বলি অভিনেতা সইফ আলি খানের উপর দুষ্কৃতী হামলার পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা দিন। ধরা পড়েছেন এক অভিযুক্ত। ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় বলিপাড়া। ১৬ জানুয়ারি মুম্বইয়ের বান্দ্রার আবাসনে সইফের উপর দুষ্কৃতী হামলা হয়। সঙ্গে সঙ্গে মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। পাঁচ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে অভিনেতার নিরাপত্তার দায়ভার দেওয়া হয় ছোট পর্দার এক অভিনেতাকে।
নব্বইয়ের দশক থেকে হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয়ের মাধ্যমে কাজ শুরু করেন রণিত রায়। হিন্দি, বাংলা, তামিল এবং তেলুগু ছবির পাশাপাশি হিন্দি ধারাবাহিকে কাজ করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু তাঁর কেরিয়ারের রেখচিত্র হঠাৎ নিম্নমুখী হয়ে যায়। হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে বলিপাড়ার বহু তারকার সঙ্গে রণিতের ভাল পরিচিতি গড়ে উঠেছিল।
বড় পর্দায় ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি টেলিভিশনের পর্দায় অভিনয় করা শুরু করেন রণিত। টেলিপাড়া সূত্রে খবর, হিন্দি ধারাবাহিকে পর্ব প্রতি অভিনয় করতে সওয়া লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক আদায় করেন রণিত।
রণিত এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘আমি জীবনে চটজলদি সাফল্য পেতে চাইতাম। বড় বড় গাড়ি কিনতে চাইতাম। মেয়েরা আমার নাম ধরে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করুক, এই ছিল আমার স্বপ্ন। পাঁচ থেকে ছ’বছর আমি কোনও কাজ পাইনি। তখন বুঝেছিলাম যে ভাল অভিনেতা হওয়ার সঙ্গে জনপ্রিয়তার কোনও সম্পর্ক নেই।’’
রণিত এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, রোজগারের জন্য অভিনয়ের পাশাপাশি অন্য পথের সন্ধান করছিলেন তিনি। ২০০০ সালে নিরাপত্তা সংস্থা খুলেছিলেন তিনি। রণিতের পরিচিতিই তাঁর নতুন ব্যবসায় সাহায্য করেছিল।
প্রথমে পরিচিত অভিনেতাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছিলেন অভিনেতা। তাঁর সংস্থার তরফে সেই তারকাদের নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা করে দিতেন রণিত। তারকাদের সেই তালিকায় রয়েছে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান থেকে প্রীতি জ়িন্টা, সলমন খান, অক্ষয় কুমারের মতো বলি তারকাদের নাম।
রণিত জানিয়েছিলেন যে, বলিপাড়ার অন্য এক খানের নিরাপত্তার দায়িত্বও ছিল তাঁর উপর। আমির খানের নিরাপত্তারক্ষার দায়ভার ছিল রণিতের। রণিত জানিয়েছিলেন, যে সময় আমিরের সঙ্গে কাজ করেছিলেন, সেই সময়টুকু দারুণ কেটেছিল তাঁর। টানা দু’বছর আমিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন রণিত।
রণিতের কথায়, ‘‘আমিরের নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে কাজ করা আমার সৌভাগ্য। তখন হাতে কাজ ছিল না বলে আমি ব্যবসা শুরু করেছিলাম। কিন্তু দু’বছর আমিরের নিরাপত্তারক্ষী হয়ে কাজ করার ফলে আমি ওঁকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি।’’
ধীরে ধীরে নিজের ব্যবসা থেকে লাভ করতে শুরু করেন রণিত। শুধুমাত্র বলি তারকাই নয়, আইপিএলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ললিত মোদী এবং তাঁর পুত্র রুচির মোদীর নিরাপত্তার দায়িত্বেও ছিল রণিতের সংস্থা।
বলিউডি ছবির শুটিংয়ের সময় সেটে নিরাপত্তার দায়িত্বেও থাকে রণিতের সংস্থা। ‘লগান’, ‘দিল চাহতা হ্যায়’, ‘ইয়াদেঁ’, ‘না তুম জানো না হম’, ‘সাথিয়াঁ’ এবং ‘আরমান’ ছবির সেটে নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন রণিত।
তবে কোভিড সংক্রমণ যখন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছিল, সেই সময় অতিমারির কারণে রণিতের ব্যবসায় ভরাডুবি হয়। বলিপাড়ার কোনও তারকাই বিপদের সময় তাঁর পাশে দাঁড়াননি। রণিত এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, বলিপাড়ার যে তারকারা তাঁর সঙ্গে কাজ করছিলেন, তাঁরা সকলেই কোভিডের সময় সরে যান।
শুধুমাত্র অমিতাভ বচ্চন এবং অক্ষয় কুমার সব সময় রণিতের পাশে ছিলেন বলে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন অভিনেতা। রণিতের দাবি, অমিতাভ এবং অক্ষয়কে তিনি পরিষেবা দিতে না পারলেও প্রতি মাসে তাঁরা দু’জন পারিশ্রমিক দিয়েছিলেন।
রণিত বলেছিলেন, ‘‘আমার সংস্থায় যত জন কাজ করতেন, তাঁদের কারও স্ত্রী ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা, কারও মায়ের শারীরিক অবস্থা ভাল ছিল না। সকলের সংসার চালানোর জন্য টাকা চাই। আমাদের হাতে কোনও কাজ ছিল না। তবুও কাউকে সংস্থা থেকে বার করে দিইনি। তাঁদের নিয়মিত বেতন দিয়ে গিয়েছি।’’
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেই বলি তারকারা আবার নিজেদের প্রয়োজনে ফিরে গিয়েছিলেন রণিতের কাছে। কিন্তু রণিতের দাবি, তারকারা ফিরে এলেও তাঁদের সঙ্গে আর কাজ করতে রাজি হননি তিনি।
বর্তমানে সইফের নিরাপত্তার দায়িত্ব পেয়েছেন রণিত। মুম্বইয়ের লীলাবতী হাসপাতাল থেকে সইফ ছাড়া পাওয়ার পর তাঁর বাড়িতে নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীদের নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন রণিত।
সইফের বাড়িতে প্রবেশের আগেই লোহার জাল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় সেই আবাসনের ১০,১১,১২ তলা। তার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় লাগানো হয় সিসিটিভি। রণিতের সংস্থার তরফে সইফের নিরাপত্তার জন্য বাড়িতে রাখা হয়েছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী।
২০০২ সাল থেকে ‘কসৌটি জিন্দেগি কে’, ‘কিঁউ কি সাস ভি কভি বহু থি’র মতো হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করে সাফল্যের সিঁড়িতে চড়তে শুরু করেন রণিত। বর্তমানে হিন্দি ছবি, ধারাবাহিক এবং ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেন তিনি। ২০২৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বড়ে মিঞাঁ ছোটে মিঞাঁ’ ছবিতে শেষ অভিনয় দেখা গিয়েছে রণিতের।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, রণিতের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৯৯ কোটি টাকা। তাঁর অধিকাংশ আয় হয় নিরাপত্তা সংস্থা থেকে। বলি তারকাদের নিরাপত্তার পাশাপাশি তাঁর সংস্থার তরফে কোনও আবাসন, হাসপাতাল, বাণিজ্যিক প্রকল্প এবং অনুষ্ঠানেও নিরাপত্তা দেওয়া হয়।
সব ছবি: সংগৃহীত।