের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁরা ওই পোস্টারগুলি মেরেছেন, ক্লোজ়ড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাঁদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের দাবি, টিএমসিপির অন্দরে ‘দ্বন্দ্ব’ ক্রমশ ফুটে উঠছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে। এক দিকে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তথা টিএমসিপির অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক খোন্দেকার আমিরুল ইসলামের (রামিজ) নেতৃত্বাধীন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠন। তাদের মদত দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ভবনে ওই আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা হয় সংগঠনের ওই অংশের নেতা-কর্মীদের। ঘটনাচক্রে তার পরেই কর্মসচিবের বিরুদ্ধে ওই সব পোস্টারগুলি পড়ে। অন্য দিকে রয়েছে, টিএমসিপির জেলা সভাপতি স্বরাজ ঘোষের ‘মদতপুষ্ট’ গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন রয়েছে তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষাকর্মী সংগঠনের। অভিযোগ, জেলা সভাপতির গোষ্ঠীর প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থন রয়েছে কর্মসচিবের। সে কারণেই বার বার বিরোধিতার মুখে পড়েন কর্মসচিব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আর একটি অংশের দাবি, কর্মসচিবদের অবসরের বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬২ করার জন্য শিক্ষা দফতর ও মুখ্যমন্ত্রী সচিবালয়ে আলোচনা চলছে। অবসরের বয়স দু’বছর বাড়লে বর্তমান কর্মসচিবের মেয়াদ বাড়াতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে। তা আটকানোর জন্যেই ‘সাধারণ ছাত্রছাত্রীবৃন্দ’র নামে কর্মসচিবের বিরুদ্ধে পোস্টার দেওয়া হয়েছে। ওই পোস্টারগুলি যাঁরা সেঁটেছেন, তাঁদের কয়েক জনের দাবি, “পোস্টারে যে সব বিষয়ের কথা লেখা হয়েছে, তার কয়েকটিতে কর্মসচিব সরাসরি যুক্ত। উনি আমাদের সঙ্গে বেশ কয়েক বার বাজে ব্যবহার করেছেন। আর কয়েকটি বিষয়ে তাঁর প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে।” রামিজ অবশ্য বলেন, “কারা এই পোস্টার মেরেছে জানি না। পোস্টারে যে সব বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত করে দেখা উচিত। তা হলে সত্যি-মিথ্যা জানা যাবে।” এ ভাবে পোস্টার দেওয়াকে সমর্থন করছে না টিএমসিপি জেলা সংগঠন। জেলা সভাপতি বলেন, “দীর্ঘদিন পরে ‘নাক’-এর প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শনে আসবেন। সেই সময়ে এ ধরনের পোস্টার দেওয়া ছাত্রসুলভ আচরণ নয়। আমরা তা সমর্থন করছি না।” কর্মসচিব বলেন, “স্থায়ী উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়েই কাজে গতি এনেছেন। সমস্যা মেটানোর জন্য অনেকগুলি কমিটি গঠন করেছেন। ছাত্রদের দাবি মেনে হস্টেল কমিটি গঠন করা হয়েছে। কাজের গতি রুদ্ধ করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে পোস্টার দেওয়া হয়েছে।”