শিলাবতী নদীর ধারে অবস্থিত এই জায়গাটিকে ‘বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ বলা হয়। ছবি: ট্রিপঅ্যাডভাইসর
আমেরিকার অ্যারিজোনায় পাথুরে জমির মধ্যে বয়ে গিয়েছে কলোরাডো নদী। আর সেই নদীর জলে পাথর ক্ষয় হয়ে তৈরি হয়েছে আশ্চর্য এক ভূমিরূপ। নাম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। সেই অদ্ভুত গিরিখাত দেখতে সারা পৃথিবী থেকে বহু মানুষ প্রতি বছর ছুটে যান সেখানে। কিন্তু কেউ যদি বলে সেই গ্র্যান্ড ক্যানিয়নেরই ছোট্ট একটি সংস্করণ রয়েছে এই বাংলাতেই, বিশ্বাস করবেন?
জায়গাটির নাম গনগনি। কলকাতা থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টার দূরত্বে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় শিলাবতী নদীর ধারে অবস্থিত এই জায়গাটিকে ‘বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন’ বলা হয়। যদি উঁচুনিচু ভূমিরূপ আর জঙ্গল আপনার পছন্দের হয়, তা হলে দারুণ লাগবে গনগনি।
শিলাবতী নদী তার চলার পথে এই ভূমিরূপ তৈরি করেছে। কোথাও গুহা, কোথাও অজানা কোনও প্রাণীর মুখ। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এখানেই একটি গুহায় বকাসুরের বাস ছিল, ভীম বধ করেছিলেন তাঁকে। আবার স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়কারও ইতিহাস জড়িয়ে আছে এই অঞ্চলের সঙ্গে। সূর্যাস্তের সময় শিলাবতীর রূপ মোহিত করতে পারে। তবে সেই দৃশ্য দেখতে হলে সূর্যাস্তের আগেই নদীখাত থেকে উপরে উঠে আসতে হবে। তবে শীতকালে এখানে বহু মানুষ পিকনিক করতে আসেন। পিকনিকের পর খাওয়াদাওয়ার প্লেট থেকে আবর্জনা সবই নদীখাতে ফেলে দেন অনেকে। এতে জায়গাটির গরিমা কিছুটা হলেও নষ্ট হয়।
কী ভাবে যাবেন
সড়কপথে কলকাতা থেকে যেতে চাইলে আরামবাগ হয়ে যেতে পারেন। আর নয়তো কোলাঘাট, শালবনী হয়ে চন্দ্রকোনা রোড ধরে পৌঁছে যেতে পারেন গনগনি। দ্বিতীয় পথটি কিলোমিটারের হিসাবে একটু বেশি হলেও সময় কিন্তু মোটামুটি একই লাগে। যাঁরা ট্রেনে যাবেন, তাঁদের রূপসী বাংলা কিংবা আরণ্যকের মতো কোনও পুরুলিয়াগামী ট্রেনে চেপে নামতে হবে গড়বেতা স্টেশনে। স্টেশন থেকে রিকশা বা টোটোতে করে কলেজ মোড়। কলেজ মোড় থেকে গনগনি এক দেড় কিলোমিটার। প্রাকৃতিক শোভা দেখতে দেখতে হেঁটেই পৌঁছে যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
গনগনিতে থাকার বিশেষ কোনও জায়গা নেই। সম্প্রতি পর্যটন দফতরের উদ্যোগে একটি পর্যটক আবাস, ও নজর মিনার তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কাজ এগোলেও কবে সেগুলো পুরোপুরি ব্যবহার করা যাবে, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা নেই এখনও। তাই অধিকাংশ পর্যটকই রাত্রিবাস করেন গড়বেতায়। এ ছাড়া কলেজ মোড় যাওয়ার পথে একটি আশ্রম আছে। সেখানেও অনেকে থেকে যান রাতে।