চন্দ্রমৌলির মৃত্যুতে শোকবিহ্বল রূপম। ছবি: সংগৃহীত।
দীর্ঘ ১৮ বছরের সম্পর্ক ‘ফসিল্স’ ব্যান্ডের সঙ্গে। এক দিন আলাদা হয়ে যায় পথ। তার পর ‘গোলক’, ‘জ়ম্বি কেজ কন্ট্রোল’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ‘ফসিল্স’ এর প্রাক্তন বেসিস্ট চন্দ্রমৌলি বিশ্বাস। রবিবার সন্ধ্যায় ৪৮ বছরের বাদ্যযন্ত্রশিল্পীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় তাঁর বাড়ি থেকে। রবিবার এক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মা। তখনই চরম পদক্ষেপ করেন শিল্পী। তাঁর বর্তমান ব্যান্ড ‘গোলক’-এক সদস্য মহুল চক্রবর্তী প্রথম ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্থানীয় থানায় খবর দেন। জীবনে এমন চরম পদক্ষেপ করার আগে নিজের সমাজমাধ্যমে ছবি পাল্টে ছিলেন চন্দ্রমৌলি। নতুন ছবি বদলে ‘ফসিল্স’-এ থাকার সময়কার ছবি দেন শিল্পী। চন্দ্রমৌলির এ ভাবে আত্মহননের পথ বেছে নেওয়ার পর থেকেই সমাজমাধ্যম জুড়ে তাঁকে নিয়ে লেখালিখি শুরু হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বক্তব্য উঠে এসেছে শিল্পীমহলে। তবে যার প্রতিক্রিয়ায় অপেক্ষায় ছিলেন অনেকে, তিনি রূপম ইসলাম। দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব। দরাজ হাসতে পারতেন চন্দ্রমৌলি। কথা ছিল আবার একসঙ্গে গান-বাজনা করবেন। চন্দ্রমৌলির উদ্দেশে শেষ কয়েকটি কথা প্রকাশ্যে আনলেন রূপম।
গায়ক জানান, চন্দ্রমৌলির সঙ্গে তাঁর নানা বিষয়ে কথা হত। কিছু গান নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করার কথা হয়েছিল। কিছুটা সময় চেয়েছিলেন চন্দ্রমৌলি। অপেক্ষা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন রূপমও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই গান অপ্রকাশিত রয়ে গেল। প্রাক্তন ব্যান্ড সদস্যের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ রূপম লেখেন, ‘‘আমাদের যখনই কথা হয়েছে সেটা দর্শন ও শিল্প নিয়ে। আমার তেমন কিছু গানই গচ্ছিত করে রেখেছিলাম তোর জন্য। সেগুলোর অন্যতম উদাহরণ হল ‘আদমের সন্তান’, ‘আমি তোমায় ভালবাসি’র মতো গান এ ছাড়াও বেশ কিছু গান রয়েছে। গত বছরও আমাদের কথা হয়েছে। যে গান গুলো নিয়ে আমরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে পারতাম। আমি জানতাম তুই সেই মানুষটা যে জ্যাজ় ও ধ্রুপদী ঘরনার সংমিশ্রণে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারবি। তুই বলেছিলি নিজেকে গোছানোর জন্য সময় নিচ্ছিস। আমি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে রাজিও ছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সেই অপেক্ষার কোনও অন্ত নেই।’’
রূপম জানান, চন্দ্রমৌলির হাসি ছিল হই হই করা। কখনও তিনি বই লিখবেন চন্দ্রের সঙ্গে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে। কিন্তু চন্দ্রমৌলির মৃত মুখটি দেখতে চান না। রূপমের কথায়, ‘‘আমি মৃতদেহের মুখে তোকে দেখব না। তোকে চিনব না এ ভাবে। আমি শুনেছিলাম তোর নতুন গানের কথা, আমরা আলোচনা করেছিলাম নতুন ধরনের শব্দের সম্ভবনা নিয়েও। মনে হয়েছিলে ফের যেন তুই স্বক্ষেত্রে ফিরে আসছিস।’’