Chandannagar

শীতে ঘোরার ঠিকানা খুঁজছেন? ক্রিসমাসের ছুটিতে টুক করে ঘুরে নিতে পারেন ফরাসডাঙা

বড়দিনের ছুটিতে কাছেপিঠে ভ্রমণের ঠিকানা খুঁজছেন। তা হলে চলুন ফরাসডাঙায়। ‘আলোর শহর’ বলে পরিচিত চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো জনপ্রিয়। তবে বড়দিনে সেজে ওঠে এখানকার প্রাণকেন্দ্র স্ট্র্যান্ড। প্রাচীন গির্জায় প্রার্থনাও হয়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:০২
আলোর সাজে আলোর শহর।

আলোর সাজে আলোর শহর। ছবি: সংগৃহীত।

নভেম্বরে সেজেছিল এ শহর। তার মাসখানেকের মধ্যে আবার ফিরেছে আলোর জৌলুস। চন্দননগরের প্রাণকেন্দ্র ‘স্ট্র্যান্ড’ সেজেছে আলোকমালায়।

Advertisement

এক মাসে উৎসব বদলেছে। তবে বদলায়নি উচ্ছ্বাস। জগদ্ধাত্রী পুজোর সুবাদে নামজাদা এই শহরে শুরু হয়েছে যিশু ভজনার প্রস্তুতি। তাতেই মাতোয়ারা শহর থেকে শহরতলি। ভাগীরথী পারের এই প্রাচীন শহর বহু দিন ছিল ফরাসিদের শাসনে। এই শহরের আনাচকানাচে তাই রয়েছে প্রাচীন ভবন। ফরাসিরা যে নগরের নকশা তৈরিতে যত্নশীল, তা প্রমাণ করে এখনও এখানে বেঁচে থাকা স্থাপত্যগুলি। ফরাসডাঙার ভোল বদলেছে। এখন পথেঘাটে মাথা তুলছে বড় বড় শপিংমল। বুটিক থেকে মাল্টিপ্লেক্স, রেস্তরাঁ— কী নেই সেখানে! তবে আধুনিকতার মোড়ক পুরোপুরি ঢেকে দিতে পারেনি প্রাচীন স্থাপত্যের ঐতিহ্যকে।

চন্দননগর স্ট্র্যান্ড।

চন্দননগর স্ট্র্যান্ড। ছবি: সংগৃহীত।

তেমনই একটি স্থান স্ট্র্যান্ড। ভাগীরথী যেখানে বাঁক নিয়েছে, সেখানেই রয়েছে স্ট্র্যান্ড। লাগোয়া ঘাটটি থামওয়ালা। নদীর পারে বাঁধানো চত্বর। কোর্ট, ইনস্টিটিউট, কলেজ, স্কুল, মিউজ়িয়াম নিয়ে তার বিস্তৃতি। এক সময় এই শহরেই আনাগোনা ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ-সহ অনেকের। ভাগীরথী লোকামুখে ‘গঙ্গা’। সেই গঙ্গার হাওয়া খেতে দূর-দূরান্ত থেকে এখনও আসেন লোকজন। কমবয়সি যুগলেরা একান্তে সময় কাটানোর জন্য বেছে নেন সংলগ্ন পার্ক।

স্ট্র্যান্ড ধরে পায়ে পায়ে হাঁটলে ডান পাশে চোখে পড়বে গির্জা, সেক্রেড হার্ট চার্চ। গথিক শৈলীতে তৈরি গির্জাটি বহু প্রাচীন। ২০১৭ সালে ফরাসি আমলের আটটি স্থাপত্যকে হেরিটেজ কমিশনের তরফে ‘হেরিটেজ বিল্ডিং’-এর তকমা দেওয়া হয়। সেই তালিকায় রয়েছে, সেক্রেড হার্ট গির্জা। কমিশন সূত্রে জানা যায়, তালিকায় স্থান পেয়েছ, রেজিস্ট্রি ভবন, চন্দননগর কলেজ, কান‌াইলাল বিদ্যামন্দির (ইংরেজি বিভাগ), কানাই‌লাল বিদ্যামন্দির (ফ্রেঞ্চ বিভাগ), লিবার্টি গেট এবং হরিহর শেঠের বাড়ি।

চন্দননগরের আলোকসজ্জা।

চন্দননগরের আলোকসজ্জা। ছবি: সংগৃহীত।

প্রতি বছর ক্রিসমাসে চন্দননগরের গির্জাকে কেন্দ্র করেই স্ট্র্যান্ড সেজে ওঠে আলোর মালায়। যে শহরের আলোর খ্যাতি বিশ্বজোড়া, সেখানে বড়দিনের আলোতও যে চমক থাকবে, তাতে আর আশ্চর্য কী!

