গাঁধী পরিবারকে নিয়ে অসন্তোষ বিরোধী শিবিরে! —ফাইল চিত্র।
গাঁধীদের ‘মুঠো’ থেকে বেরিয়ে না এলে না বাঁচবে কংগ্রেস, না মাথা তুলে দাঁড়াবে বিরোধী জোট। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহকে পর্যুদস্ত করতে যখন তৎপরতা তুঙ্গে, সেই সময় দিল্লিতে গাঁধী পরিবারকে নিয়ে একজোটে অসন্তোষ জানালেন বিরোধী শিবিরের নেতারা। সোমবার বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বলের আমন্ত্রণে একছাদের নীচে জড়ো হয়েছিলেন বিজেপি বিরোধী বহু নেতা। সেখানে কংগ্রেসকে বিরোধী জোটে আমন্ত্রণ জানালেও গাঁধীদের নেতৃত্ব থেকে দূরে রাখার বার্তা দিয়েছেন ছোট-বড় প্রায় সব দলের নেতারাই।
সম্প্রতি বিরোধী জোট নিয়ে দৌত্য করতে দিল্লি গিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে বার আলাদা করে সনিয়া গাঁধী এবং রাহুল গাঁধীর সঙ্গে বৈঠকও করেন তিনি। কিন্তু সোমবার জন্মদিন উপলক্ষে সিব্বলের ডাকা নৈশভোজে গাঁধী পরিবারের কারও দেখা মেলেনি। কংগ্রেসের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা হিসাবে পরিচিত সিব্বলের বাড়িতে বরং গাঁধী সমালোচকদের একটা বড় অংশ উপস্থিত ছিলেন। বিরোধী জোট নিয়ে আলোচনায় তাঁদের প্রায় সকলেই গাঁধীদের নেতৃত্ব থেকে দূরে রাখার পক্ষে সওয়াল করেন বলে দিল্লি সূত্রে খবর।
কৃষি আইন নিয়ে বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা অকালি দলের নরেশ গুজরালও সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দলের নেতা পিনাকি মিশ্র। মোদী সরকারের একাধিক নীতি নিয়ে সমালোচনা করলেও, বিরোধী জোটের মুখ হিসেবে গাঁধীদের তুলে ধরায় তাঁরা খোলাখুলি আপত্তি জানান বলে জানা গিয়েছে। একটি সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, নরেশ সাফ জানিয়ে দেন যে বিরোধী জোটের নেতৃত্ব নিয়ে পরেও ভাবা যেতে পারে। আগে কংগ্রেসকে গাঁধীদের ‘খপ্পর’ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লার বক্তব্য ছিল, কংগ্রেস মজবুত হলে তবেই বিরোধী জোটের হাত শক্ত হবে। কিন্তু দলের অন্দরেই যেখানে নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, সেখানে কংগ্রেসকে বিরোধী দলের মুখ হিসেবে তুলে ধরা যুক্তিসঙ্গত নয়।
উল্লেখ্য, যে সিব্বলের আমন্ত্রণে বিরোধী শিবিরের নেতারা সোমবার দিল্লিতে সমবেত হয়েছিলেন, সাম্প্রতিককালে গাঁধী পরিবারের অন্যতম সমালোচক হিসেবে উঠে এসেছেন তিনি। নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে যে ২৩ জন নেতা সনিয়া গাঁধীকে চিঠি দিয়েছিলেন, তাতে শামিল ছিলেন তিনিও। চিঠিতে স্বাক্ষর করা পি চিদম্বরম, শশী তারুর এবং আনন্দ শর্মাও বৈঠকে ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা লালুপ্রসাদ যাদব, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির নেতা শরদ পওয়ার, সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব, সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি, শিবসেনার সঞ্জয় রাউত, ডিএমকে-র তিরুচি শিবাও।
তৃণমূলের তরফে সোমবারের সমাবেশে হাজির ছিলেন ডেরেক ও’ব্রায়েন। এর আগে, মল্লিকার্জুল খড়্গের ডাকা বৈঠকে রাহুল থাকায় তৃণমূলের রাজ্যসভা এবং লোকসভার কোনও নেতা যাননি। তাই রাহুলকে নিয়ে তৃণমূলে খচখচানি রয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
অন্য দিকে, সিব্বলের ডাকা সমাবেশেও মমতাকে বিরোধী জোটের নেত্রী হিসেবে ডেরেক তুলে ধরেন বলে জানা গিয়েছে। ডেরেক জানান, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রশ্নে গোটা দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। তাঁকে সমস্ত রাষ্ট্রীয় শক্তি দিয়ে আক্রমণ করেছিল বিজেপি। তাঁকে সমর্থন করে ওমর জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-কে হারিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। কংগ্রেসও যদি দলকে শক্তিশালী করার জন্য সচেষ্ট হয়, তা হলে সব বিরোধী দলই লাভবান হবে।