প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দলের তরফে লিখিত ভাবে আপত্তি জানানো হয়েছিল। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের একাংশ প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু যাবতীয় বিরোধিতা উড়িয়ে নদী সংযুক্তিকরণ প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘটনাচক্রে, প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনে, যাঁর আমলে নদী সংযুক্তিকরণের পরিকল্পনার খসড়া তৈরি হয়েছিল।
বুধবার মধ্যপ্রদেশে বিতর্কিত কেন্-বেতোয়া নদী সংযুক্তিকরণ প্রকল্পের শিলান্যাস করে অবশ্য প্রথমেই মোদী বললেন সংবিধান রচয়িতা বিআর অম্বেডকরের কথা, যাঁর সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করে বিরোধীদের নিশানা হয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দেশের জলসম্পদ শক্তিশালী করে তোলা অম্বেডকরের স্বপ্ন ছিল বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেস কখনওই জলসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দেয়নি।’’
প্রসঙ্গত ২০২২ সালের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছিলেন, পাঁচটি নদী সংযুক্তিকরণ প্রকল্প চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেছিলেন একমাত্র কেন্-বেতোয়া নদী প্রকল্পের কথা। সেই বাজেটে এই প্রকল্পের জন্য ৪৪ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। এর ফলে ৯ লক্ষ হেক্টরেরও বেশি জমিতে চাষের জল দেওয়া সম্ভব হবে। ৬৫ লক্ষ মানুষ সরাসরি এর ফলে উপকৃত হবেন বলে দাবি করেছিলেন নির্মলা। সে সময় তাঁর তীব্র বিরোধিতা করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ। একে ‘ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপ’ হিসাবে অভিহিত করেছিলেন তিনি।
কেন্দ্রের যুক্তি, কৃষিপ্রধান ভারতে জলের জন্য কৃষকেরা মূলত নির্ভরশীল বর্ষার জলের উপর। সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ দেশে বর্ষাকাল। কিন্তু গত দু’দশক ধরে সেই ধারাচক্রে কিছুটা বদল অনুভূত হচ্ছে। কৃষির পাশাপাশি টান পড়ছে পানীয় জল সরবরাহেও। সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বাজপেয়ীর আমলে নদী সংযুক্তিকরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। যাতে দেশ জুড়ে জলসম্পদের পর্যায়ক্রমিক সুষম বণ্টন সম্ভব হয়। মোদী বুধবার বলেন, ‘‘নদী সংযুক্তিকরণ প্রকল্প দেশের উন্নয়নের চেহারা বদলে দেবে। একবিংশ শতকে শুধু সেই দেশগুলিই উন্নতি করতে পারবে, যারা যথাযথ ভাবে জল সংরক্ষণের পরিকাঠামো তৈরি করতে পারবে।”
বুন্দেলখণ্ডের ঊষর, খরাপ্রবণ অঞ্চলগুলিতে কেন্-বেতোয়া নদী সংযুক্তিকরণ প্রকল্প কৃষি এবং পানীয় জল সরবরাহে জোয়ার আনবে বলে দাবি করেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা মোহন যাদব। প্রসঙ্গত, কেন্ এবং বেতোয়া দু’টিই আদতে যমুনার উপনদী। বৃষ্টির জলের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় গ্রীষ্মে প্রায় শুকিয়ে যায়। সারা বছর জল ধরে রাখতে এই প্রকল্পে কেন্ নদীর উপর প্রায় ৭৪ মিটার উঁচু বাঁধ তৈরি করার কথা। প্রকল্প রূপায়ণে আনুমানিক আট বছর সময় লাগবে। আনুমানিক খরচ প্রায় সাড়ে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। মোদীর দাবি, এই প্রকল্পে মধ্যপ্রদেশের ৪৪ লক্ষ এবং উত্তরপ্রদেশের ২১ লক্ষ মানুষ পানীয় জল পাবেন। দুই রাজ্যের ২০০০-এর বেশি গ্রামে ৭ লক্ষ ১৮ হাজার কৃষিজীবী পরিবার চাষের জল পাবেন।
এ ছাড়া, ১০৩ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ এবং ২৭ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎও এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও নদী সংযুক্তকরণের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের দাবি। খাজুরাহো লাগোয়া পান্না ব্যাঘ্রপ্রকল্পের অন্তর্গত অন্তত ৪০ শতাংশ বনাঞ্চল এর ফলে জলে তলিয়ে যাবে বলেও বিভিন্ন রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বিতর্কের জেরে ইউপিএ জমানায় হিমঘরে পাঠানো হয়েছিল কেন্-বেতোয়া প্রকল্প। ২০২১ সালে তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি লিখে কেন্-বেতোয়া প্রকল্প বন্ধ রাখার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু নির্মলার ২০২২ সালের বাজেট প্রস্তাবে তা-ই ফিরে আসে নতুন চেহারায়।