কাঞ্চনতলার জমিদারবাড়ি্র ঠাকুরদালান। —নিজস্ব চিত্র।
প্রায় তিনশো বছর আগে যে ঠাকুরদালানে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল, ভাঙনের জেরে এখন তা গঙ্গাগর্ভে। বার বার বন্যায় প্লাবিত হয়ে ধুলিয়ানের তৎকালীন জমিদার রাঘবেন্দ্র রায়ের পরিবার সরে এসেছিল নদীপাড় থেকে তিন কিলমিটার দূরে কাঞ্চনতলায়। সেখানে নতুন করে পুজো শুরু হয়। ২২টি পুতুলের এই পুজো ঘিরে গ্রামবাসীর উৎসাহের এখনও অন্ত নেই।
মা-দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশের সঙ্গে একই চালায় পুজো হয় শিব, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, নন্দী-ভৃঙ্গি, মকর, হাঁস, ইঁদুর, পেঁচা, বৃষবাহন, অসুর, সিংহ, মা-তারা, নৃসিংহদেব, গঙ্গাদেবী থেকে রাম-লক্ষ্মণের। রথের দিন প্রতিমা তৈরি শুরু হয়েছিল। গত শনিবার মণ্ডপে বসেছে ঘট। কাঞ্চনতলার জমিদারবাড়ির এই পুজো শুরু করেছিলেন তদানীন্তন জমিদার রাঘবেন্দ্র রায়। পরিবারের বর্তমান সদস্যদের অন্যতম সুদীপ বসুরায় জানান, ঢাকার মালুচি থেকে তাঁদের পূর্বসূরিরা এসেছিলেন মালদহের পার দেওনাপুরে। সেখানে বছর বছর বন্যা হত। বন্যা থেকে বাঁচতে পরে তাঁরা চলে আসেন কাঞ্চনতলায়। এক সময় ধুলিয়ানে এটিই ছিল একমাত্র দুর্গাপুজো। পরে আরও কয়েকটি বাড়িতে পুজো শুরু হয়।
সেই সময় গ্রামের সকলে চার দিন ধরে নিমন্ত্রিত থাকতেন এই বাড়িতে। গরুর দুধ দিয়ে তৈরি হত ছানা, মেওয়া, সন্দেশ। গ্রামের মহিলারা হাতে হাত লাগিয়ে তৈরি করতেন। সুদীপের কথায়, ‘‘বিদ্যুৎ তো তখন ছিল না। হ্যাজাক, হ্যারিকেন জ্বেলে পুজো হত। ছোটবেলায় বাড়িতে যে নিয়ম-নিষ্ঠায় পুজো হতে দেখেছি, এখনও তা ধরে রাখার চেষ্টা করছি। ছোটবেলায় দেখেছি, গোটা গ্রামের মানুষ চার দিন ধরে আমাদের পুজোয় যোগ দিতেন। বারোয়ারির ভিড়ে আজও মানুষ আমাদের এই পুজোয় একটি বার আসবেনই।’’ তবে আগের সেই জৌলুস আর নেই। বিরাট বাড়ির অধিকাংশ ঘর তালাবন্ধ থাকে সারা বছর। বাড়িটি দেখভাল করেন পরিচারকেরা। কুলদেবতা রাধাকৃষ্ণ, গোপীনাথ ঠাকুরের নিত্যপুজোর জন্য আছেন পুরোহিত। এই পুজোয় কয়েক বার এসেছেন প্রয়াত রাজনীতিক জগজীবন রাম।