সব থেকে কম কেনেন, এমন ৫ শতাংশের খরচ গিয়েছে বেড়ে। —প্রতীকী চিত্র।
দীর্ঘ দিন ধরে চড়া মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার সাধারণ মানুষ। এ বার খোদ কেন্দ্রীয় সমীক্ষা জানাল, সাড়ে ১২ বছরে দেশের পরিবারগুলিতে প্রতি মাসে মাথা পিছু খরচ বেড়েছে আড়াই গুণেরও বেশি। গত এক বছরে গ্রাম এবং শহরের মধ্যে ক্রয়ক্ষমতার পার্থক্য আগের থেকে কমেছে। তবে রিপোর্টে আর্থিক ভাবে এগিয়ে থাকা শ্রেণির সঙ্গে নিচু তলার ফারাকও স্পষ্ট। অন্য দিকে, গ্রাম ও শহরে সব থেকে বেশি কেনাকাটা করা ৫ শতাংশ মানুষের খরচ কমেছে। অথচ সব থেকে কম কেনেন, এমন ৫ শতাংশের খরচ গিয়েছে বেড়ে।
সমীক্ষা বলছে, গ্রামাঞ্চলে আর্থিক ভাবে সবচেয়ে তলায় থাকা ৫% মানুষ মাসে খরচ করেন গড়ে মাত্র ১৬৭৭ টাকা। শহরেও তা ২৩৭৬ টাকা। গত সমীক্ষার তুলনায় তাঁদের খরচ বেড়েছে। অথচ সবচেয়ে উপরের ৫ শতাংশের খরচ কমে যেটা হয়েছে, তা তাঁদের তুলনায় অনেক বেশি— গ্রামে ১০,১৩৭ টাকা এবং শহরে ২০,৩১০ টাকা। গড়ে পরিবারের মাসিক খরচের মধ্যেও গ্রাম (৫৩%) ও শহরে (৬০%) খাবার বাদে অন্যান্য পণ্যে ব্যয় বেড়েছে। মূলত মাথাচাড়া দিয়েছে পরিবহণ, পোশাক, জুতো, বিনোদন এবং দীর্ঘমেয়াদি ভোগ্যপণ্যের খরচ। শহরে বাড়ি-গাড়ি ভাড়া, হোটেল থাকা দামি হয়েছে বেশি। খাবারের মধ্যে বেড়েছে পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাতগুলি। বিশেষজ্ঞদের দাবি, কোভিডে আয় কমায় চাহিদা ধাক্কা খেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আয়ের বেশির ভাগটা খেয়ে নিচ্ছে মূল্যবৃদ্ধি। ফলে খরচ বাড়ছে, কিন্তু আদতে কমছে ক্রয়ক্ষমতা। যে কারণে ঝিমোচ্ছে চাহিদা। চড়া বৈষম্য।
প্রথমে ২০২২-এর অগস্ট থেকে ২০২৩-এর জুলাই পর্যন্ত এই সমীক্ষা করেছিল পরিসংখ্যান মন্ত্রক। এই দফায় ২০২৩-এর অগস্ট থেকে গত জুলাই পর্যন্ত সমীক্ষা চলেছে গ্রাম ও শহরের ২,৬১,৯৫৩টি পরিবারে। রিপোর্ট বলছে, ২০১১-১২ সালে গ্রামীণ পরিবারে মাথাপিছু গড় খরচ ছিল ১৪৩০ টাকা। তা ২০২৩-এর অগস্ট থেকে গত জুলাই পর্যন্ত বেড়ে হয়েছে ৪১২২ টাকা। শহরে ২৬৩০ থেকে হয়েছে ৬৯৯৬ টাকা। আর ২০১১-১২ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে এখন গ্রাম এবং শহরে গড় খরচ যথাক্রমে ২০৭৯ এবং ৩৬২২ টাকা। বর্তমান দরে ২০২২-২৩ সালের তুলনায় দুই অঞ্চলে মাথাপিছু খরচ যথাক্রমে ৯% এবং ৮% বেড়েছে বলেও জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এর থেকেই স্পষ্ট দেশে কী হারে মাথা তুলেছে মূল্যবৃদ্ধি।
অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরীর মতে, এক শ্রেণির আয় তিন-চার গুণ বেড়েছে। তারা খরচ করছে। কিন্তু অধিকাংশেরই এক-দেড় গুণের বেশি বাড়েনি মনে হয়। পুরো ছবি বুঝতে গেলে সঠিক তথ্য জানা জরুরি। তার উপরে কর্মীদের ৮০% অসংগঠিত ক্ষেত্রের, যাঁদের স্থায়ী আয় নেই। মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে মহার্ঘ ভাতা বাড়ে না। ফলে মূল্যবৃদ্ধির কারণে খরচ বাড়লেও আয় সে ভাবে বেড়েছে কি না, প্রশ্ন থাকছে। সংগঠিত ক্ষেত্রেও আয় বৃদ্ধির মধ্যে অসাম্য আছে। প্রশ্ন বহাল খরচ অনুযায়ী আয় নিয়ে।