একটু বেশি বয়সের বালক-বালিকা বা কিশোর-কিশোরীদের দত্তক পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয় না। —প্রতীকী চিত্র।
সাত থেকে ১৮ বছরের ছেলেমেয়েদের দত্তক নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে রাজ্যে। রাজ্য নারী ও
শিশুকল্যাণ দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, এই বয়সের নাবালক-নাবালিকাদের দত্তক নেওয়ার উৎসাহ আগের থেকে অনেক বেড়েছে। নিঃসঙ্গতা কাটাতে অনেক প্রৌঢ়-বৃদ্ধ দম্পতিই আজকাল কিশোর-কিশোরীদের দত্তক নিতে চাইছেন। সরকারও চাইছে, চাইল্ড কেয়ার ইনস্টিটিউশনে থাকা অনাথ ছেলেমেয়েরা একটি পরিবার ও বাবা-মায়ের ভালবাসা পাক।
রাজ্য নারী ও শিশুকল্যাণ দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২-’২৩ সালে ৭-১৭ বছর বয়সি ২৫ জন ছেলেমেয়েকে দত্তক নিয়েছিলেন প্রৌঢ়-বৃদ্ধ দম্পতিরা। পরের বছর সেই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে দাঁড়ায় ৫২। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ওই বয়সের ৪৭ জনকে দত্তক নেওয়া হয়েছে।
এই সংখ্যা বৃদ্ধির নেপথ্যে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন দফতরের কর্তারা। প্রথমত, সদ্যোজাত বা কমবয়সি শিশুদের দত্তক নিতে হলে অপেক্ষা করতে হয় কম-বেশি তিন বছর। কিন্তু একটু বেশি বয়সের বালক-বালিকা বা কিশোর-কিশোরীদের দত্তক পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয় না। দ্বিতীয়ত, শিশুদের বড় করে তুলতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু কিশোর-কিশোরীদের দত্তক নিলে সেই ঝক্কি থাকে না। ৭-১৮ বছরের ছেলেমেয়েদের দত্তক দেওয়া হয় সেই সব দম্পতিকে, যাঁদের বয়সের যোগফল ১০০-১১০। অর্থাৎ, যাঁরা প্রৌঢ় কিংবা বার্ধক্যের দোরগোড়ায়। এই বয়স থেকেই অনেক নিঃসঙ্গ দম্পতি অবসাদে ভুগতে শুরু করেন। তাই একাকিত্ব কাটাতে এবং বেঁচে থাকার অবলম্বন পেতে ঘরে একটি ছেলে বা মেয়ে আনতে চাইছেন তাঁদের অনেকেই। তৃতীয়ত,
বয়স্কদের দেখাশোনার জন্য প্রয়োজন হয় আপনজনের। বেতন দিয়ে সেই কাজে কাউকে নিয়োগ করলেও তাঁর সঙ্গে সচরাচর আত্মীয়তা গড়ে ওঠে না। তা ছাড়া, এই কাজে ঝুঁকিও আছে। একাকী প্রবীণ দম্পতিরা নানাবিধ অপরাধের শিকার হন। আইনি পথে কিশোর-কিশোরীদের দত্তক নিলে সেই ঝুঁকি কার্যত থাকে না।
৭-১৮ বছরের ছেলেমেয়েদের দত্তক নেওয়ার জন্য প্রৌঢ় ও প্রবীণ দম্পতিদের উৎসাহিত করছে প্রশাসন। জেলায় জেলায় কর্মশালা হচ্ছে। রাজ্য নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা জানান, চাইল্ড কেয়ার ইনস্টিটিউশনে এমন বহু বেশি বয়সি নাবালক-নাবালিকা রয়েছে, যারা একটি পরিবার পেতে চায়। বেশির ভাগ দম্পতিই সদ্যোজাত বা অল্পবয়সি শিশুদের দত্তক নিতে চান। এই মানসিকতা ভাঙার লক্ষ্যে বেশি বয়সের বালক-বালিকাদের দত্তক নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে বয়স্ক দম্পতিদের। সেই কাজে বেশ কিছুটা সাফল্যও মিলেছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, দত্তক দেওয়া যেতে পারে, এমন ৭-১৮ বছরের ছেলেমেয়েদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালতের নির্দেশে এই লক্ষ্যে দু’মাস অন্তর বিশেষ কর্মসূচিও নেওয়া হচ্ছে। চিহ্নিত ছেলেমেয়েদের রেজিস্ট্রেশন করানো হচ্ছে দত্তক সংক্রান্ত সরকারি পোর্টালে। সেই পোর্টাল দেখে দত্তক নিতে ইচ্ছুক দম্পতিরা বালক বা বালিকা নির্বাচন করছেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ৭-১৮ বছর বয়সের দশ জন ছেলেমেয়েকে বিভিন্ন পরিবারে পাঠানো হয়েছে (ফস্টার কেয়ার), যাতে তারা পারিবারিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। সেই পরিবারের সঙ্গে তাদের আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠছে। চাইলে নির্দিষ্ট সময় পরে তাদের দত্তক নিতে পারে সেই পরিবারগুলিও।