‘মেট্রো ম্যান’ ই শ্রীধরণ। ছবি: সংগৃহীত।
বাম দুর্গে গেরুয়া পতাকা ওড়ানোই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যপূরণে মুখ্যমন্ত্রীর আসনেও বসতে রাজি ‘মেট্রো ম্যান’ শ্রীধরণ। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগদান পর্ব হবে আগামী সপ্তাহে। তবে তার আগে রাজনীতিতে পা রেখেই শুক্রবার এই ঘোষণা করলেন শ্রীধরণ। স্পষ্ট জানালেন, কেরলে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় এলে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসতে তৈরি তিনি। তবে দলকে জেতানোই এখন পাখির চোখ তাঁর।
৮৮ বছরের শ্রীধরণের হাত ধরেই দিল্লি তথা দেশের একাধিক মেট্রো প্রকল্প বাস্তবের মুখ দেখেছে। বৃহস্পতিবার সেই প্রযুক্তিবিদকেই নিজেদের দলে নেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছিল কেরল বিজেপি। শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের কাছে শ্রীধরণ জানিয়েছেন, দল চাইলে বিধানসভায় নির্বাচনে প্রার্থী হবেন তিনি। সেই সঙ্গে রাজনীতিতে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও খোলসা করেছেন শ্রীধরণ। কেরলের রাজ্যপালের পদে বসতে তিনি যে আগ্রহী নন, তা-ও সাফ জানিয়েছেন তিনি। তাঁর স্পষ্ট কথা, “রাজ্যপালের পদটি একেবারেই সাংবিধানিক পদ। ফলে কার্যত এই পদের কোনও ক্ষমতাই নেই।” সেই কারণে কেরলে ওই পদে থেকে রাজনৈতিক ভাবে কোনও তফাত গড়তে পারবেন না বলে মনে করেন শ্রীধরণ।
রাজ্যপালের পদ অনাগ্রহী হলেও মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে আপত্তি নেই শ্রীধরণের। দলকে জেতানোর পাশাপাশি কেরলের উন্নয়নমূলক পরিকাঠামোয় বড়সড় পরিবর্তনের লক্ষ্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, বিজেপি জিতলে কেরলকে ঋণের ফাঁস থেকেও মুক্ত করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শ্রীধরণ। তিনি বলেন, “কেরলে বিজেপি-কে ক্ষমতায় আনাই আমার প্রধান লক্ষ্য। এ রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে ৩-৪টি দিকে নজর দিতে চাই। তার মধ্যে একটি পরিকাঠামোয় উন্নয়ন ঘটানো এবং অন্যটি অবশ্যই রাজ্যে শিল্প টেনে আনা।”
কেরলের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতির দিকেও লক্ষ্য রয়েছে শ্রীধরণের। ঋণে জর্জরিত কেরলে অর্থ কমিশন গড়া যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি। শ্রীধরণের দাবি, “বর্তমানে ঋণে ডুবে রয়েছে কেরল। প্রতি নাগরিকের উপর ১.২ কোটি টাকা করে ঋণের খাঁড়া ঝুলছে। এর অর্থ হল, আমরা দেউলিয়া হওয়ার পথে এগোচ্ছি। অথচ রাজ্য সরকার এখনও ঋণ করে চলেছে। রাজ্যের অর্থ ব্যবস্থা ঠিকঠাক করতে হবে। তার জন্য আমাদের একটি সমাধানসূত্র খুঁজে বার করা উচিত।”
আগামী এপ্রিল-মে মাসে কেরলে বিধানসভা নির্বাচন হতে পারে। তার আগে দলে শ্রীধরণের যোগদানে কার্যত শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে কেরল বিজেপি-র। বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ) সরকারের বিরুদ্ধে তুরুপের তাস হতে পারেন শ্রীধরণ— এমনটাই মনে করছেন ওই রাজ্যের গেরুয়াা শিবিরের একাংশ। তবে কি মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসাবেই তাঁকে দেখা যাবে আসন্ন নির্বাচনে। এ নিয়ে বিজেপি-র তরফে কোনও মন্তব্য না করা হলেও শ্রীধরণের সাফ জবাব “বিজেপি চাইলে… অবশ্যই। সত্যি কথা বলতে কি, আমি মুখ্যমন্ত্রী না হলে এগুলি (উন্নয়নমূলক পরিকল্পনাগুলি) বাস্তবায়িত করা যাবে না।”
আগামী সপ্তাহের ২৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে শ্রীধরণের বিজেপি-তে যোগদান পর্ব মিটতে পারে। তবে তার আগেই নিজের রাজনৈতিক পরিকল্পনা জানিয়েছেন তিনি। পিনারাই বিজয়ন সরকার বাস্তবে রাজ্যের কোনও উন্নতি করতে পারেনি বলেই দাবি শ্রীধরণের। তাঁর কথায়, “বিজেপি-তে যোগদানের কারণ রয়েছে। এত দিন ক্ষমতাসীন থেকেও গত ২০ বছরে রাজ্যে কোনও শিল্প গড়তে পারেনি ইউডিএফ বা বামেরা। বরং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সব সময়ই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে রয়েছে রাজ্য সরকার। এতে কেরলে উন্নয়নের পথ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে অন্তত কেন্দ্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকবে। কেরলের উন্নয়নে সময় দিতেই রাজনীতিতে আসা। সম্ভবত এই কারণে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি।”