আদানিদের টাকায় কেনা পুরস্কার গ্রহণ করবেন না বলে আয়োজকদের জানিয়ে দেন সুকিরথারানি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
পুরস্কারের সঙ্গে যুক্ত ‘বিতর্কিত’ আদানি শিল্পগোষ্ঠীর নাম। তাই পুরস্কার না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তামিলনাড়ুর এক দলিত মহিলা কবি। একটি ইংরেজি সংবাদপত্র সম্প্রতি একটি পুরস্কারপ্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বারো জন কৃতী মহিলাকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন দলিত সাহিত্য নিয়ে দীর্ঘ দিন কাজ করা তামিল কবি সুকিরথারানিও। পুরস্কার গ্রহণের বিষয়ে আয়োজকদের প্রাথমিক ভাবে সম্মতিও জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি তিনি জানতে পারেন এই পুরস্কারটি আদানি গোষ্ঠী ‘স্পনসর’ করছে। তারপরই ‘আদানিদের টাকায় কেনা পুরস্কার’ গ্রহণ করবেন না বলে আয়োজকদের জানিয়ে দেন সুকিরথারানি।
নিজের এই সিদ্ধান্তের সমর্থনে তিনি বলেন, “আমি যে দর্শনে বিশ্বাস করি এবং যে দর্শন জীবনে মেনে চলি, এই পুরস্কার নিলে তারই বিরুদ্ধাচরণ করা হবে।” গত ৮ ফেব্রুয়ারি তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইয়ের একটি হোটেলে প্রাপকদের হাতে এই পুরস্কারও তুলে দেওয়া হয়। তাঁকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন সুকিরথারানি। একই সঙ্গে একটি সংবাদ সংস্থাকে তিনি জানিয়েছেন, অনেক পরে তিনি জেনেছিলেন যে ‘দেবী’ নামক এই পুরস্কারটির স্পনসর আদানি। খবর পাওয়ামাত্রই তিনি পুরস্কার নেওয়ায় তাঁর অপারগতার কথা জানিয়ে দেন। এ বিষয়ে নিজের অবস্থান জানিয়ে তামিল ভাষায় একটি ফেসবুক পোস্টও করেন তিনি।
একটি ইংরেজি দৈনিককে সুকিরথারানি বলেন, “পুরস্কার নেওয়ার এক দিন আগেই আমি খবর পেলাম যে, এটির স্পনসর আদানি গোষ্ঠী। আদানি গোষ্ঠীর টাকায় কেনা পুরস্কার নিয়ে আমি খুশি হতে পারতাম না। আমি আমার লেখায় যে দর্শন, আদর্শ এবং রাজনীতির কথা বলি, তার সঙ্গে ওটা যায় না।” দলিত সাহিত্য এবং দলিতদের জীবনযাপন নিয়েও মুখ খুলেছেন তিনি। আর পাঁচ জন নারীর তুলনায় দলিত নারীদের জীবনসংগ্রাম যে আরও কঠিন, তা-ও নিজের লেখার বার বার ফুটিয়ে তুলেছেন। তাঁর কথায় উঠে এসেছে মহাশ্বেতা দেবীর লেখার প্রসঙ্গও।
নারীর শরীরের অধিকার এবং দলিতদের জীবনযন্ত্রণাকে একই চোখ দিয়ে দেখার কথা বলেন সুকিরথারানি। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি তামিলনাড়ুর একটি স্কুলেও পড়ান তিনি। আমেরিকান সংস্থা হিন্ডেনবার্গের আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ারে বাজারে কারচুপি সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করার পরই দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। গুজরাতি শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কী সম্পর্ক, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। এ নিয়ে তদন্তের দাবিতে সরগরম হয়েছে সংসদও। এই আবহে সুকিরথারানির এই পুরস্কার প্রত্যাখ্যানকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন অনেকে।