সন্দেশখালিতে জ্বলছে তৃণমূল নেতার পোলট্রি ফার্ম। — নিজস্ব চিত্র।
সন্দেশখালিতে বিক্ষোভকারীদের পাল্টা মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতা শিবু হাজরার অনুগামীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার ওই নেতার বাড়ি, বাগানবাড়ি এবং পোলট্রি ফার্মে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তার পরেই শিবুর সমর্থকেরা পাল্টা মারধর শুরু করেন বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারী মহিলাদেরও মারধর করা হয়েছে। এলাকা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে নামানো হয়েছে র্যাফও।
সন্দেশখালিতে শুক্রবার দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছে সংবাদমাধ্যমও। অভিযোগের তির শিবুর অনুগামীদের বিরুদ্ধেই। দাবি, তাঁরা বিক্ষোভরত গ্রামবাসীদের উপর চড়াও হন। অভিযোগ, গ্রামবাসীদের এমন মারধর করা হয়েছে যে, জ্বলন্ত পোলট্রি ফার্মের পাশে শুয়ে তাঁরা কাতরাচ্ছেন। তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া বা চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। মার খেয়ে পড়ে থাকা গ্রামবাসীদের কাছে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। ওই এলাকা ঘিরে রেখেছেন শিবুর অনুগামীরা। অভিযোগ এমনই। পুলিশ ভিতরে ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছে।
অন্য দিকে, সন্দেশখালি থানার সামনে শুক্রবার বিকেলে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু করেন একদল গ্রামবাসী। লাঠি হাতে থানার সামনে বসে পড়েন তাঁরা। দাবি, তাঁদের জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে শাহজাহান, শিবুদের গ্রেফতার করে সেই জমি ফেরত দিতে হবে।
শুক্রবার সকালে সন্দেশখালির জেলিয়াখালি এলাকায় শিবুর তিনটি পোলট্রি ফার্মে আগুন ধরিয়ে দেন এলাকার মানুষ। নেতৃত্বে ছিলেন মহিলারা। শিবু ছাড়াও শাহজাহান, উত্তম হাজরাদের গ্রেফতারির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। ওই এলাকার কাছাকাছি দমকল না থাকায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। পরে শিবুর বাড়ি এবং বাগানবাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা।
শাহজাহান, শিবুদের মতো তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গ্রামে অত্যাচার চালান তাঁরা। জোর খাটিয়ে গ্রামবাসীদের দিয়ে নানা কাজ করিয়ে নেন ইচ্ছার বিরুদ্ধে। জমি জবরদখল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অত্যাচারের অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। জমি দখল করেই ওই পোলট্রি ফার্ম তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারী মহিলারা জানান, তাঁদের স্বামীদের জোর করে কাজ করতে বাধ্য করা হত। কাজ করার পর মেলে না প্রাপ্য পারিশ্রমিক। টাকা চাইতে গেলে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ শিবুদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার সন্দেশখালিতে শাহজাহানদের গ্রেফতারির দাবিতে যাঁরা পথে নেমেছিলেন, তাঁরা নিজেদের তৃণমূল সমর্থক বলেই দাবি করেছিলেন। অভিযোগ, দলের নাম ভাঙিয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়ান শাহজাহান, শিবু, উত্তম এবং তাঁদের সহযোগীরা। তাঁদের বক্তব্য, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর তাই পাল্টা গর্জে উঠেছেন গ্রামবাসীরাও। গ্রামবাসীদের দাবি, দীর্ঘ দিনের চাপা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ সন্দেশখালির এই বিক্ষোভ। যে কোনও প্রকারেই হোক শিবু, শাহজাহান, উত্তমদের গ্রেফতার করতে হবে বলে জানান তাঁরা।
গত দু’দিন ধরে উত্তপ্ত সন্দেশখালি। বুধবার রাতে শিবুর আরও একটি পোলট্রি ফার্ম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দিনভর রাস্তায় ছিলেন এলাকার মহিলারা। শাহজাহান, শিবুদের গ্রেফতারির দাবিতে বাঁশ, লাঠি, দা, কাটারি নিয়ে তাঁরা পথে নামেন। বসে পড়েন রাস্তার উপরেই। থানা ঘেরাওয়ের চেষ্টাও করা হয়। ওই ঘটনায় দু’পক্ষের পাঁচ জনকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। শিবুর তরফেও একটি এফআইআর করা হয়েছিল সন্দেশখালি থানায়। বিক্ষোভকারী ১১৭ জনের বিরুদ্ধে তাতে ভাঙচুর এবং খুনের চেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছিল। একই ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের তরফে শিবুদের বিরুদ্ধেও দায়ের হয় একটি এফআইআর। শুক্রবারের ঘটনায় নতুন করে আরও আট জনকে আটক করেছে পুলিশ।