বর্ধমান শহরে শোভাযাত্রা করে চলছে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে ঘটস্থাপনের প্রক্রিয়া। — নিজস্ব চিত্র।
প্রথা মেনে প্রতিপদে ঘটস্থাপন হল সর্বমঙ্গলা মন্দিরে। এ ভাবেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেল বর্ধমানে। রবিবার প্রতিপদে রাজাদের খনন করা কৃষ্ণসায়র থেকে জল ভরা হল ঘটে। ঘটস্থাপনের মাধ্যমে কার্যত গোটা রাঢ়বঙ্গে দুর্গাপুজো শুরু হয়ে গেল। বর্ধমানের রাজারা জন্মসূত্রে ছিলেন পঞ্জাবি। পরে বধূ হিসেবে নানা রাজ্যের কন্যারা এসেছেন পরিবারে। নানা সংস্কৃতি, লোকাচারের মিশেল হয়েছে এখানে। প্রতি বার প্রতিপদে শুরু হয় রাঢ়-জননী সর্বমঙ্গলার পুজো। কৃষ্ণসায়র থেকে আচার মেনে জল ভরা হয়। এর পর হয় ঘটস্থাপন। পুজো চলবে নবমী অর্থাৎ নবরাত্রি পর্যন্ত।
পূর্ব বর্ধমানের সবচেয়ে প্রাচীন বলে পরিচিত বর্ধমান শহরের দেবী সর্বমঙ্গলা মন্দির। রাজা তেজচন্দের আমলে মন্দিরের নির্মাণ। স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবীকে প্রাচীন মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। দেবী দুর্গা এখানে সর্বমঙ্গলা রূপে পূজিতা। মন্দিরের পুরোহিত অরুণকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সব ক’টি উৎসব রাজ-আমল থেকে মহাসমারোহে পালিত হয়ে আসছে। পুজোর চার দিন ষোড়শোপচারে দেবীর আরাধনা হয় সর্বমঙ্গলা মন্দিরে। আগে মহিষ এবং পাঁঠা বলি হত। এখন বলি বন্ধ। আগে সন্ধিপুজোর মহালগ্নে কামান দাগা হত। ১৯৯৭-এ এক বিস্ফোরণের পর থেকে তা-ও বন্ধ হয়ে যায়। তবে দেবীর পুজো ঘিরে ভক্তদের আবেগ এখনও একই রকম।’’ বস্তুত, পুজোর পাঁচ দিন এখানে তিলধারণের জায়গা থাকে না। হাজার হাজার ভক্ত সমবেত হন। মাছের টক-সহ নানা উপাচারে মায়ের ভোগ দেওয়া হয়। নবমীতে কয়েক হাজার মানুষকে ভোগ খাওয়ানো হয়।
সকালে পূজার্চনার পর মন্দির থেকে মায়ের রুপোর ঘট নিয়ে শোভাযাত্রা বেরোয়। জয়ঢাক-সহ বিভিন্ন বাদ্য বাজাতে বাজাতে ঘোড়ায় টানা রথের ওপর বিশেষ ছাতার তলায় ঘট নিয়ে বসেন পুরোহিতরা। বেশ খানিকটা পথ পরিক্রমা করে শোভাযাত্রা পৌঁছয় কৃষ্ণসায়র। সেখানে মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ঘটে জল ভরেন। এর পর তা নিয়ে এসে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়।