সিওপি-২৮ চলাকালীন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর সঙ্গে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র ।
মলদ্বীপ থেকে কি সেনা সরাবে ভারত? এখনও কাটছে না জট। সম্প্রতি রাজধানী দিল্লিতে প্রতিবেশী দ্বীপরাষ্ট্র থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা করতে দ্বিতীয় বারের জন্য বৈঠকে বসেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা। ভারত জানিয়েছে, সেই বৈঠকে মলদ্বীপে থাকা ভারতীয় বিমানক্ষেত্রে সেনা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েকটি ‘কার্যকর সমাধান’ খুঁজে বার করা গিয়েছে। উভয় দেশই সেই সমাধানে সম্মতি জানিয়েছে বলেও জানিয়েছে ভারত। যদিও মলদ্বীপ থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হবে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু জানায়নি ভারত। অন্যদিকে, মলদ্বীপের দাবি অন্য। মুইজ্জু সরকারের দাবি, মে মাসের মধ্যে মলদ্বীপের তিনটি বিমানক্ষেত্র থেকে সেনা ‘প্রতিস্থাপন’ করবে ভারত। মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘ভারত সরকার ১০ মে-র মধ্যে মলদ্বীপে থাকা তিনটি বিমানক্ষেত্র থেকে সেনা সরিয়ে নেবে। যার মধ্যে একটি বিমানক্ষেত্রে থেকে ১০ মার্চের মধ্যেই সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে। ১০ মে-র মধ্যে বাকি দু’টি বিমানক্ষেত্রে থেকেও সেনা সরানো হবে।’’ উভয় দেশই সেই সিদ্ধান্তে সহমত বলে দাবি মলদ্বীপের বিদেশমন্ত্রকের।
তবে ভারতের বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতি অনুযায়ী, ‘‘উভয় পক্ষই মলদ্বীপের জনগণকে মানবিক এবং চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভারতীয় বিমানক্ষেত্রে সেনা কার্যকলাপ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পারস্পরিক ভাবে কয়েকটি কার্যকর সমাধান খুঁজে বার করেছে।’’ যদিও বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে মলদ্বীপ থেকে সেনা সরানোর কোনও উল্লেখ নেই। ভারত এবং মলদ্বীপের মধ্যে চলা কূটনৈতিক টানাপড়েনের আবহে দিল্লিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর বিবৃতি প্রকাশ করেছে দুই দেশ। দুই দেশের মধ্যে উচ্চস্তরের পরবর্তী বৈঠক মলদ্বীপের রাজধানী মালেতে হবে বলেও জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রক। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ভারত এবং মলদ্বীপ— উভয়পক্ষই পারস্পরিক সাহায্যের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত করার আলোচনাও চলছে।
প্রসঙ্গত, মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জুর নেতৃত্বাধীন মলদ্বীপ সরকার সে দেশ থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য ইতিমধ্যেই সময়সীমা বেধে দিয়েছিল ভারতকে। মুইজ্জু সরকারের ‘আর্জি’ ছিল, ১৫ মার্চের মধ্যে মলদ্বীপ থেকে সেনা সরাতে হবে ভারতকে। মুইজ্জুর সচিবালয়ের শীর্ষ আধিকারিক আবদুল্লা নাজ়িম ইব্রাহিম সম্প্রতি দেশের একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন, “ভারতীয় সেনারা মলদ্বীপে থাকতে পারবেন না। কারণ, এটাই প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু এবং তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত।” প্রসঙ্গত, এর আগেও ক্ষমতায় আসার পরে পরেই ভারতকে সেনা সরানোর আর্জি জানিয়েছিল ‘চিনপন্থী’ হিসাবে পরিচিত মুইজ্জু। আর তা নিয়ে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে চিড় ধরেছে বলেই মত কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
২০১০ সাল থেকে একটি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে ভারতীয় সেনার ৮০ জন সদস্য মলদ্বীপে রয়েছে। মলদ্বীপের সেনাকে যুদ্ধ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণও দেয় তারা। পাশাপাশি মলদ্বীপের অন্তর্গত প্রত্যন্ত দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য মানবিক সহায়তা এবং চিকিৎসা উপাদান পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও রয়েছে ভারতীয় সেনার কাঁধে। সেই সেনাকেই মলদ্বীপ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল মলদ্বীপ প্রশাসন।