শুধু স্ট্র্যান্ড নয়, চার্চ রোড বলে পরিচিত রাস্তাটির দু’পাশেও পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। খাবার, পোশাক, নানা জিনিসপত্রে ক্রিসমাসের সন্ধ্যা মুখর হয়ে ওঠে। ১ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকে উৎসবের আবেশ। চার্চের কাছেই এখানকার পুরনো কনভেন্ট স্কুল।

চার্চের দিকে না-গিয়ে ভাগীরথী পারের ফুটপাথ ধরে হাঁটলে সম্মুখীন হওয়া যায় আর এক পুরনো স্থাপত্যের। পাতালবাড়ি। সেই সময়ের নির্মাণশৈলী কতটা আধুনিক হতে পারে এই বাড়ি তার প্রমাণ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটির সর্বনিম্ন তলাটি ভাগীরথীতে নিমজ্জিত। এই বাড়িতে এসেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও।

স্ট্র্যান্ডের গা ঘেঁষেই রয়েছে ফরাসি শাসক দুপ্লের নামাঙ্কিত মিউজ়িয়াম। দুপ্লে প্যালেস বলে সেটি পরিচিত। দুপ্লের ব্যবহৃত আসবাবের পাশাপাশি বহু অ্যান্টিক জিনিসের দেখা মিলবে এখানে। সুদৃশ্য বাগান রয়েছে ভবনটির সামনে এবং পিছনে। এখানে প্রবেশের জন্য ৫টাকা টিকিট। মোবাইল ফোন জমা রাখতে হয়। মঙ্গল, বৃহস্পতিবার এবং সরকারি ছুটির দিনগুলি ছাড়া সকাল ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত মিউজ়িয়ামটি খোলা থাকে। সেখান থেকে বেরিয়ে স্ট্র্যান্ড ধরে খানিক হাঁটলে পৌঁছবেন চন্দননগরের দুপ্লে কলেজে। সেখানেও তৈরি হয়েছে একটি মিউজ়িয়াম। এই শহরের অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের নথি, জিনিসপত্র, প্রাচীন বয়ন শিল্পের নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে এখানে।

স্ট্র্যান্ড ঘুরে চলে যেতে পারেন দুর্গাচরণ রক্ষিত রোডের নন্দদুলাল মন্দিরে। ফরাসিদের দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী মন্দিরটি নির্মাণ করান। দোচালা মন্দিররীতির অন্যতম নির্দশন এটি। এ ছাড়া দেখার জায়গা বলতে চন্দননগর স্টেশন থেকে পশ্চিম দিকে কয়েকটি পার্ক রয়েছে। সেগুলি পিকনিকের জন্য জনপ্রিয়। ঘুরে নিতে পারেন পাশের শহর চুঁচুড়াও।

খাওয়াদাওয়া

চন্দননগরে আসবেন কিন্তু খাওয়াদাওয়া করবেন না, তা-ও কি হয়! স্ট্র্যান্ডের কাছেই আছে জলশ্রী। ভেসেলে রেস্তরাঁ। নদীর বুকে ভেসে দুপুর অথবা রাতের খাওয়া সারতে পারেন এখানে। স্ট্র্যান্ডের চাট, দই ফুচকা, লিট্টির স্বাদ আস্বাদনে বিকেল হলেই স্থানীয় লোকজন ভিড় করে। এখানে এসে মিষ্টিমুখ না-করলে ঘোরাটাই বৃথা। সূর্য মাদকের জলভরা, মৃত্যঞ্জয় সুইটসের দই, পঞ্চাননের মিষ্টির খ্যাতি কম নয়। রয়েছে নামীদামি রেস্তরাঁও।

কোথায় থাকবেন?

সরাসরি চন্দননগরে থাকার জায়গা সে ভাবে নেই। তবে চন্দননগর স্ট্র্যান্ড থেকে খানিক দূরে কেএমডিএ পার্কে ‘আলো’ নামে পশ্চিবঙ্গ সরকারের পর্যটন দফতরের একটি আবাস তৈরি হয়েছে। জায়গাটি চন্দননগর স্টেশনের পশ্চিম দিকে। তবে দিল্লি রোডে কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল পেয়ে যাবেন।

কী ভাবে যাবেন?

হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল লোকাল ধরে চন্দননগর নামতে হবে। ট্রেনে ৪৫ মিনিট থেকে ৫০ মিনিট সময় লাগে। স্টেশন থেকে টোটো অথবা অটো ধরে স্ট্র্যান্ড। সেখান থেকেই দর্শনীয় জায়গাগুলি ঘুরে নেওয়া যায়।

সরাসরি গাড়িতেও আসতে পারেন। কলকাতা থেকে দিল্লি রোড ধরে এলে চন্দননগরের দূরত্ব মোটমুটি ৪৭ কিলোমিটার। ঘণ্টা দুয়েকেই পৌঁছে যাবেন। জিটি রোড দিয়েও আসা যায়। সে ক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগবে।

Advertisement
আরও পড়ুন