এই শীতে বাড়ির সকলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়তেই পারেন গোবরডাঙার উদ্দেশে। ছবি: সংগৃহীত
গায়ে গরম জামা ওঠানোর বিশেষ সুযোগ না ঘটলেও, ডিসেম্বরের শুরু থেকে হাওয়ায় উৎসবের মেজাজ। শীতকাল আসতে না আসতেই বাঙালির মন কেমন যেন পিকনিক পিকনিক করে ওঠে। শীতের আমেজ গায়ে মেখে বনভোজনের সে এক আলাদা অনুভূতি। বা়ড়ির সকলকে নিয়ে কোনও এক শীতের সকালে বেরিয়ে পড়লেই হল। কিন্তু বেরিয়ে তো পড়লেন, কোথায় যাবেন ঠিক করেছেন কি? এ রাজ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বনভোজনের জায়গা। খুব দূরে নয়, আবার গেলে মন ভরে যাবে, এমন জায়গা মূলত চড়ুইভাতির জন্য বেছে নেন অনেকে। উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা তেমনই একটি জায়গা। এই শীতে বাড়ির সকলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়তেই পারেন গোবরডাঙার উদ্দেশে।
মফস্সল শহর গোবরডাঙা। আয়তনে ছোট হলেও এই জায়গার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশভাগের বহু কাহিনি। গোবরডাঙার পাশ দিয়ে তির তির করে বইছে যমুনা নদী। নদীর উপর কাঠের সেতু, তার পাশে জমিদার বাড়ির সিংহ দরজা, তার ঠিক পিছনে প্রাচীন নকশা আর ঐতিহ্য মেশানো জমিদার বাড়ি। গোবরডাঙার বাতাসে নীরবতা কথা বলে। শান্ত শহর গোবরডাঙা। সারা বছরের শহুরে ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে এখানে আসতেই পারেন। এখানকার প্রতি অলিগলিতে সংস্কৃতির ধারা বইছে। গান, নাচের চর্চা তো রয়েছেই, এখানে নাট্যচর্চার ইতিহাসও প্রায় ১৪০ বছরের। এই শহরকে বাদ দিয়ে রাজ্যের থিয়েটারের ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ‘ভিলেজ অফ থিয়েটার’ নামে খ্যাত গোবরডাঙাকে পর্যটনকেন্দ্রে রূপ দেওয়া হোক, সে ইচ্ছা নানা ভাবে প্রকাশ করেছেন এখানকার বাসিন্দারা। এ শহরে পিকনিকে গেলে আপনি খালি হাতে ফিরবেন না। বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের শিবমন্দির ও স্নানের ঘাট, গোবরডাঙার মুখোপাধ্যায় পরিবারের রাজবাড়ি (যা জমিদার বাড়ি হিসাবে পরিচিত), প্রসন্নময়ী কালী ও দ্বাদশ শিব মন্দির, সূর্যঘড়ি, ফেয়ারি হল, ফ্রেঞ্চ ক্লক, চাইনিজ মিংভাজ বা ফুলদানি সিংহদ্বার, নহবতখানা, গন্ধর্বপুরে ব্রাহ্মমন্দির, সাহাপুরের মঙ্গলালয়, নীলকুঠির ধ্বংসাবশেষ, গৈপুরের ওলাবিবির দরগা, কুণ্ডুপুকুরের শিবমন্দির, খাঁটুরার জোড়া শিবমন্দির, গড়পাড়া ও রঘুনাথপুরের মসজিদের মতো বহু স্থাপত্য এখনও মাথা উঁচু করে উজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
কোথায় পিকনিক করতে পারেন?
গোবরডাঙা পুরসভার উদ্যোগে প্রায় ৩৪ একর জমি নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘কঙ্কনা বিনোদন উদ্যান’। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কঙ্কনা বাঁওর। শীতের রোদ গায়ে মেখে বনভোজনের জন্য এখানে আসতে পারেন। ভাল লাগবে। এই উদ্যানে আসার প্রবেশমূল্য একেবারেই কম। মাথাপিছু ২০ টাকা। কিন্তু চড়ুইভাতির জন্য আলাদা করে ৫০০ টাকা দিতে হবে। উদ্যানের চৌহদ্দির মধ্যে চারটি ঘর রয়েছে। হইচই করতে করতে একটু ক্লান্ত লাগলে সেখানে বিশ্রাম নিতে পারেন। রান্না করে নিয়ে যেতে পারেন, আবার সঙ্গে রাঁধুনি নিয়েও যেতে পারেন। ওখানে গিয়ে রান্না করার ব্যবস্থাও রয়েছে। অনেক বড় এলাকা নিয়ে তৈরি উদ্যান, ফলে ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট ইচ্ছামতো খেলাধুলো করতে পারেন। এত বিস্তৃত জায়গা পেয়ে বাচ্চাদেরও ভাল লাগবে। তবে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে উদ্যান বন্ধ হয়ে যায়। তার আগেই পিকনিকের পাট চুকিয়ে ফেলতে হবে।
কী ভাবে যাবেন?
শিয়ালদহ থেকে বনগাঁগামী যে কোনও লোকাল ট্রেনে উঠে গোবরডাঙা স্টেশনে নামতে হবে। তার পর স্টেশন থেকে টোটো করে পৌঁছাতে হবে এই উদ্যানে। আর সড়কপথে গেলে গাড়ি করে দেড় ঘণ্টার পথ গোবরডাঙা। স্টেশনের কাছে পৌঁছে স্থানীয় কাউকে জিজ্ঞাসা করে নিলেই বলে দেবে ঠিকানা।