সেই ভিন্ মুলুক। যেখানে মৃত তারাকেও (দূরের ছোট বস্তুটি) প্রদক্ষিণ করছে একটি ভিন্গ্লহ। ছবি- নাসার সৌজন্যে।
বৃহস্পতির কপাল ভাল। কপাল ভাল শনি, ইউরেনাস, নেপচুনেরও। মঙ্গলও টায়েটুয়ে বেঁচে যেতে পারে বরাতজোরে।
তবে শেষের সে দিন এলে সূর্যের ভয়ঙ্কর রোষ থেকে রেহাই পাওয়ার কোনও আশাই কিন্তু নেই পৃথিবীর। জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যেতেই হবে পৃথিবীকে।
বুধের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকার মাসুল তাকে এখনই গুনতে হচ্ছে। শেষের সে দিনে তাই তার চেহারাটিই হবে সবচেয়ে ভয়াবহ। পৃথিবীর যমজ গ্রহ, আমাদের রোজকার আকাশের খুব প্রিয় শুকতারা (শুক্রগ্রহ)-টিরও অবস্থা হবে তথৈবচ।
তবে বেঁচে যাবে মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানে থাকা গ্রহাণুদের মুলুক গ্রহাণুপুঞ্জ (‘অ্যাস্টারয়েড বেল্ট’)। বেঁচে যাবে নেপচুনের পর বরফের সাম্রাজ্য- ‘কুইপার বেল্ট’ও। যেখান থেকে মাঝেমধ্যেই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে আসে বহু বড়, ছোট, মাঝারি আকারের ধূমকেতু।
সৌরমণ্ডলের শেষের সে দিনের ছবিটা ঠিক কেমন হবে, সূর্যের মৃত্যুর পরেও কোন কোন গ্রহ টিঁকে যাবে আর কাদের যেতে হবে অন্তিম শয্যায় এই প্রথম তার একটা সম্যক ধারণা গড়ে তুলতে পারলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের ঠিকানা আকাশগঙ্গা ছায়াপথের প্রায় কেন্দ্রস্থলের দিকে থাকা একটি তারামণ্ডলকে দেখে। যে তারামণ্ডলটি রয়েছে পৃথিবী থেকে সাড়ে ছ’হাজার আলোকবর্ষ দূরে। সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’-এ।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই তারামণ্ডলের তারাটির মৃত্যু হয়েছে। তার জ্বালানির প্রায় সবটুকুই ফুরিয়ে গিয়ে সেটি হয়ে গিয়েছে ‘হোয়াইট ডোয়ার্ফ স্টার’ বা শ্বেতবামন নক্ষত্র। মৃদু আলো বেরিয়ে আসছে সেই তারাটি থেকে। সেই আলোও ফিকে হতে হতে একদিন একেবারেই নিভে যাবে। ঘটনা হল, এই অবস্থাতেও একেবারে আমাদের বৃহস্পতির মতো ভর ও আকারের একটি ভিন্গ্রহ এখনও সেই মৃত তারাটিকে তার আগের কক্ষপথ ধরেই প্রদক্ষিণ করে চলেছে। তারাটির মৃত্যুর পরেও সেই তারামণ্ডলের অন্য কোনও গ্রহ তাদের জোরালো অভিকর্ষ বলের টানে বৃহস্পতির মতো ভর ও আকারের এই ভিন্গ্রহটির কক্ষপথ বদলে দিতে পারেনি।
হাওয়াইয়ের কেক অবজারভেটরির টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে সেই মৃত তারা আর তাকে প্রদক্ষিণ করা ভিন্গ্রহটি।
ঘটনা হল, কোনও কোনও তারা তার শেষ পর্যায়ে পৌঁছে শ্বেতবামন হয়ে যাওয়ার আগে আচমকা অনেকটা ফুলেফেঁপে ওঠে। তখন তাকে বলা হয় ‘রেড জায়ান্ট স্টার’ বা লাল দৈত্যাকার তারা। সেই সময় তারাটির ব্যাস একলাফে প্রায় কয়েক হাজার গুণ বেড়ে যায়। তখন তার মধ্যে চলে আসে সেই তারাটিকে খুব কাছ থেকে প্রদক্ষিণ করা গ্রহগুলি।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই গ্রহটি সেই বিপদও উতরে গিয়েছে। নক্ষত্রটি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকায়। আমাদের সূর্যও রেড জায়ান্ট পর্যায়ে পৌঁছলে তার ব্যাস পৃথিবীর এখনকার কক্ষপথ ছাড়িয়ে যাবে। ফলে পৃথিবীকে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যেতেই হবে সূর্যের তীব্র রোষে।
গবেষকদের বক্তব্য, এই গ্রহটি যে দূরত্বে রয়েছে তার নক্ষত্রটি থেকে তা থেকে এই প্রথম নিশ্চিত হওয়া গেল, আমাদের বৃহস্পতি বেঁচে যাবে সূর্যের শেষের সে দিনের সেই ভয়ঙ্কর রোষানল থেকে। খুব বরাতজোরে বেঁচে যেতে পারে মঙ্গলও। আরও ৫০০ কি সাড়ে ৫০০ কোটি বছর পরে।