বিজেপিকে সবচেয়ে বেশি অনুদান দেওয়া কোম্পানিতেই ২০১৯-এ হয় আয়কর হানা।
নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরই চর্চা শুরু হয়েছে ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্টাকচার লিমিটেড’ নামে এক কোম্পানিকে নিয়ে। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে এই কোম্পানির থেকেই সবচেয়ে বেশি টাকা পেয়েছে বিজেপি! ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনী বন্ডগুলি কিনেছিল ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং’। তবে ২০১৯ সালে এই কোম্পানিতেই হয়েছিল আয়কর হানা। সেই ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং’ কোম্পানির সঙ্গে এ বার নাম জড়িয়ে গেল আরও এক রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের। দিল্লি হাই কোর্টে এক মামলার শুনানিতে কিছু নথি দিয়ে আয়কর দফতর দাবি করেছে, ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং’ কোম্পানির সঙ্গে বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন হয়েছে কংগ্রেসের। সব টাকাই ‘বেহিসাবি’ বলেও দাবি করা হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই লেনদেন হয়েছে বলে আদালতে দাবি করে আয়কর দফতর।
দিল্লি আদালত তার আদেশে উল্লেখ করেছে, ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং’ গ্রুপ থেকে উদ্ধার হওয়া নথিগুলিতে ২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১ সাল পর্যন্ত রাজনৈতিক দলে বেহিসাবি লেনদেনের ইঙ্গিত দেয়। প্রায় ৫২০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। ২০১৯ সালে ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং’ এবং তার সহকারী সংস্থাতে আয়কর দফতর অভিযান চালিয়েছিল। তল্লাশি অভিযানের সময় এমন কিছু নথি আয়কর দফতরের হাতে এসেছে, সেখানেই লেনদেনের কথা উল্লেখ আছে বলে দাবি করা হয়েছে।
হাই কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, উদ্ধার হওয়া নথির তালিকায় একটি হাতে লেখা ডায়েরি ছিল। সেই ডায়েরির মালিক পিভি সুনীল নামে এক ব্যক্তি। সেখানেই তিনি লেনদেনের হিসাব লিখে রেখেছিলেন। সেই ডায়েরিতে ‘আকবর রোড’ এবং ‘২৪ আকবর রোড’-এর উল্লেখ রয়েছে। প্রসঙ্গত, ২৪ আকবর রোড হল দিল্লিতে কংগ্রেসের সদর দফতর।
সেই ডায়েরিতে উল্লেখ ছিল, ২০১৬ সালের ২২ অগস্ট থেকে ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত ধাপে ধাপে ১০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ‘আকবর রোডে’ পৌঁছেছে ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং’ এবং তার সহকারী সংস্থার থেকে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্তও ধাপে ধাপে টাকা পাঠানো হয়েছে ‘আকবর রোডে’।
শুধু ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং’ কোম্পানি নয়, ‘কক্কর-মিগলানি গ্রুপ’ নামে এক কোম্পানির সঙ্গেও কংগ্রেসের আর্থিক লেনদেনের কথা আদালতে জানিয়েছে আয়কর দফতর। ২০১৯ সালে এই কোম্পানিতে তল্লাশি অভিযান চালিয়েছিল তারা। অভিযানের সময় বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। সেই তথ্য থেকেই এই লেনদেনের কথা জানা যায় বলে আয়কর দফতর দাবি করেছে আদালতে।
তেলঙ্গানাভিত্তিক এই ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং’ কোম্পানি অনেক টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছে। তার মধ্যে ৫৮৪ কোটি টাকা অনুদান পেয়েছে বিজেপি। এ ছাড়া দক্ষিণ ভারতে ছোট বড় কয়েকটি রাজনৈতিক দলও এই বন্ড ভাঙিয়ে অনুদান পেয়েছে। তবে টাকার অঙ্ক বিজেপির মতো এত নয়। বিআরএস পেয়েছে ১৯৫ কোটি টাকা, ডিএমকে পেয়েছে ৮৫ কোটি টাকা, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের তহবিলে পৌঁছেছে ৩৭ কোটি টাকা। পাশাপাশি বিহারের ক্ষমতাসীন দল নীতীশ কুমারের জনতা দল (ইউনাইটেড) ‘মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং’ কোম্পানির নির্বাচনী বন্ড ভাঙিয়ে পেয়েছে ১০ কোটি টাকা।