বিদ্যুতের বিল দিতেই হয় না বৃদ্ধকে। ছবি: সংগৃহীত।
জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়ে চলেছে, তাতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যবিত্তকে। প্রত্যেক মাসে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সংসারের খরচ। যতই ভাবুন বিভিন্ন খাতে খরচ কমিয়ে আনবেন, কিন্তু সে সব ভাবনা ঠিকমতো বাস্তবায়িত হচ্ছে কই!
বাজারে আনাজপাতির দামে আগুন, এই গরমে বিদ্যুতের বিলও আসছে চড়া। সব মিলিয়ে নাস্তানাবুদ দশা। একটি খাতে খরচ কমালেও অন্য খাতে আবার বেড়ে চলেছে। ফলে যা রোজগার হচ্ছে, তা থেকে কিছুই আর জমছে না। আর যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁদের তো করুণ দশা। সঞ্চয়ের বেশির ভাগটাই যে খরচ হয়ে যাচ্ছে!
এমন অগ্নিমূল্যের বাজারে খরচাপাতি নিয়ে কিন্তু তেমন ভাবে ভাবতে হচ্ছে না বছর বাহাত্তরের এক বৃদ্ধকে। অবসরের পরে দিব্যি নামমাত্র খরচে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। আর অবাক করা ব্যাপার হল, এক টাকাও বিদ্যুতের বিল দিতে হয় না তাঁকে।
ভাবছেন তো, সবটাই গল্প! একেবারেই তা নয়। তামিলনাড়ুর বাসিন্দা এন রামাকৃষ্ণান এমন অভিনব সব পন্থা বার করেছেন, যা দিয়ে তাঁর জীবনধারাই বদলে গিয়েছে। বাজারে চড়া দামে সব্জি, শাকপাতা তাঁকে আর কিনতে হয় না। কারণ বাড়ির ছাদেই সব্জি, ফলমূল ফলাচ্ছেন তিনি। বিশাল বাগানে সব্জি, শাকপাতা সবই ফলছে।
১৫০ রকম গাছপালা রয়েছে তাঁর বাড়ির বাগানে। পেঁপে, টম্যাটো, গাজর, বিন্স, মুলো, বেগুন, লাউ, পালং শাক থেকে আম, পেয়ারা, বেদানা-সহ বিভিন্ন রকম ফলের গাছও রয়েছে। বাড়ির লোকজন খেয়েও সব্জি, ফল বেঁচে যায়। উদ্বৃত্ত সব্জি, ফল অভাবীদের মধ্যে বিলিয়ে দেন তিনি।
এ দিকে, জলের অপচয় বন্ধ করার জন্য বৃষ্টির জলও সংরক্ষণ করেন মানুষটি। তার জন্যও বাড়িতে রয়েছে সাড়ে সাতশো লিটারের বিশাল ট্যাঙ্ক। তিনি জানিয়েছেন, এই জলে ঘর পরিষ্কার, কাপড় কাচা ইত্যাদি হয়। রান্নার কাজেও লাগে। ধরে রাখা বৃষ্টির জল দিয়েই বাগানে গাছপালার পরিচর্যা করা হয়। ট্যাঙ্ক খালি হলে বছরে এক বার ব্লিচিং দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। বৃষ্টি হলে ছাদের পাইপ দিয়ে তা সরাসরি ট্যাঙ্কে ঢোকে। এতে জলের বাড়তি খরচ যেমন বন্ধ হয়েছে, তেমনই বাড়িতে জলের চাহিদাও মিটে যাচ্ছে। সেখানেও খরচ প্রায় শূন্য।
এবার আসা যাক বিদ্যুতের বিলের কথায়। এ বারে যা গরম পড়েছে এবং যে হারে তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে, তাতে শুধু পাখাতে কুলোচ্ছে না। এসি, কুলার চালাতে হচ্ছে দিবারাত্র। আর বিদ্যুতের বিলও বাড়ছে চড়চড়িয়ে।
মাসের শেষে মাথায় হাত পড়ছে মধ্যবিত্তের। কিন্তু রামাকৃষ্ণানের চিন্তা নেই। তিনি জানাচ্ছেন, একটা সময়ে বিদ্যুতের খরচ নিয়ে তাঁকেও ভাবতে হত। বড় যৌথ পরিবারে বিদ্যুতের বিল কম আসত না। কিন্তু তাঁর পরেই সৌরবিদ্যুতের কথা ভাবেন তিনি। এখন তো সরকার বিদ্যুতের খরচ কমানোর জন্য বাড়ির ছাদেই সৌর প্যানেল বসানোর ব্যাপারে উৎসাহ দিচ্ছেন। বড় বাড়ি, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি অফিস-সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে সৌর প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্রমশ সারা দেশেই জনপ্রিয় হচ্ছে। এতে বিদ্যুতের খরচে বিস্তর সাশ্রয় হচ্ছে। রামাকৃষ্ণানও সেই পন্থাই নিয়েছেন। তাঁর বাড়ির ছাদ জুড়ে রয়েছে ৮০০ ওয়াটের সোলার প্যানেল। গোটা পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে যা যথেষ্ট। কাজেই মাসের শেষে এক টাকাও বিদ্যুতের বিল দিতে হয় না তাঁকে।
জৈব সার তৈরিতেও মন দিয়েছেন বৃদ্ধ। রান্নাঘর ও বাগানের বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে মাসে ১৫ কিলোগ্রামের মতো জৈব সার তৈরি করেন তিনি। নিজের চাহিদা মিটিয়েও সেই সার বাইরে বিক্রিও করেন। তাতেও লাভ হয়। বৃদ্ধের পরামর্শ, নিজের বাড়িতেই জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে স্বাস্থ্যকর আনাজ ও ফল খাওয়া সম্ভব। বাজার থেকে চড়া দামে সব্জি কিনতে হবে না। রাসায়নিক মিশ্রিত কীটনাশকও পেটে ঢোকার ভয় থাকবে না। যাঁরা অবসর নিয়েছেন, যাঁদের অফুরন্ত সময়, তাঁরা চাইলে, এই কাজের মধ্যে দিয়ে সেই সময়ের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে পারবেন।