গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বারাণসীর জ্ঞানবাপী ‘ব্যাসজি কা তহখানা’য় পুজো, আরতি চালিয়ে যেতে পারবেন হিন্দুরা। সোমবার মুসলিম পক্ষের আর্জি খারিজ করে এমনটাই জানাল সুপ্রিম কোর্ট। এ বিষয়ে বারাণসী জেলা আদালতের ৩১ জানুয়ারির নির্দেশ এবং ইলাহাবাদ হাই কোর্টের ২৬ ফেব্রুয়ারির নির্দেশ বহাল রেখেছে শীর্ষ আদালত।
‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি’-র তরফে বারাণসী জেলা আদালত এবং ইলাহাবাদ হাই কোর্টের পূজা-আরতিতে ছাড়পত্র দেওয়ার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে যে আবেদন জানানো হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ তা মেনে স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেছে সোমবার।
সেই সঙ্গে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, আপাতত ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় থাকবে। অর্থাৎ, হিন্দুপক্ষের পুজো-আরতির পাশাপাশি, মুসলিমরাও জ্ঞানবাপীতে নমাজের আয়োজন করতে পারবেন। জ্ঞানবাপী সংক্রান্ত মূল মামলার নিষ্পত্তির সঙ্গেই এই বিবাদের নিরসনের কথাও বলা হয়েছে নির্দেশে। তবে সোমবারের নির্দেশের বিষয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির কর্তৃপক্ষের মত জানতে নোটিস পাঠিয়েছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি বারাণসী জেলা আদালত জ্ঞানবাপীর দক্ষিণ অংশের ‘ব্যাসজি কা তহখানা’য় আরতি ও পূজাপাঠের অনুমতি দিয়েছিল। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ইলাহাবাদ হাই কোর্ট মুসলিম পক্ষের আবেদন খারিজ করে বারাণসী জেলা বিচারক অজয়কুমার বিশ্বেসের নির্দেশ বহাল রেখেছিল। গত ১৮ ডিসেম্বর বারাণসী জেলা আদালতে পেশ করা ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআই)-এর রিপোর্টে বলা হয়েছিল, জ্ঞানবাপীর কাঠামোর নীচে ‘বড় হিন্দু মন্দিরের অস্তিত্ব’ ছিল। তার পরেই ওই নির্দেশ দিয়েছিলেন বারাণসী জেলা আদালতের বিচারক বিশ্বেস।
মসজিদ চত্বরের দক্ষিণ অংশের ‘ব্যাসজি কা তহখানা’-য় আরতি এবং পুজোয় আপত্তি জানিয়ে মসজিদ কমিটির তরফে হাই কোর্টে বলা হয়, ১৯৩৭ সালে জ্ঞানবাপী সংক্রান্ত বিবাদের রায় মুসলিমদের পক্ষেই গিয়েছিল, তাই এএসআই-কে দিয়ে নতুন করে সমীক্ষা করানো যায় না। ২০২২ সালে বারাণসী আদালতের নির্দেশে করা ‘অ্যাডভোকেট কমিশনার’-এর রিপোর্টকেও বারাণসী জেলা আদালতের নির্দেশে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে মুসলিম পক্ষের তরফে দাবি করা হয়। সেই সঙ্গে আবেদনে বলা হয়েছিল, বারাণসী আদালতের নির্দেশ ১৯৯১-এর ‘ধর্মীয় উপাসনাস্থল রক্ষা আইন’ বা ‘প্লেসেস অব ওরশিপ (স্পেশাল প্রভিশন) অ্যাক্ট’-এর পরিপন্থী।
কিন্তু জ্ঞানবাপী কমিটির যুক্তি খারিজ করে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি রোহিতরঞ্জন আগরওয়ালের একক বেঞ্চ জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বরের দক্ষিণ দিকে ‘ব্যাসজি কা তহখানা’য় হিন্দুদের পুজো, আরতি চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের অগস্টে পাঁচ হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপীর ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’ (ওজুখানা ও তহখানা) এবং মসজিদের অন্দরের পশ্চিমের দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তির অস্তিত্বের দাবি করে তা পূজার্চনার অনুমতি চেয়ে যে মামলা দায়ের করেছিলেন। সেটিই মূল মামলা।
২০২১ সালের ওই মামলার প্রেক্ষিতেই ২০২২ সালের মে মাসে মসজিদের অন্দরের ভিডিয়ো সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বারাণসীর নিম্ন আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর। সেই সমীক্ষা এবং ভিডিয়োগ্রাফির কাজ শেষ হওয়ার পরে ২০২২ সালের ২০ মে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলার শুনানির দায়িত্ব পেয়েছিল বারাণসী জেলা আদালত। পরবর্তী সময় এএসআই সমীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিলেন জেলা আদালতের বিচারক বিশ্বেস।
আদালতের নির্দেশে হওয়া এএসআই সমীক্ষার ৮৩৯ পাতার রিপোর্টে বলা হয়েছিল, জ্ঞানবাপী চত্বরে পাওয়া একটি লিপিতে উল্লিখিত রয়েছে মুঘল সম্রাট অওরঙ্গজেব ১৬৬৯ সালের ২ নভেম্বর জ্ঞানবাপীতে মন্দির ভেঙে মসজিদ নির্মাণের ফরমান দিয়েছিলেন। রিপোর্টে লেখা হয়, ‘মসজিদ তৈরির সময় কিছু বদল আনা হয়েছিল কাঠামোয়। সামান্য বদল এনে মন্দিরের স্তম্ভ এবং অন্যান্য অংশ ব্যবহার করা হয়েছে। নতুন কাঠামো তৈরি করতে হিন্দু মন্দিরের পিলারের চরিত্রে সামান্য বদল আনা হয়েছিল’। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই গত ৩১ জানুয়ারি জ্ঞানবাপীতে পূজার্চনা এবং আরতির অনুমতি দিয়েছিল বারাণসী জেলা আদালত।