সোমবার ইস্টবেঙ্গলের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, মোহনবাগান সচিব উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন। ফাইল ছবি
আইএসএলের ডার্বি আর পাঁচ দিন পরেই। তার আগে হকির ডার্বি নিয়ে উত্তপ্ত কলকাতার ময়দান। রবিবার ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়। রাতের দিকে সেই ঘটনার দায় ইস্টবেঙ্গলের উপরেই চাপায় মোহনবাগান। সোমবার ইস্টবেঙ্গলের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, মোহনবাগান সচিব উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন, যা পরিস্থিতি আরও ঘোরালো করে তুলেছে। সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত।
সোমবার ইস্টবেঙ্গলের কর্মসমিতির সদস্য দেবব্রত (নীতু) সরকার একটি প্রেস বিবৃতি দিয়ে বলেন, “ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান হকি লিগ ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ার পর মোহনবাগান সচিবের বক্তব্য শুনে সারা বাংলার ক্রীড়াপ্রেমী মানুষেরা হতবাক। সেটাই স্বাভাবিক। ‘খেলার মাঠে এ রকম গালাগালি হবে না, গণ্ডগোল হবে না, এটা আবার কী!’ এই ধরনের মন্তব্য একজন দায়িত্বশীল মানুষ করতে পারেন, তা ভেবেই অবাক হচ্ছি। খেলার মাঠে শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় রাখা উচিত সবার। সেখানে মোহনবাগান ক্লাবের সচিব হিসাবে সমস্যাটা না মিটিয়ে উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলছেন। আমার মনে হয় এটা কখনওই করা উচিত নয়।” তার পাল্টা দেবাশিস আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “কে কী বলছে সেটা দেখা আমার কাজ নয়। সব কথায় কান দিই না।”
বিবৃতিতে দেবব্রত আরও লিখেছেন, “যে চেয়ারে বসে আছেন, সেই চেয়ারের সম্মানরক্ষা করার মতো শব্দ ব্যবহার করা উচিত। একজন বিবেচক মানুষের দায়িত্বশীল চেয়ারে বসা উচিত, যারা এই ভাবনা চিন্তায় সহমত হবেন। ১৯৮০ সালে ইডেনে দুই প্রধানের ম্যাচ দেখতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৬ জন ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। রবিবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে তার দায় কি মোহনবাগান সচিব নিতেন? তাই আমার মনে হয় দায়িত্বশীল পদে থেকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে খেলার মাঠ কলুষিত হবে না।” পাল্টা দেবাশিস বলেছেন, “একজন সচিবের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতে পারেন আর একজন ক্লাবের সচিবই। তাঁর নীচে থাকা কোনও কর্তার কোনও মন্তব্য বা প্রেস বিবৃতির উত্তর দিতে চাই না।”
ইস্টবেঙ্গলের তরফে এ দিন লম্বা প্রেস বিবৃতি পাঠানো হয়। দেবব্রত লিখেছেন, “সারা পৃথিবী জুড়ে উৎসাহী সমর্থকরা মাঠে আসেন তাদের প্রিয় ক্লাবকে সমর্থন করতে এবং অবশ্যই জয় দেখতে। সেটা আমরা যারা কর্মসমিতিতে আছি এবং কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত আছি তারা সবাই জানি, পাশাপাশি আমাদের এটা জানা উচিত কোনো বিশৃঙ্খলা, কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি খেলাধুলোর জন্য একেবারে কাম্য নয়। আর সেটা খেলার মাঠে হলে রাজ্যের পাশাপাশি দেশের জন্য ভাল বার্তা বহন করে না। শান্তি, শৃঙ্খলাটা বজায় রাখাটাই হচ্ছে আমাদের বড় ক্লাবের প্রধান লক্ষ্য। আমরা এখানে যুদ্ধ করতে এসেছি মাঠে, মাঠের বাইরে নয়।”
রবিবার রাতে মোহনবাগানের তরফে দাবি করা হয়, দল যখন ১-০ গোলে এগিয়েছিল তখন ইস্টবেঙ্গলের কিছু সদস্য-সমর্থক মাঠের ভেতরে ঢুকে পড়েন। তার ফলে আম্পায়াররা খেলা থামিয়ে দিতে বাধ্য হন। ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা মোহনবাগান কর্তাদের উদ্দেশে কটূক্তি করেন এবং কেউ কেউ নাকি তাদের দিকে চেয়ার ছুড়ে মারতে যান। ঘটনার প্রতিবাদে মোহনবাগান সচিব দেবাশিস খেলা না দেখে মহমেডান মাঠের বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন।
অথচ ইস্টবেঙ্গল দাবি করে, তাদের কর্তাদের উদ্দেশেই কটূক্তি করা হয়েছে। সমাজমাধ্যমে একাধিক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, যেখানে ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার বসে রয়েছেন, তার পিছনে মোহনবাগান গ্যালারি থেকে সমর্থকদের চিৎকার ভেসে আসছে। যদিও সেই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। ইস্টবেঙ্গলের তরফে এই ম্যাচ নিয়ে এখনও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে কলকাতার হকি লিগের আয়োজক হকি বেঙ্গলের দাবি, মন্দ আলোর জন্যই খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
রবিবার দুপুরে ২২ বছর পর কলকাতা হকি লিগে মুখোমুখি হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান। দীর্ঘ দিন পর এ বার হকি দল গড়ে খেলছে মোহনবাগান। রবিবার দুপুরের ম্যাচ নিয়ে বহু আগে থেকেই প্রতীক্ষা শুরু হয়েছিল। রাস্তায় রাস্তায় পোস্টার দিয়ে মানুষকে মহমেডান মাঠে অনুষ্ঠেয় এই ম্যাচে আসার জন্য অনুরোধ করেছিল হকি বেঙ্গল। ময়দানে দুই দলের কোনও খেলা থাকলেই ঝামেলা এড়ানো যায় না। ফলে হকিতে নির্বিষ ম্যাচেও লেগে গেল উত্তেজনা।
ম্যাচ থেকে হাজির হয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগানের কর্তারা। ইস্টবেঙ্গলের কর্তা দেবব্রত সরকার এবং মোহনবাগানের সচিব দেবাশিস মাঠে ছিলেন। সূত্রের খবর, মোহনবাগান গ্যালারি থেকে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের উদ্দেশে কটূক্তি করা হয়। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা তা মেনে নেননি। পাল্টা তাঁরাও জবাব দেন। সেই নিয়েই ঝামেলা লেগে যায়। মোহনবাগান গ্যালারি থেকে মাঠে ইট-পাটকেল পড়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সূত্রের খবর, অতীতে আই লিগে দুই দলের ডার্বি ম্যাচ নিয়ে ঝামেলার সূত্র। তখন ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান দুই দলই খেলত কলকাতা ডার্বিতে। সেই সময় ডার্বির ফিরতি লেগের একটি ম্যাচ করোনার কারণে বাতিল হয়ে যায়। সেই ম্যাচের আয়োজক ছিল ইস্টবেঙ্গল। সেই ম্যাচের টাকা ফেরত পাননি বলে অভিযোগ জানাতে থাকেন সমর্থকরা। দেবব্রত সরকারকে উদ্দেশ্য করে শুরু হয়ে যায় কটূক্তি, অশ্লীল মন্তব্য।পাল্টা দিতে থাকেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরাও। জবাবে মাঠে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন মোহনবাগান সমর্থকরা। এর পরেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। মাঠে নামে ঘোড়সওয়ার পুলিশ। দর্শকদের বের করে দিয়ে গোটা মাঠ খালি করে দেওয়া হয়। খেলোয়াড়রা ঝামেলা শুরু হতেই সাজঘরে ফিরে গিয়েছিলেন।