বিরাট কোহলি এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন। —ফাইল চিত্র।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে তিন দিনেই টেস্ট জিতে নিল ভারত। ব্যাটে, বলে ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে অনেকটাই এগিয়ে রোহিত শর্মারা। সেটারই প্রমাণ এক ইনিংস এবং ১৪১ রানে প্রথম টেস্ট জয়। ডমিনিকায় জিতে টেস্ট সিরিজ়ে ১-০ এগিয়ে গেল ভারত। দুই ইনিংস মিলিয়ে এক ডজন উইকেট নিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ম্যাচের সেরা অভিষেক টেস্টে শতরান করা যশস্বী জয়সওয়াল।
শুক্রবারই টেস্ট শেষ করার তাড়া ছিল অধিনায়ক রোহিতের। ৭৬ রান করে বিরাট কোহলি আউট হন। তার পর ঈশান কিশন জীবনের প্রথম টেস্টে ব্যাট করতে নেমেছেন। এক দিনের ক্রিকেটে ২০০ করা ব্যাটার শুক্রবার একটার পর একটা বল ছাড়ছেন, কখনও ডিফেন্ড করছেন। ১৯টি বল খেলে ফেলার পরেও রান আসেনি তাঁর ব্যাটে। তত ক্ষণে সাজঘরে বিরক্ত হয়ে গিয়েছেন রোহিত। তিনি ঠিক করে ফেলেছেন ডিক্লেয়ার করবেন। কিন্তু প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা ছেলেটি একটি রানও করবে না! শুধু মাত্র সেটা ভেবে অপেক্ষা করছিলেন ঈশানের একটি রানের। শেষে থাকতে না পেরে সাজঘর থেকে ইঙ্গিত করলেন রান নিতে। জোসেফ আলজারির বল ফ্লিক করে এক রান নেন ঈশান। সঙ্গে সঙ্গে ডিক্লেয়ার করে দেন রোহিত। ২৭১ রানে এগিয়ে তখন ভারত। জয়ের জন্য সেই রান যে যথেষ্ট তা ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং দেখেই বোঝা গিয়েছিল।
ক্যারিবিয়ান শিবির দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামতে দেখা গেল নতুন বল হাতে তৈরি হচ্ছেন মহম্মদ সিরাজ। পরের ওভার করলেন জয়দেব উনাদকট। কিন্তু পিচের যা অবস্থা তাতে অশ্বিনের হাতে বল তুলে দেওয়া ছিল শুধুই সময়ের অপেক্ষা। বেশি সময়ও নেননি রোহিত। মাত্র চার ওভার পরেই বল তুলে দেন অশ্বিনের হাতে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫০.৩ বল ব্যাট করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। এর মধ্যে ৪২.৩ ওভার করেছেন অশ্বিন এবং জাডেজা। বাকি আট ওভারের মধ্যে সিরাজ ছ’ওভার এবং উনাদকট দু’ওভার। তাতেই শেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ় শিবির। একাই সাত উইকেট নিলেন অশ্বিন। জাডেজা নিলেন দু’টি এবং সিরাজ একটি।
2nd 5-wicket haul in the ongoing Test 👍
— BCCI (@BCCI) July 14, 2023
34th 5-wicket haul in Test 👌
8th 10-wicket haul in Tests 👏
Well done, R Ashwin 🙌 🙌
Follow the match ▶️ https://t.co/FWI05P4Bnd #TeamIndia | #WIvIND pic.twitter.com/u9dy3t0TAd
টেস্টের প্রথম দিন থেকেই ভারতীয় দলের কর্তৃত্ব দেখা গিয়েছিল। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ় দল কোনও দিক দিয়েই রোহিতদের পরীক্ষার মুখে ফেলার লক্ষণ দেখায়নি। প্রথম দিনেই ১০ উইকেট চলে গিয়েছিল ক্রেগ ব্রেথওয়েটদের। ঘরের মাঠে যে দল নিজেদের প্রধান স্পিনার চোটের জন্য মাঠের বাইরে থাকার পরেও স্পিন সহায়ক উইকেট বানায়, সেই দলের লড়াই করার ইচ্ছা কতটা রয়েছে সেই নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। টেস্টের প্রথম দিনে নবম ওভারে রোহিত বল তুলে দিয়েছিলেন অশ্বিনের হাতে। পাঁচ উইকেট নিয়ে সেই ইনিংস শেষ করেছিলেন ভারতীয় স্পিনার। যদিও পিচ থেকে সাহায্য না পেলেও এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে শেষ করতে বেশি সময় লাগত না অশ্বিনদের। মাত্র ১৫০ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল ক্যারিবিয়ানদের প্রথম ইনিংস।
অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা যশস্বী একাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের সেই রান টপকে যান। অনায়াসে ১৭১ রান করে যান তিনি। রোহিত নিজে ১০৩ রান করেন। বিরাট করেন ৭৬ রান। জাডেজা ৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন। তাঁদের দাপটে ৪২১ রান তুলে নেয় ভারত। যা ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে হারানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। শুভমন গিল এবং অজিঙ্ক রাহানে রান না পেলেও তাই কোনও অসুবিধা হয়নি ভারতের। ম্যাচ শেষে রোহিত বলেন, “আমরা বুঝতে পারছিলাম এই পিচে ব্যাট করা কঠিন। তাই দ্বিতীয় বার যাতে ব্যাট না করতে হয় সেটাই ছিল লক্ষ্য। সেটা পেরেছি। ৪০০ রান করেছি। সেই সঙ্গে খুব ভাল বল করেছি আমরা।”
রোহিত নিজেদের কথা বললেও, যেটা বললেন না, সেটা হল ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের জঘন্য বোলিং এবং ব্যাটিংয়ের কথা। টেস্টের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কখনও একজন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারকে দেখেও মনে হল না তাঁরা জিততে নেমেছেন। কোনও মতে ভারতীয় ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে ব্যাট এবং বল করাই যেন ছিল তাদের কাজ। ভারত তো জিতবে, এটা ধরে নিয়েই খেলতে নেমেছিলেন ব্রেথওয়েটরা। শুধু প্রথম দিন থেকে শেষ সময় পর্যন্ত দল উৎসাহ দিতে দেখা গেল দর্শকদের। যে কজন মাঠে এসেছিলেন খেলা দেখতে, তাঁদের সব সময় দেখা গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের জন্য গলা ফাটাতে। ম্যাচ শেষে ক্যারিবিয়ান অধিনায়কও তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে গেলেন। আর কী-ই বা করতে পারতেন তিনি।
এই টেস্ট এবং জয়টা যদিও মনে থেকে যাবে যশস্বীর। ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিয়ে যিনি বলেন, “নির্বাচকদের ধন্যবাদ আমাকে নেওয়ার জন্য। রোহিত ভাইকে ধন্যবাদ আমার উপর বিশ্বাস রাখার জন্য। আমি এই দিনটার জন্যই পরিশ্রম করছিলাম। প্রতি দিন, প্রতি মুহূর্তে পরিশ্রম করে গিয়েছি। নিজের লক্ষ্য স্থির রেখেছিলাম। দেশের হয়ে টেস্ট খেলা আমার কাছে একটা স্মরণীয় মুহূর্ত। ছোটবেলা থেকেই এই দিনটার স্বপ্ন দেখতাম। এই মুহূর্তটা আমার কাছে খুব আবেগের। তবে এটা সবে শুরু। আমার এই পর্যন্ত আসার পিছনে অনেক মানুষ রয়েছেন। তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ। আমি এখন শিখছি। রোহিত ভাই, বিরাট ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলি। আমি প্রতি দিন শিখি ওদের থেকে।”
যশস্বী এই টেস্ট থেকে শিখছেন। আগামী টেস্ট থেকেও শিখবেন। ২০ জুলাই থেকে পোর্ট অফ স্পেনে শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ় শিখবে কি? এক দিনের বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা বলছিলেন বদলের কথা। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের এমন গা ছাড়া ভাব দেখে ক্রিকেটপ্রেমীরা আশঙ্কায় আদৌ তারা বদলাতে চায় তো?