Jagdeep Dhankhar

‘আদানি’ পারেনি, পারল ‘ধনখড়’! শীতকালীন অধিবেশনে এই প্রথম জোটবদ্ধ হল ‘ইন্ডিয়া’

জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে ‘ইন্ডিয়া’। ধনখড়ের বিরুদ্ধে রাজ্যসভায় পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। অনাস্থা প্রস্তাবে সম্মতি রয়েছে তৃণমূলেরও।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:২৪
জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনল ‘ইন্ডিয়া’।

জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনল ‘ইন্ডিয়া’। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

‘আদানি’ ইস্যু যা পারেনি, তা-ই পারল ‘ধনখড় বিতর্ক’! রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনল বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। এবং ঐক্যবদ্ধ ভাবে। চলতি শীতকালীন অধিবেশনের সময় দেশের বিরোধী জোটের ঐক্য-চিত্র ধরা পড়ল এই প্রথম। এর আগে ‘আদানি’ বিষয়ে কংগ্রেসের কর্মসূচি এড়িয়ে গিয়েছিল সমাজবাদী পার্টি এবং তৃণমূল। ছিল না আপ-ও। ‘ধনখড়’ ইস্যু একজোট করল সবাইকে।

Advertisement

ধনখড়ের বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া’র আনা অনাস্থা প্রস্তাবে ৬০ সাংসদের সই রয়েছে। কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকের সাংসদেরা রয়েছেন তালিকায়। পাশাপাশি সই রয়েছে আরজেডি, জেএমএম, শিবসেনা (উদ্ধব), এনসিপি (শরদ)-সহ ‘ইন্ডিয়া’র সব শরিক দলের সাংসদের। ওই অনাস্থা প্রস্তাব রাজ্যসভার সচিবালয়ে জমা দেবেন তাঁরা। তৃণমূলের এক রাজ্যসভার সাংসদ জানান, বিরোধীরা সকলে মিলেই অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেছেন।

নিয়ম অনুসারে রাজ্যসভার চেয়ারপার্সনের অপসারণের জন্য অনাস্থা প্রস্তাবটি প্রথমে রাজ্যসভায় পেশ করতে হবে। সেখানে সাংসদদের ভোটাভুটিতে ধনখড়ের বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠের মত প্রয়োজন। তার পর সেটি লোকসভায় পেশ হবে। সেখানেও একই ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ধনখড়ের বিরুদ্ধে মত প্রয়োজন। কিন্তু সাংসদ-সংখ্যার বিচারে ‘ইন্ডিয়া’র একক ভাবে ধনখড়ের বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ মত তৈরি সম্ভব নয়। এই অঙ্ক ‘ইন্ডিয়া’রও জানা। তার পরেও ধনখড়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে অনাস্থা প্রস্তাব যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে এই অনাস্থা প্রস্তাবকে বিরোধীদের একটি নীতিগত অবস্থান বোঝানোর চেষ্টা বলেও ব্যাখ্যা করছেন কেউ কেউ।

আদানি-বিতর্ক নিয়ে আলোচনা চাওয়া হবে না, এ কথা অবশ্য তৃণমূল কখনও বলেনি। তবে তৃণমূল সাংসদদের বক্তব্য, বাংলার দাবিদাওয়াগুলিকেই তাঁরা অগ্রাধিকার দিতে চান সংসদে। আলোচনা চান মণিপুরের মতো প্রসঙ্গ নিয়েও। তা ছাড়া হট্টগোল করে সংসদ অচল করা নিয়েও আপত্তি রয়েছে তৃণমূলের। কারণ, সংসদ অচল হলে মানুষের দাবিদাওয়ার কথা, বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষকে বঞ্চনার অভিযোগের কথা অধিবেশনে তুলে ধরা যাবে না। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আদানি প্রসঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা আমদানি-রফতানি বুঝি না। আমাদের জামদানি আছে।” তৃণমূল নেতাদের ঘরোয়া আলোচনা সূত্রে খবর, আদানি-বিতর্ক মূলত রাহুল গান্ধী এবং তাঁর দল কংগ্রেসের তুলে ধরা একটি বিষয়। তৃণমূল কেন তাতে ‘লেজুড়বৃত্তি’ করতে যাবে!

ঘুষকাণ্ডে আদানি গোষ্ঠীর নাম জড়ানোকে কেন্দ্র করে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে শুরু থেকে বিজেপিকে চাপে রাখার কৌশল নেয় কংগ্রেস। সংসদের ভিতরে ও বাইরে এ নিয়ে সরব হয়েছে তারা। আদানি-বিতর্কে সংসদে আলোচনা চেয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে বিক্ষোভ সামিল হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’র বেশ কিছু শরিক দল। তবে তাতে তৃণমূলের কোনও সাংসদকে দেখা যায়নি। আদানি প্রশ্নে সংসদ অচল করার প্রসঙ্গে সম্মতি নেই তৃণমূলের। সংসদের বাইরে বিক্ষোভে তৃণমূলকে দেখা না যাওয়ার প্রসঙ্গে সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার সেই সময়ে জানিয়েছিলেন, দল সংসদকে অচল করতে চায় না। এর পরেও ধারাবাহিক ভাবে কংগ্রেস-সহ ‘ইন্ডিয়া’র কিছু শরিক দল প্রতিবাদে শামিল হয়। কখনও ‘মোদী-আদানি এক হ্যায়। আদানি সেফ হ্যায়’ স্লোগান লেখা জ্যাকেট এবং টি-শার্টে প্রতিবাদ চলেছে। কখনও মোদী এবং আদানির মুখোশ পরে প্রতিবাদ চলেছে সংসদ ভবনের বাইরে। এই বিক্ষোভ, প্রতিবাদে কোনও ক্ষেত্রেই তৃণমূলকে দেখা যায়নি।

তৃণমূলের রাজ্যসভা নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন গত বুধবার এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, “সংসদে বিজেপির কুকীর্তিকে প্রকাশ্যে আনার সার্বিক কৌশলের ক্ষেত্রে আমরা সবাই একজোট। তবে বিভিন্ন দলের সেই কৌশলকে বাস্তবায়িত করার বিভিন্ন উপায় থাকতেই পারে।” কংগ্রেসের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলের সাংসদ গৌরব গগৈ ধর্নায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ করে বুধবার তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব খারিজ করে সুদীপ জানান, তৃণমূলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে স্থির হয়েছে, বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনা-সহ সাধারণ মানুষের স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত মোট ছ’টি বিষয় নিয়েই তাঁরা সরব হবেন। আদানিকাণ্ড সেই তালিকায় নেই। আদানি ইস্যু যা পারেনি ধনখড় বিতর্ক সেটাই করে দেখাল।

Advertisement
আরও পড়ুন