(বাঁ দিকে) কপিল সিব্বল। অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
কপিল সিব্বলও পারেননি, পারলেন না অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিও। ‘নির্দল’ প্রার্থী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলের সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হলেন দু’জনেই। এপ্রিল মাসের ২ তারিখে পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেসের সাংসদ হিসেবে মেয়াদ শেষ হচ্ছে কংগ্রেস মুখপাত্র সিংভির। তৃণমূল সূত্রের খবর, এ বার ‘নির্দল’ প্রার্থী হিসেবে তাদের সমর্থনে বাংলা থেকে আবারও রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার একটা চেষ্টা করেছিলেন তিনি। তা নিয়ে যে আলোচনা হয়নি, তা-ও নয়। কিন্তু শেষমেশ তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সরাসরি তৃণমূলে যোগদান করতে হবে। রাজ্যসভায় নির্বাচিত হলে হতে হবে তৃণমূলের সদস্য হিসেবে। তা হলে মনোনয়ন নিয়ে এগোন যেতে পারে। কিন্তু নির্দল প্রার্থী হিসেবে তাঁকে সমর্থন করা সম্ভব নয়।
২০১৮ সালে যখন মনু সিঙ্ঘভি পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভা ভোটে কংগ্রেসের প্রার্থী হন, তখন রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল ছিল কংগ্রেস। এমনিতে পরস্পরের বিরোধী হলেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও তৎকালীন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান একযোগে তাঁর মনোনয়নের বিরোধিতা করেছিলেন। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের মতামতকে উপেক্ষা করেই তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছিল এআইসিসি। সেই ভোটে কংগ্রেসের ৩৪ জন বিধায়ক-সহ বিদ্রোহী ৯ জন এবং কয়েকজন তৃণমূল বিধায়কের ভোট পেয়ে পঞ্চম আসনে জয়ী হন সিঙ্ঘভি।
এর পরে সিঙ্ঘভির পথ ধরেই কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা সিব্বলও রাজ্যসভার আসনে সমর্থন চাইতে শরণাপন্ন হয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতার। সিব্বল আর্জি জানিয়েছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। মমতার দলের এক রাজ্যসভা সাংসদকে সিব্বল জানিয়েছিলেন, রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ হিসেবে তাঁর মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে। কিন্তু তিনি আর কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়াতে চান না। তৃণমূল কি তাঁকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেবে? তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে তৃণমূলের তাতে আপত্তি ছিল না। কারণ, দলের নেতারা ভেবেছিলেন, সিব্বল তৃণমূলে যোগ দিয়ে তাঁদের টিকিটে রাজ্যসভায় প্রার্থী হবেন। কিন্তু সিব্বল জানিয়ে দেন, তিনি সরাসরি দলে যোগ দিতে উৎসাহী নন। তিনি তৃণমূলের সমর্থনে ‘নির্দল’ হয়ে মনোনয়ন পেতে চান। তৃণমূল সূত্রের খবর, তাতে অনুমোদন দেননি মমতা-অভিষেক। দু’জনেই জানিয়ে দেন, সিব্বলকে তৃণমূলে সরাসরি যোগ দিতে হবে।
যে সময়ে সিব্বলের সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের আলোচনা চলছিল, সেই সময় দীনেশ ত্রিবেদী ও মানস ভুঁইয়া রাজ্যসভা থেকে ইস্তফা দেওয়ায় রাজ্যসভার জোড়া আসন খালি হয়েছিল তৃণমূলের। কিন্তু সিব্বল তৃণমূলে যোগদানের শর্তে রাজি না হওয়ায় বাংলা থেকে সাংসদ হওয়া হয়নি তাঁর। তার পরেই সিব্বল যোগাযোগ করেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবের সঙ্গে। অখিলেশ সিব্বলের প্রস্তাব মেনে নেন। তিনি বর্ষীয়ান কংগ্রেসি নেতাকে সপা-য় যোগ দিতে বলেননি। ২০২২ সালের মে মাসে সিব্বল নির্দল হিসেবে রাজ্যসভার সাসংদ হন এসপি-র সমর্থনে।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে রাজ্যে শূন্য হয়ে যায় কংগ্রেস। তাই ২০২৪ সালের রাজ্যসভা ভোটে যে আর বাংলা থেকে সাংসদ হওয়া সম্ভব নয়, তা তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল সিঙ্ঘভির কাছে। কিন্তু মমতা-অভিষেকের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক। রাজ্য সরকারের হয়ে বিভিন্ন মামলাতেও সুপ্রিম কোর্টে প্রায়শই সওয়াল করে থাকেন সিঙ্ঘভি। সূত্রের খবর, সেই সম্পর্কের ভিত্তিতেই সিব্বলের মতোই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে নির্দল প্রার্থী হিসেবে সমর্থন চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব সিঙ্ঘভিকে তৃণমূলে যোগদান করতে বলে দেন। সিঙ্ঘভি তাতে রাজি হননি বলেই তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর। কংগ্রেস সূত্রের খবর, সিঙ্ঘভি তৃণমূল নেতৃত্বের পাশাপাশি এআইসিসি-তেও নিজের জন্য রাজ্যসভার আসন নিয়ে আলোচনা জারি রেখেছিলেন। তৃণমূলের তরফে নেতিবাচক জবাবের পর তাঁর জন্মভূমি রাজস্থান থেকে রাজ্যসভায় যেতে চান বলে এআইসিসি-র কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন এই আইনজীবী-নেতা। এআইসিসির একটি সূত্রের দাবি, রাজস্থান থেকে সিঙ্ঘভিকে রাজ্যসভায় পাঠানোর আশ্বাস দেওয়া হতে পারে। এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে রাজস্থানের প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা না হলে এ নিয়ে এখনই প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে কেউ রাজি নন।