পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা ইংরেজি হরফের বিশালাকার ‘বি’। কোথা থেকে এল? কে লিখল? বিস্তর দ্বন্দ্ব। ভিন্ন ভিন্ন মত চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে।
এই ‘বি’ লেখা বারব্যাঙ্কের একটি পাহাড়ের গায়ে। ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলসের সান ফারনান্ডো উপত্যকার শহর বারব্যাঙ্ক। ওয়াল্ট ডিজ়নি স্টুডিয়ো, ওয়ার্নার ব্রাদার্স স্টুডিয়োর জন্য এই শহর জনপ্রিয়।
বারব্যাঙ্ক শহরকে ছবিতে দেখলে পঞ্চাশের দশকের ছবির কল্পবিজ্ঞানের শহর বলে মনে হতেই পারে। তবে ছবির মতো সেই শহরে লুকিয়ে রয়েছে রহস্যও। আর সেই রহস্য বারব্যাঙ্কের পাহাড়ে থাকা সাদা রঙের বড় একটি ইংরেজি ‘বি’ বর্ণটি নিয়ে।
‘বি’ বর্ণের সেই কাঠামোটি রয়েছে ভার্ডুগো পাহাড়ের উপরে। সেই কাঠামো এতটাই নিখুঁত যে, দেখেই মনে হবে তা মানুষের হাতে তৈরি। কিন্তু কে সেটি তৈরি করেছেন? এর অর্থ কী? এবং এটি কবে থেকে সেই শহরে রয়েছে? সেই সব প্রশ্নের উত্তর কিন্তু অধরা।
হলিউড থেকে মাত্র কয়েক কিমি দূরে অবস্থিত বারব্যাঙ্ক শহরে প্রচুর বিনোদনমূলক সংবাদমাধ্যমের ঘাঁটি। আর সে কারণে একে ‘বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের রাজধানী’ও বলা হয়।
শহরটির নামকরণ করা হয় ডেভিড বারব্যাঙ্ক নামে এক দন্ত চিকিৎসকের নামানুসারে। ওই চিকিৎসক ছিলেন নিউ হ্যাম্পশায়ারের বাসিন্দা।
ডেভিড ১৮৬৭ সালে কিছু বেশি জমি কিনে ভেড়ার খামার তৈরি করেছিলেন এই অঞ্চলে। সেখানে তিনি গম চাষও শুরু করেছিলেন।
কয়েক বছরের মধ্যেই লস অ্যাঞ্জেলসের অন্যতম গম উৎপাদক অঞ্চলে পরিণত হয় বারব্যাঙ্ক। বারব্যাঙ্ক শহর তৈরির জন্য দন্ত চিকিৎসক ডেভিডের অনেক অবদান। তবে ডেভিড কিন্তু বারব্যাঙ্কের ‘বি’ তৈরি করে যাননি।
বারব্যাঙ্কের ‘বি’ নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। ২০০৮ সালের ফিল্ম ‘বারব্যাঙ্ক হাই স্কুল: দ্য ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট ওয়েভ’ অনুযায়ী, ১৯২০ সালে প্রথম ‘বি’ বর্ণ তৈরি হয়। বারব্যাঙ্ক হাই স্কুল ক্লাবের সদস্যেরা পাহাড়ের গায়ে পাথর দিয়ে ‘বি’ তৈরি করেন। কারণ, বারব্যাঙ্ক শব্দটির ইংরেজির প্রথম বর্ণই এই ‘বি’।
তবে অন্য একটি স্কুল জন বারোঘোস হাই আবার সেই তত্ত্ব মানতে নারাজ। বারব্যাঙ্কের এই দুই স্কুলের মধ্যে বরাবরই ‘বি’ নিয়ে ‘যুদ্ধ’ চলে আসছে। প্রতি বছরই বর্ণটির উপর নিজেদের স্বত্ব জাহির করার জন্য রং করে তারা। যে যার নিজেদের স্কুলের রঙে রাঙিয়ে তোলে ইংরেজি বর্ণটি।
অনেকে স্কুলপড়ুয়াদের সেই ‘বি’ তৈরির তত্ত্বে বিশ্বাসও করেন। কারণ, বিশের দশকে পাহাড়ের গায়ে ইংরেজি বর্ণ দিয়ে অর্থপূর্ণ শব্দের কাঠামো তৈরি দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় খুবই প্রচলিত ছিল। সে সময় প্রচুর স্কুল-কলেজে পড়ুয়াদের দিয়ে পাহাড়ের গায়ে নানা কিছু লেখানোর চল ছিল।
এ ছাড়াও বিমানচালকেরা যাতে ছোট আঞ্চলিক ‘এয়ারফিল্ড’ খুঁজে পেতে পারেন, সে জন্যও পাহাড়ের গায়ে বিশেষ নকশা বা ইংরেজি বর্ণমালার কোনও বর্ণ থেকে শুরু করে বিখ্যাত বাক্যাংশ লিখে রাখার চল ছিল। যেমন বিচউড ক্যানিয়নে ‘হলিউডল্যান্ড’ শব্দটি।
রহস্যজনক এই ‘বি’-এর একাধিক বার সংস্কার হয়েছে। বি-এর উপরে এখন রং করা পাথর নেই। পাথরের পরিবর্তে প্লাস্টিকের পরত পড়েছে।
২০১৪ সালে লা কানাডা ফ্লিনট্রিজের সেন্ট ফ্রান্সিস হাই স্কুলের এক ছাত্র ওই কাঠামো এবং আশপাশের এলাকা পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেন। তার জন্য টাকাও সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।
‘বি’ নিয়ে তর্কবিতর্ক, দখলদারি এখনও চলছে। যদিও এ নিয়ে মাথা ঘামায় না বারব্যাঙ্কের প্রশাসন। প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশের মতে, দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকেরা ‘বি’ দেখতে আসেন। সেটি বারব্যাঙ্কবাসীর গর্ব। তাই কাঠামোটির উৎপত্তি সম্বন্ধে বিশেষ মাথাব্যথার কোনও কারণ নেই।
‘বি’-এর উৎপত্তি নিয়ে এখন মাথা ঘামান না পর্যটকেরাও। বরং পাহাড়ের গায়ে মানবসৃষ্ট এই শিল্প চাক্ষুষ করতে প্রতি বছর বহু মানুষ ভিড় জমান ওই শহরে, ট্রেকিং করে পৌঁছন ‘বি’-র কাছে।
সব ছবি: সংগৃহীত।