CPM West Bengal

ধর্মকর্ম করেন সিপিএমের অনেক নেতা, অনেককে আবার ‘মানতে হয়’, দলকে জানাচ্ছেন এরিয়া নেতৃত্ব

জুলাই মাসের শেষে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট রাজ্যের সমস্ত জেলায় প্রশ্নমালা পাঠিয়ে জানতে চেয়েছিল ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও কূপমণ্ডুক প্রথাগুলি কি আপনি অনুসরণ করেন? তারই জবাব আসতে শুরু করেছে রাজ্য দফতরে।

Advertisement
শোভন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:০০
CPM

সিপিএমে কেউ ধর্ম মানেন ‘চাপে’, কেউ বিশ্বাসে। —ফাইল চিত্র।

এরিয়া কমিটি স্তরে সিপিএমের বড় অংশের নেতা ধর্মাচরণ করেন। মন থেকে না করলেও পারিবারিক ও সামাজিক কারণে তাঁদের সে সব করতে হয়। কেউ কেউ আবার বিশ্বাসের জায়গা থেকেই করেন। দল যে প্রশ্নমালা পাঠিয়েছিল, তার জবাবে রাজ্যের বেশির ভাগ এরিয়া কমিটিতে পাঠানো জবাব এটাই নির্যাস বলে সিপিএম সূত্রের খবর।

Advertisement

সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেই রিপোর্ট সব জেলার কেন্দ্রে জমা পড়ে গিয়েছে। এ বার জেলাগুলি তা পাঠানো শুরু করেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দলের রাজ্য দফতরের ঠিকানায়। নভেম্বরের ৩-৫ তারিখে হাওড়ায় সিপিএম রাজ্য কমিটির বর্ধিত অধিবেশন রয়েছে। সেখানেই ধর্মাচরণ সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যের রিপোর্ট পেশ করা হবে বলে জানা গিয়েছে।

দলের মধ্যে ‘ত্রুটি সংশোধন’ অভিযান শুরু করেছে সিপিএম। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে রাজ্যে রাজ্যে সেই কাজ চলছে। জুলাই মাসের শেষে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সমস্ত জেলায় প্রশ্নমালা পাঠিয়ে ছিল। তার ৭ নম্বরের ‘ক’এ লেখা ছিল, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও কূপমণ্ডুক প্রথাগুলি কি আপনি পালন করেন? সিপিএম সূত্রের খবর, ওই প্রশ্নে এরিয়া কমিটি স্তরের নেতাদের বেশিরভাগই বলেছেন, পারিবারিক ও সামাজিক চাপের জন্য তাঁদের নানা কিছু করতে হয়। অনেকে আবার বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিষয়কে এক দিনে পরিত্যাগ করা যায় না। ফলে তাঁরা এখনও সেই বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে রয়েছেন।

আলিমু্দ্দিন স্ট্রিট সূ্ত্রের খবর, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাতেও নেতারা বলেছেন তাঁরা ‘অপারগ’। অন্তত শুক্রবার তাঁরা যদি জুম্মার নমাজে না যান, তা হলে তাঁদের বিচ্ছিন্ন হতে হবে। রাজনৈতিক ও সামাজিক দু’ভাবেই। সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, সিপিএমের এরিয়া কমিটি স্তরে বস্তুবাদী নাস্তিকেরাই সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছেন।

এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগত ভাবে কোনও দিন ধর্মাচরণ করিনি। করবও না। তবে যিনি করেন, তিনি দলের নেতৃত্ব স্তরে থাকলেও আমি তাঁকে বাঁকা চোখে দেখি না। আমি কেন, পার্টিও তেমন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলে না। আবার কেউ ধর্মাচরণ করেন মানে এই নয় যে, তিনি অন্য ধর্মকে নিচু চোখে দেখবেন। সেটা আমাদের দলে হয় না। এটা সারা দেশেই করা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, কে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন।’’

প্রসঙ্গত, প্রয়াত নেতা সুভাষ চক্রবর্তীর সঙ্গে সিপিএমের একটা সময়ে এ নিয়ে তীব্র সংঘাত বেধেছিল। সুভাষ মনে করতেন, ভারতের মতো দেশে সংসদীয় ব্যবস্থায় রাজনীতি করতে হলে ধর্মেও থাকতে হবে আবার জিরাফেও থাকতে হবে। সুভাষ এক বার তারাপীঠে গিয়ে মা তারার কাছে পুজোও দিয়েছিলেন। তা নিয়ে দলের ভিতরে এবং বাইরে ব্যাপক হইচই হয়েছিল। পরবর্তীকালে রেজ্জাক মোল্লার হজ যাত্রা নিয়েও নানা কথা উঠেছিল দলে। প্রসঙ্গত, সুভাষ ও রেজ্জাক সেই সময় দলের রাজ্য কমিটির সদস্য ছিলেন। সুভাষ অধুনা প্রয়াত। আর রেজ্জাক তৃণমূলে। তবে সিপিএমে ধর্মাচরণ এখনও হয়। প্রশ্নের জবাব তেমনই বলে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন
Advertisement