Rajib Banerjee and TMC

তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে ‘গদ্দার’ স্লোগান রাজীবকে ঘিরে, ক্ষোভে হাওড়া নেতৃত্বকে বার করে দিলেন বক্সী

রবিবার রেড রোডে তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে প্রাক্তন সেচমন্ত্রীকে ঘিরে হাওড়া জেলা (সদর) তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ ‘গদ্দার হটাও, বাংলা বাঁচাও’ স্লোগান দেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৫১
Rajib Banerjee is insulted in TMC Dharna Mancha

(বাঁ দিকে) সুব্রত বক্সী। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

সাধারণত বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে দেখলে গদ্দার স্লোগান দেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। কিন্তু রবিবার তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে সেই ‘গদ্দার’ স্লোগান শুনতে হল রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। রেড রোডে তৃণমূলের ধর্নামঞ্চে প্রাক্তন সেচমন্ত্রীকে ঘিরে হাওড়া জেলা (সদর) তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ ‘গদ্দার হটাও, বাংলা বাঁচাও’ স্লোগান দেন। এই ঘটনার জেরে মঞ্চেই ক্ষোভপ্রকাশ করেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। শেষমেশ হাওড়ার নেতাদের মঞ্চ তথা ধর্না চত্বর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

Advertisement

রবিবার আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল হাওড়ার দুই সাংগঠনিক জেলাকে। সকালে হাওড়া (গ্রামীণ) তৃণমূলের সভাপতি অরুণাভ সেনের নেতৃত্বে তৃণমূলের এই কর্মসূচি হয়। দুপুরে অরুণাভের থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন হাওড়া জেলা (সদর) তৃণমূলের সভাপতি কল্যাণ ঘোষ। একে একে মঞ্চে ভিড় জমাতে শুরু করেন হাওড়া সদরের নেতারা। এই সময়ই ধর্নামঞ্চে আসেন রাজীব। প্রথমেই সভাপতি বক্তৃতা করতে দেন জেলার নেতা সৃষ্টিধর ঘোষকে। সেই বক্তৃতার মধ্যেই ধর্নামঞ্চের নীচ থেকেই স্লোগান ওঠে, ‘গদ্দার হটাও বাংলা বাঁচাও’। প্রথম মঞ্চ থেকে মৃদু ধমক দেওয়া হলে পরিস্থিতি আয়ত্তে আসেনি। বরং সময় এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে রাজীবকে উদ্দেশ্য করে সেই স্লোগান চলতে থাকে। এর পর বক্তৃতা করতে ওঠেন হাওড়ার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ও একই স্লোগানের পুনর্বৃত্তি। নীচ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, কেন রাজীব এখানে এসেছেন? এর পর জেলা সভাপতি কল্যাণও মঞ্চ থেকে অনুরোধ করেন, তাঁরা যেন এ এমন স্লোগান না দেন। কিন্তু সভাপতির নির্দেশেও কাজ হয়নি। বরং স্লোগানের তীব্রতা বেড়ে গিয়ে মঞ্চের নীচ থেকেই দাবি ওঠে, এখনই রাজীবকে মঞ্চ থেকে বার করে দেওয়া হোক। সময় যতই এগোতে থাকে ধর্নামঞ্চের উত্তাপও বাড়তে থাকে। মঞ্চের একেবারে শেষের দিকে বসে ঘটনা প্রত্যক্ষ করছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি।

পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে দেখে মাইক্রোফোন হাতে এগিয়ে আসেন বক্সী। ক্রুদ্ধ রাজ্য সভাপতি বলেন, ‘‘আপনারা যাঁরা দাদাদের হাত ধরে এসেছেন, তাঁরা দাদাদের হাত ধরে বেরিয়ে যান। আপনাদের এই ধর্নামঞ্চে অংশগ্রহণ করতে হবে না। আপনাদের ছাড়া যে ভাবে এত দিন ধর্নামঞ্চের কর্মসূচি হয়েছে, সে ভাবেই কর্মসূচি চলবে।’’ অকপট রাজ্য সভাপতি হিসাবেই পরিচিত সুব্রত। তাই তাঁর এমন চড়া মেজাজে ভয় পেয়ে যান উপস্থিত নেতারা। একে একে মঞ্চ থেকে নামতে শুরু করেন। রাজ্য সভাপতির অগ্নিশর্মা চেহারা দেখে মঞ্চের নীচ থেকে তত ক্ষণে ভিড় পাতলা হতে শুরু করে। মিনিট দশেকের মধ্যেই হাওড়া সদর থেকে আগত নেতা-কর্মীরা রওনা দেন হাওড়ার উদ্দেশে। তার পর হাতেগোনা নেতাদের নিয়ে আবারও শুরু হয়।

ঘটনাচক্রে হাওড়া জেলার ডোমজুড়ের দু’বারের বিধায়ক ছিলেন রাজীব। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তিনি বিজেপিতে যোগদান করে ডোমজুড়ে পরাজিত হন। ২০২২ সালে তাঁকে আগরতলার সভা থেকে তৃণমূলে ফেরান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দায়িত্ব দেন ত্রিপুরার সংগঠনের। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সফল হননি রাজীব। বর্তমান মুখপাত্র হিসেবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যাচ্ছেন রাজীব। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হাওড়ার এক প্রবীণ নেতা বলেন, ‘‘এমন ঘটনা না ঘটলেই ভাল হত। ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখানোর তো অন্য জায়গা রয়েছে। রাজীবকে যদি কারও মেনে নিতে অসুবিধা হয়, তা হলে তা জানানোর জায়গাও রয়েছে। তাই এমন ঘটনা সমর্থনযোগ্য নয়। তবে যে ভাবে বক্সীদা আমাদের বকেছেন, তাতে আমরা খুবই অপমানিত হয়েছি। কারণ সবাই তো আর এই স্লোগানে শামিল হইনি।’’

হাওড়ার রাজনীতিতে বরাবরই বিপরীত মেরুতে থেকেছেন অরূপ রায়-কল্যাণ ঘোষ এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বিধানসভা ভোটে রাজীবকে হারিয়েই বিধায়ক হয়েছেন কল্যাণ। তাই কার অনুগামীরা রাজীবকে দেখে ‘গদ্দার’ স্লোগান দিল, তাঁর খোঁজও শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন
Advertisement