(বাঁ দিকে) ডোনাল্ড ট্রাম্প। মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অন্যতম চিন্তার বিষয় মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এখনও বন্ধ হয়নি। বাংলাদেশের সরকারি হিসাবে গত বছরে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এই অবস্থায় আমেরিকার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড) বাংলাদেশে আর্থিক সাহায্য দেওয়া আপাতত ৯০ দিনের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান বন্ধ করা হচ্ছে না বলে দাবি বাংলাদেশের। সে দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য খাবার এবং পুষ্টি খাতে সাহায্য বন্ধ না করার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরেই আমেরিকার অভ্যন্তরীণ এবং কূটনৈতিক নীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হল তাঁর ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি। অর্থাৎ, আমেরিকার প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা হবে, তার পরে অন্য দেশের কথা ভাবা হবে। সেই মতো ইজ়রায়েল এবং মিশর ছাড়া সব দেশের জন্যই আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাম্পের প্রশাসন। আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, নতুন করে সাহায্যের বিষয়গুলি অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত এই সাহায্য দেওয়া যাবে না। ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর খবরে প্রকাশ, ভারতের ক্ষেত্রে অনুদান দেওয়া জারি থাকবে কি না, সে বিষয়ে এখনও ‘পর্যালোচনা’ করছে নয়াদিল্লির আমেরিকান দূতাবাস।
আমেরিকার এই সিদ্ধান্তের আবহে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সমাজমাধ্যম হ্যান্ডল থেকে জানানো হয়, ঢাকায় আমেরিকার দূতাবাসের তরফে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আমেরিকার কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সাহায্য অব্যাহত থাকবে। এই সিদ্ধান্তের জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান ইউনূস।
বাকি সব অনুদান আমেরিকা আপাতত বন্ধ রাখলেও রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান চালু রাখায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। কারণ, মায়ানমারের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং তার সমাধান অন্যতম একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে ইউনূস প্রশাসনের কাছে। ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম রবিবার জানিয়েছে, ২০২৪ সালে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বাংলাদেশে এখনও মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার প্রশাসন রোহিঙ্গাদের জন্যও সাহায্য বন্ধ করে দিলে এই ব্যয়ভার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপর গিয়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা ছিল।
সুইজ়ারল্যান্ডের ডাভোসে ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’-এর পার্শ্ববৈঠকেও রোহিঙ্গা-সঙ্কট নিয়ে আলোচনা সেরেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। ইউনূসের প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগিতা চেয়েছেন। এ বছরের সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনও আয়োজন করতে চায় বাংলাদেশ। শফিকুল জানান, রাষ্ট্রপুঞ্জের সহযোগিতায় এই সম্মেলন আয়োজিত হবে এবং বিশ্বের ১৭০টি দেশ তাতে যোগ দিতে পারে।