আবার উত্তপ্ত মণিপুর। ছবি: পিটিআই।
বুধবার ভোররাতে নতুন করে শুরু হওয়া গোষ্ঠীহিংসায় দু’জনের মৃত্যুর জেরে মণিপুরের অশান্ত অঞ্চলে নতুন করে নিরাপত্তা নজরদারি বাড়ানো হল। দিনভর চূড়াচাঁদপুর এবং বিষ্ণুপুর সীমানায় টহলদারি চালাল কেন্দ্রীয় বাহিনী। প্রসঙ্গত, বুধবার ভোররাতে দুই জেলার সীমানাবর্তী খৈরেন্টক এলাকায় মেইতেই এবং কুকি জনগোষ্ঠীর গুলির লড়াই বাধে। তাতে দু’জনের মৃত্যু হয়। অভিযোগ, মায়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিরাও হামলায় যোগ দিয়েছিল।
এরই মধ্যে বুধবার আনুষ্ঠানিক ভাবে মণিপুর হিংসাপর্বের ২৭টি এফআইআর-এর তদনতের কাজ শুরু করেছে সিবিআই। এর মধ্যে রয়েছে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ১৯টি মামলা। মণিপুরে হিংসার ঘটনাগুলির তদন্তের জন্য চলতি মাসেই ২৯ জন মহিলা আধিকারিক-সহ মোট ৫৩ জন অফিসারকে নিয়ে ‘টিম’গড়েছে সিবিআই। তদন্তকারী দলে ‘পর্যবেক্ষক’ হিসাবে রয়েছেন ডিআইজি স্তরের তিন জন মহিলা অফিসার। দু’জন অতিরিক্ত সুপার এবং ছ’জন ডেপুটি সুপার পদমর্যাদার মহিলা অফিসারও রয়েছেন। পুরো তদন্ত প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধান করবেন সিবিআইয়ের জয়েন্ট ডিরেক্টর ঘনশ্যাম উপাধ্যায়। সিবিআইয়ের ইতিহাসে কখনও কোনও ঘটনা পর্বের তদন্তে এত বিপুল সংখ্যক অফিসার নিয়োগ করা হয়নি বলে সংস্থাটির একটি সূত্র জানাচ্ছে।
মণিপুরের হিংসা সংক্রান্ত যে মামলাগুলির তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে রয়েছে, তার শুনানি অসমের গুয়াহাটিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ওই মামলাগুলির বিচারের জন্য নিম্ন আদালত মনোনয়নের ভারও গৌহাটি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে দিয়েছে শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ। ধৃতদের রিমান্ডে নেওয়া, হিংসায় অভিযুক্ত ব্যক্তি এবং সাক্ষীদের শুনানিও গুয়াহাটিতে হবে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত।
গত ৩ মে জনজাতি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অফ মণিপুর’ (এটিএসইউএম)-এর কর্মসূচি ঘিরে অশান্তির সূত্রপাত হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই রাজ্যে। মণিপুর হাই কোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছিল। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলি তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেই ঘটনা থেকেই সংঘাতের সূচনা হয় সেখানে।
মণিপুরের আদি বাসিন্দা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মেইতেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কুকি, জ়ো-সহ কয়েকটি তফসিলি জনজাতি সম্প্রদায়ের (যাদের অধিকাংশই খ্রিস্টান) সংঘর্ষ ঠেকাতে গত ৬ মে মণিপুরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। নামানো হয় সেনা এবং অসম রাইফেলস বাহিনীকে। সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকির ভার দেওয়া হয় সিআরপিএফের প্রাক্তন প্রধান কুলদীপ সিংহকে। তাঁর অধীনে এডিজিপি (ইন্টেলিজেন্স) আশুতোষ সিংহকে সমগ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপারেশনাল কমান্ডার-এর দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু চার মাস কেটে গেলেও হিংসা থামেনি। এখনও পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা প্রায় দু’শো। ঘরছাড়া ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ।