Stealth Frigate

ভারতীয় নৌসেনাকে নতুন ‘মেঘনাদ’ দিচ্ছে রাশিয়া, ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রবাহী স্টেলথ্ ফ্রিগেট তমাল

২০১৮ সালে সই হওয়া চুক্তি অনুযায়ী আইএনএস তলোয়ার শ্রেণির চারটি স্টেল্‌থ ফ্রিগেট বানাচ্ছে রাশিয়া। সেই তালিকায় দ্বিতীয় ‘মাল্টি-রোল স্টেলথ্‌ গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট’ আইএনএস তমাল।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:২৯
India Navy to finally get dvanced multi-role stealth guided missile frigate INS Tamal from Russia

ভারতীয় নৌসেনায় ‘মাল্টি-রোল স্টেলথ্‌ গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট’। ছবি: পিটিআই।

রাবণ-পুত্র মেঘনাদের (ইন্দ্রজিৎ) মতোই আড়ালে থেকে শত্রুর উপর প্রাণঘাতী আঘাত হানতে সে দক্ষ। এ বার রাশিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তায় সেই অস্ত্র পেতে চলেছে ভারতীয় নৌসেনা। ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র এবং ডুবোজাহাজ বিধ্বংসী প্রযুক্তিতে সজ্জিত ‘মাল্টি-রোল স্টেলথ্‌ গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট’ আইএনএস তমাল রাশিয়া থেকে শীঘ্রই রওনা দেবে ভারতের উদ্দেশে।

Advertisement

ভারত এবং রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে ইয়নটার শিপইয়ার্ডে নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ‘স্টেলথ্‌ গাইডেড মিসাইল ফ্রিগেট’গুলির অন্যতম তমাল। ২০১৬ সালের সমঝোতা এবং ২০১৮ সালে সই হওয়া চূড়ান্ত চুক্তি অনুযায়ী আইএনএস তলোয়ার শ্রেণির চারটি স্টেল্‌থ ফ্রিগেট বানাচ্ছে রাশিয়া। চুক্তির মোট অঙ্ক ২৫০ কোটি ডলার (প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা)। এই তালিকার প্রথমটি, আইএনএস তুষিল ইতিমধ্যেই ভারতীয় নৌসেনায় যোগ দিয়েছে। এ বার পালা আইএনএস তমালের।

অত্যাধুনিক এই যুদ্ধজাহাজ পরিচালনা এবং যুদ্ধকৌশলের প্রশিক্ষণে যোগ দিতে এখন রাশিয়ায় রয়েছেন ভারতীয় নৌসেনার ২০০ জন অফিসার এবং কর্মী। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, চলতি বছরের জুন মাসেই আনুষ্ঠানিক ভাবে নৌসেনায় যোগ দিয়ে সমুদ্রযুদ্ধের মহড়ায় যোগ দেবে আইএনএস তমাল। প্রসঙ্গত, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের মোকাবিলার জন্য নৌসেনাকে আধুনিক যুদ্ধের উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ শুরু হয়েছিল ইউপিএ সরকারের আমলে। সেই পরিকল্পনারই অঙ্গ হিসেবে পি-১৭এ প্রকল্পে মোট সাতটি শিবালিক গোত্রের ‘স্টেলথ ফ্রিগেট’ নির্মাণ শুরু হয়েছিল প্রায় দেড় দশক আগে। পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে আধুনিকতর তলোয়ার শ্রেণির স্টেলথ্‌ ফ্রিগেট নির্মাণের চুক্তি হয়।

ব্রহ্মস সুপারসনিক (শব্দের চেয়ে বেশি গতিবেগ সম্পন্ন) ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও আইএনএস তমালে থাকছে বিমানবিধ্বংসী কামান। পাশাপাশি থাকছে ডুবোজাহাজ ধ্বংসকারী ৩০ ‘নট’ গতিবেগ সম্পন্ন টর্পোডো। এ ছাড়া দু’টি রুশ কামোভ-২৮ এবং কামোভ-৩১ হেলিকপ্টার থাকছে, যা শত্রুর অবস্থান পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি হামলার কাজেও ব্যবহার করা যাবে। প্রসঙ্গত, স্টেল্‌থ প্রযুক্তির শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, যুদ্ধবিমান দিয়ে। পরবর্তী কালে যুদ্ধজাহাজ, ডুবোজাহাজ এমনকি সামরিক হেলিকপ্টারেও ব্যবহার হচ্ছে এই প্রযুক্তি। শত্রুর নজর এড়িয়ে হামলা চালানোর জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে স্বচ্ছ ফাইবারের তৈরি যুদ্ধবিমান বানিয়েছিল হিটলারের জার্মানি।

ঘটনাচক্রে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েই শত্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজ চিহ্নিত করার জন্য রাডারের ব্যবহার শুরু হয়। সেই সঙ্গে শুরু হয়, রাডার-নজরদারি ফাঁকি দেওয়ার প্রযুক্তির সন্ধানও। এ ক্ষেত্রেও পথপ্রদর্শক ছিল জার্মানি। ছ’দশক পরেও শত্রুপক্ষের বিমান বা যুদ্ধজাহাজ চিহ্নিত করার জন্য ব্যবহৃত রাডারের মূল প্রযুক্তি প্রায় একই রয়েছে। যে এলাকা থেকে জল বা আকাশপথে শত্রুসেনার আগ্রাসনের আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে নির্দিষ্ট সময় অন্তর রেডিয়ো তরঙ্গ ছুড়ে দেয় রাডার। যুদ্ধবিমান বা জাহাজের ধাতব দেওয়ালে সেই নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ‘রেডিয়ো ওয়েভ’ ধাক্কা খেয়ে ফিরে এলেই কেল্লা ফতে। নিমেষে হিসাব করে নেওয়া যায় সেই বিমান বা জাহাজের অবস্থান, আকার, অভিমুখ এবং গতিবেগ।

অর্থাৎ রাডারের নজরদারি এড়াতে হলে বাঁচতে হয় সেই রেডিয়ো তরঙ্গ থেকে। রাডার প্রতিরোধী ‘স্টেলথ টেকনোলজি’র লক্ষ্য একটাই— বিমান বা জাহাজের গায়ে ধাক্কা খাওয়া রেডিয়ো তরঙ্গকে ঠিক ভাবে রাডারের কাছে ফিরতে না দেওয়া। সে জন্য রেডিয়ো তরঙ্গকে শুষে নেওয়া বা দিগ্‌ভ্রান্ত করার পদার্থ এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। বিশেষ ধাতুশঙ্কর এবং কার্বন ফাইবারের তৈরি স্টেলথ যুদ্ধবিমান কিংবা ফ্রিগেট ও ডেস্ট্রয়ার জাতীয় স্টেলথ যুদ্ধজাহাজ সেই কাজ করতে পারে, যা সাধারণ ধাতুতে তৈরি যুদ্ধবিমান বা যুদ্ধজাহাজের পক্ষে সম্ভব নয়।

Advertisement
আরও পড়ুন