এক ফ্রেমে প্রাক্তন এবং বর্তমান। ছবি— পিটিআই।
এত দিন জানা ছিল, ভোট বড় বালাই। কিন্তু মধ্যপ্রদেশ দেখাল, ভোটের প্রতিশ্রুতি তার চেয়েও বৃহৎ বালাই! ধারের উপর ধার করে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করার রাস্তায় হাঁটতে হচ্ছে ‘ভারতের হৃদয়’ বলে পরিচিত রাজ্যকে। সেখানে খুব সম্প্রতি ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েই মোহন যাদব রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)-এর কাছে দরখাস্ত করেছেন, রাজ্যের খরচ চালাতে সত্বর দু’হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন।
মাত্র দু’সপ্তাহ আগে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন মোহন। সেই মুহূর্তে তাঁর গলায় পরানো হয়েছে পূর্বতন শিবরাজ সরকারের ৪ লক্ষ কোটি টাকার ঋণের মালা। অর্থনীতিবিদদের বিশ্লেষণ, শিবরাজের যে ‘লাডলি বহেনা’ প্রকল্পের কাঁধে ভর করে কংগ্রেসের সঙ্গে আপাত ‘ক্লোজ় ফাইট’ হেলায় জিতেছে বিজেপি, তাতে ভরপুর চাপ পড়েছে রাজ্যের কোষাগারের উপর। শিবরাজ সরকার কেবল মাত্র ২০২৩ সালেই ঋণ করেছে ৪৪ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে পাঁচ হাজার কোটি ঋণ নেওয়া হয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধি জারি হওয়ার পর। এখন নতুন সরকার যখন ক্ষমতায়, তখন কোষাগারের হাড় জিরজিরে অবস্থা। পরিস্থিতি এমনই যে, রাজ্যের দৈনন্দিন খরচ সামলাতেও ধার চাইতে হচ্ছে আরবিআইয়ের কাছে। বস্তুত, রাজনীতিই এখন গলার ফাঁস হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারের।
তবে প্রত্যাশিত ভাবেই ধারের দায়কে পাত্তা দেননি নতুন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনীতিবিদরা তা করেনও না। বিধানসভাকে তিনি আশ্বস্ত করেছেন, ‘কোনও সমস্যা নেই’ জানিয়ে। রাজ্যের কোনও জনকল্যাণমূলক প্রকল্প টাকার অভাবে বন্ধ হবে না, এমন দাবিও বুক ঠুকে করেছেন মোহন। তিনি এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘অনেকেই দেখলাম, ভয় পাচ্ছেন যে, প্রকল্প নাকি বন্ধ হয়ে যাবে। এটা অযথা ভয়। কিছুই বন্ধ হবে না।’’ তাঁর দাবি, বিজেপির ইস্তাহার রামায়ণ বা গীতার মতোই পূতঃপবিত্র বিষয়। তাই, সেখানে যা যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, অবশ্যই পালিত হবে।
বিরোধী কংগ্রেস অবশ্য বিষয়টিতে হাতছাড়া করতে রাজি নয়। তাঁদের দাবি, ভোটে জিততে এমন সমস্ত আকাশকুসুম প্রতিশ্রুতি বিলি করেছে বিজেপি যে, তা বাস্তবায়িত করতে গিয়ে রাজ্যটাকেই বেচে দিতে হচ্ছে। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র আব্বাস হাফিজ় বলেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশের প্রতিটি শিশু ভূমিষ্ঠ হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা ঋণ মাথায় নিয়ে। বিজেপি ক্রমশ মধ্যপ্রদেশকে দেউলিয়া হওয়ার পথে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে দিচ্ছে। হুঁশ ফিরবে কবে?’’ মধ্যপ্রদেশের বিজেপি সরকারের রাজ্যের দৈনন্দিন খরচ চালাতে আরও ঋণ চাওয়াকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূলও।