বিএড ডিগ্রিধারী প্রাথমিক শিক্ষকদের এ বার ছ’মাসের প্রশিক্ষণ। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
দেশ জুড়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের এ বার ‘ব্রিজ কোর্স’ করানো হবে। প্রাথমিকে যে সকল শিক্ষক বিএড ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষকতা করছেন, মূলত তাঁদের প্রত্যেককে এই ছ’মাসের প্রশিক্ষণ বা ‘ব্রিজ কোর্স’ করানো হয়। দীর্ঘ দিন ধরে এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার দাবি উঠছিল। এ বার সে জন্য কমিটি গঠন করল ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন (এনসিটিই)। সুপ্রিম কোর্ট আগেই এই প্রশিক্ষণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশ মেনেই কমিটি গঠন করা হল।
এই ‘ব্রিজ কোর্স’-এ কী পাঠ্যক্রম হবে, তা স্থির করতেই ছয় সদস্যের কমিটি গড়েছে এনসিটিই। সেই কমিটিতে রয়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মণীশ ওয়াধওয়া, কল্যাণী আকালামকাম, হায়দরাবাদের মৌলানা আজ়াদ উর্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম ভানাজা, এনসিইআরটি-র ঊষা শর্মা, এনসিটিইর সিনিয়র অ্যাকাডেমিক কনসালট্যান্ট আশা সুন্দরম, অ্যাকাডেমিক কনসালট্যান্ট সোহিলা বক্সী। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই কমিটিকে কাজে সাহায্য করবে এনসিটিই। ৩০ দিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সমস্ত রাজ্যকে এনসিটিই-র এই নির্দেশে মান্যতা দিতে হবে বলেও জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। ৯ জানুয়ারি একটি মামলার শুনানিতে এনসিটিই সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল, শিক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠকের পরে তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকের পরেই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনসিটিই।
প্রাথমিকের শিক্ষক হতে গেলে ডিএড বা ডিএলএড কোর্স করতে হয়। আগের নিয়ম অনুযায়ী, বিএড প্রশিক্ষিতরাও প্রাথমিকের শিক্ষক পদে চাকরি পাবেন। তবে তাঁদের চাকরি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে একটি ছ’মাসের ‘ব্রিজ কোর্স’ করতে হয়। কারণ, বিএড প্রশিক্ষণ উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতার জন্য। দীর্ঘ দিন ধরে বিএড করে আসা প্রাথমিক শিক্ষকদের এই ‘ব্রিজ কোর্স’ করানোর দাবি উঠছিল। এ রাজ্যে তা বহু বছর বন্ধ ছিল বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে ২০২৩ সালে প্রাথমিকের একটি মামলার শুনানিতে কলকাতা হাই কোর্টে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। এ বার তা চালু করছে এনসিটিই। এই প্রশিক্ষণ নিলে শিক্ষকদের বেতনও বৃদ্ধি হয়। এই প্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক পৃথা বিশ্বাস বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার প্রাথমিক শিক্ষকদের এই কোর্স নিয়ে কোনও ভাবনাচিন্তা না করায় শিক্ষকেরা আর্থিক দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। এনসিটিই এই নিয়ম চালু করলে শিক্ষকেরা এই ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে উপকৃত হবেন।’’
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল জানিয়েছেন, এনসিটিই দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা শিক্ষকদের পেশাগত প্রশিক্ষণে কী কী বিষয় থাকা উচিত, তা নিয়ে নির্দেশ দেয়। এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বক্তব্য, প্রাথমিকে শিক্ষক হতে গেলে যে বিশেষ প্রশিক্ষণ থাকা জরুরি, তা নিয়ে আগে স্পষ্ট করে নির্দেশ দেওয়া হয়নি কেন? সব কিছুই কোর্টকে নির্ধারণ করে দিতে হচ্ছে কেন?’’ তাঁর আরও দাবি, এনসিটিইর প্রস্তাবিত ছয় মাসের ‘ব্রিজ কোর্স’ অনলাইনে করাতে হবে। নয়তো, শিক্ষকেরা প্রশিক্ষণ নিতে চলে গেলে পঠনপাঠনের অনেক দিন নষ্ট হবে।