সন্দেশখালিকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ বর্মা। — ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালির পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে জানালেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) মনোজ বর্মা। তাঁর কথায়, ‘‘সন্দেশখালিতে হিংসার ঘটনায় ইতিমধ্যেই আট জনকে আটক করেছে পুলিশ।’’ পুলিশের থেকে আশ্বাস পাওয়ার পরেই থানার সামনে থেকে বিক্ষোভ তুলে নেন মহিলারা। শুক্রবারই সন্দেশখালিকাণ্ডে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
বুধবার রাত থেকেই শাহজাহান শেখ, শিবু হাজরাদের গ্রেফতারির দাবিতে উত্তপ্ত সন্দেশখালি। থানা ঘেরাও, পথ অবরোধ করছেন উত্তেজিত জনতা। সে দিন রাতেই শিবুর একটি পোল্ট্রি ফার্মে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। বুধবারের পর বৃহস্পতিবার শাহজাহানদের গ্রেফতারির দাবিতে পথে নেমেছিলেন মহিলারা। শুক্রবারও একই ছবি দেখা যায় সন্দেশখালির জেলিয়াখালি এলাকায়। শাহজাহান, শিবুদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গ্রামে অত্যাচার চালান তাঁরা। জোর খাটিয়ে গ্রামবাসীদের দিয়ে নানা কাজ করিয়ে নেন ইচ্ছার বিরুদ্ধে। জমি জবরদখল থেকে শুরু করে একাধিক অত্যাচারের অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে।
শুক্রবার সকাল থেকে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ায় সন্দেশখালিতে। শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ তথা সন্দেশখালি-২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শিবুর তিনটি পোল্ট্রি ফার্ম এবং বাগানবাড়িতে আগুন লাগান বিক্ষোভকারীরা। এমনকি, তাঁর মদের দোকানেও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে। পাল্টা পথে নামেন শিবুদের অনুগামীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) শুক্রবার বলেন, ‘‘দুপুরের দিকে কিছু ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে পুলিশ গিয়েছিল, ঘটনার তদন্ত করে দেখছে।’’ এর পরই তিনি যোগ করেন, ‘‘গত দু-তিন দিন ধরে বসিরহাট পুলিশ জেলার সন্দেশখালিতে কিছু বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। উচ্চপদস্থ অফিসারও আছেন। যাঁরা এই হিংসার ঘটনায় জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ করেন মনোজ বর্মা। তিনি বলেন, ‘‘কারও যদি কোনও অভিযোগ থাকে, আমরা নিশ্চিত করতে চাইছি সেটারও তদন্ত হবে। অভিযোগ যা হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে যা পাওয়া যাবে তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
উত্তেজিত জনতা দুপুর থেকে সন্দেশখালি থানার সামনে বসে বিক্ষোভ দেখান। তাদের দাবি, পুলিশ যাঁদের ধরেছে, তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। পাশাপাশি শিবুদের গ্রেফতার করার দাবিতে অনড় ছিলেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ ক্রমাগত মাইকিং করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কথা বলেছে। থানার সামনে থেকে উঠে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ বিক্ষোভকারীরা থানার সামনে থেকে উঠে যান। তবে তাঁদের দাবি মানা না হলে ফের শনিবার পথে নামার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
অন্য দিকে, বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পুলিশকর্তা সিদ্ধনাথ গুপ্ত গিয়েছেন সন্দেশখালিতে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা নাগাদ থানায় পুলিশের অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তিনি।