প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। —ফাইল চিত্র।
টানা ১০ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার চলেছে। সবে জ্ঞান ফিরেছে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের। কিন্তু চোখ মেলে তাঁর প্রথম প্রশ্ন কী? নিজের শারীরিক অবস্থা, অসুস্থতা বা অস্ত্রোপচার সম্বন্ধে কিছু জানতেই চাননি তিনি। তাঁর প্রথম প্রশ্ন ছিল দেশ নিয়ে, কাশ্মীর নিয়ে। মনমোহন চোখ মেলে চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘আমার দেশ কেমন আছে? কাশ্মীর কেমন আছে?’’ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুর পর সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ করলেন সিনিয়র কার্ডিয়াক সার্জন রমাকান্ত পাণ্ডা। এনডিটিভিকে তিনি সে দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন।
২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মনমোহন। তাঁর বাইপাস সার্জারি হয়েছিল দিল্লি এমস হাসপাতালে। রমাকান্ত জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর হার্টে জটিল অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। টানা ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার চলে। তাঁর কথায়, ‘‘অস্ত্রোপচার শেষ হলে রাতে আমরা ওঁর মুখ থেকে পাইপ খুলে নিয়েছিলাম, যাতে উনি কথা বলতে পারেন। তখন ওঁর প্রথম প্রশ্ন ছিল, আমার দেশ কেমন আছে? কাশ্মীর কেমন আছে?’’
প্রশ্ন শুনে অবাক হয়েছিলেন এমসের চিকিৎসকেরা। বিস্ময় গোপনও করেননি তাঁরা। জানতে চেয়েছিলেন, কেন নিজের শরীর, এত বড় অস্ত্রোপচারের খোঁজ না-নিয়ে তিনি দেশের খবর জানতে চাইছেন? এর উত্তরে মনমোহন জানিয়েছিলেন, চিকিৎসকদের উপর তাঁর ভরসা আছে। তাই নিজের শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি চিন্তিত ছিলেন না। বরং তাঁর চিন্তা ছিল দেশের অবস্থা নিয়ে। এই ধরনের অস্ত্রোপচারের পর সাধারণত যে কোনও রোগী বুকে ব্যথার কথা জানান। কিন্তু মনমোহন কোনও দিন কোনও বিষয়ে অভিযোগ করেননি, জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসক।
সে দিনের স্মৃতিচারণ করে রমাকান্ত বলেন, ‘‘মনমোহন এক জন অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন। সত্যিকারের দেশভক্ত ছিলেন। ডাক্তার হিসাবে আমার কাছে উনি ছিলেন এক জন আদর্শ রোগী।’’
৯২ বছর বয়সি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার দিল্লি এমসেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। রাত ৮টা নাগাদ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ৯টা ৫১ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়, জানিয়েছেন এমস কর্তৃপক্ষ। তাঁর মৃত্যুতে সাত দিনের জাতীয় শোকপালন করা হবে, ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। শনিবার মনমোহনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে কংগ্রেসের সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী— সকলেই শুক্রবার দিল্লিতে মনমোহনের বাসভবনে গিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন।