ইলন মাস্ক। চিপ বসানো মস্তিষ্কের কাল্পনিক ছবি। ছবি: সংগৃহীত।
স্মার্টফোন ছাড়া জীবনটাই যেন অচল! ফোন ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারবেন? উত্তরটা না-ই হবে বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই। মুঠোফোন মুঠোবন্দি করেই বাঁচছে অধিকাংশ মানুষ।
ফোন হারিয়ে গেলে বা বিকল হয়ে গেলে এমন বুকফাটা আর্তনাদ করেন প্রায় সবাই যে, মনে হবে জীবনটাই বুঝি শেষ হয়ে গেল। ডিজিটাল দুনিয়াটাই স্মার্টফোন নির্ভর হয়ে পড়েছে।
হাতে হাতে মুঠোফোন। পথচারীরা এখন আর মাথা উঁচু করে হাঁটেন না। স্মার্টফোনে চোখ রেখে সকলেরই মাথা হেঁট। এমন ফোন-নির্ভর সময়ে এসে কেউ যদি বলেন, স্মার্টফোন ব্যবহারের দিন শেষ হয়ে এল, তা হলে কেমন হবে?
এক্স প্ল্যাটফর্মে এমনই একটি ‘পোস্ট’ ভাইরাল হয়েছে। নট ইলন মাস্ক নামক এক ব্যক্তি এক্স প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করেন যে, স্মার্টফোনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চলে আসছে নিউরালিঙ্ক। সেই ‘পোস্ট’টি শেয়ার করে ইলন মাস্ক লেখেন, ভবিষ্যতে কোনও ফোনই থাকবে না! শুধু নিউরালিঙ্কই থাকবে। শুধু ভাবনা দিয়েই বহু দূরের মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাবে।
ইলন মাস্ককে খামখেয়ালি বলেই মনে করেন অনেকে। টেসলা কর্তা আগেও এমন অনেক অবাস্তব কথাবার্তা বলেছিলেন। তবে নিউরালিঙ্ক নিয়ে তিনি বেশ আশাবাদী। মাস তিনেক আগে ইলন মাস্কের সংস্থা দাবি করেছিল, তাদের তৈরি ব্রেন-চিপ নিউরালিঙ্ক বসিয়ে পক্ষাঘাতে পঙ্গু এক সেনার শরীরে সাড়া জাগানো গিয়েছে। নিউরালিঙ্কের ব্রেন-চিপ মস্তিষ্কে বসানোর পরেই নাকি রোগী ভাবনাচিন্তা করতে পারছেন, মাথা খাটিয়ে কম্পিউটারে দাবাও খেলছেন।
কী এই নিউরালিঙ্ক?
মস্তিষ্ক বা স্নায়ুতন্ত্রকে কোনও যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত করা। ইলন মাস্কের দাবি, ছোট্ট একটি চিপ মস্তিষ্কে বসিয়ে দিলেই সেটি মানুষের ভাবনা এবং ডিজিটাল দুনিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করবে। মস্তিষ্ক যেমন সঙ্কেত পাঠিয়ে আমাদের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে, ঠিক তেমনই এই চিপ মস্তিষ্কের সঙ্কেত ডিজিটাল ক্ষেত্রে পাঠাতে সাহায্য করবে। ‘নিউরালিঙ্ক ইন্টারফেস’ বলে এমন একটি প্রযুক্তির উল্লেখ করেছেন তিনি, যার দ্বারা মানুষ ভাবনাচিন্তা দিয়েই নাকি সব কিছু করতে পারবে। ফোন যে কাজটা করে, তা মানুষ মস্তিষ্কে বসানো যন্ত্র দিয়েই করতে পারবে। ভাবনা দিয়েই স্মার্টফোন, ট্যাব এবং কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। সম্পূর্ণ ওয়্যারলেস উপায়ে ডেটা সরবরাহ করা হবে। ঠিক যেমন ওয়্যারলেস ইয়ারফোনে গান শোনা হয়। ভবিষ্যতে এমনই প্রযুক্তি নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর।
মাস্কের আরও দাবি, এই নতুন প্রযুক্তি দিয়ে মস্তিষ্কের দুরারোগ্য ব্যধিও সারানো যাবে। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশকে উদ্দীপ্ত করে স্ট্রোক, পক্ষাঘাত, পার্কিনসন্স, অ্যালঝাইমার্স, অবসাদ ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা সম্ভব হবে। এ সব সত্যিই কতটা সম্ভব, সেটি এই মুহূর্তে বলা যাবে না। বিজ্ঞানীদের কারও মতে, মস্তিষ্কের সব রহস্য সমাধান না করলে এমন প্রযুক্তি আনা সম্ভবই হবে না। আর মানবমস্তিষ্কের জন্য এই প্রযুক্তি কতটা নিরাপদ, সে প্রশ্নও থেকে যাবে।
ইলন মাস্কের এই প্রস্তাবে কেউ খুশি, তো কেউ হাসিঠাট্টা করেছেন। তার সঙ্গে অনেকেই বলেছেন, মাথায় অপারেশন করে ব্রেন-চিপ বসানোর চেয়ে মুঠোফোন ব্যবহার করা অনেক বেশি নিরাপদ।