মুম্বইয়ে বচ্চন পরিবার এবং উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে মমতা। ছবি: পিটিআই।
প্রথমে অভিনেতা ‘জলসা’য় গিয়ে অমিতাভ বচ্চন এবং তাঁর পরিবার। এর পরে ‘মাতোশ্রী’তে শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা উদ্ধব ঠাকরে। বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র তৃতীয় বৈঠকে যোগ দিতে মুম্বই পৌঁছে বুধবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাক্ষাৎ করলেন দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীর দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে।
পটনা ও বেঙ্গালুরুর পরে বিজেপি-বিরোধী জোটের তৃতীয় মহা-বৈঠক মুম্বইয়ে হতে চলেছে আগামী বৃহস্পতি (৩১ অগস্ট) এবং শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর)। তার আগে আগামী লোকসভা ভোটে ‘ইন্ডিয়ার প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়েও টানাপড়েনের আঁচ মিলেছে। আম আদমি পার্টি (আপ) প্রধান মুখপাত্র প্রিয়ঙ্কা কক্কর বুধবার দুপুরে জানিয়েছিলেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে ‘প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার’ হিসাবে তুলে ধরে তাঁরা লোকসভা ভোটে লড়তে চান। কয়েক ঘণ্টা পরেই কেজরী ঘনিষ্ঠ আপ নেত্রী তথা দিল্লির মন্ত্রী আতিশী তা খারিজ করে বলেন, ‘‘কেজরীওয়াল প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে নেই।’’ অন্য দিকে, মমতা মুম্বই পৌঁছে বিরোধী জোটের ‘সম্ভাব্য মুখ’ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর চেহারা হবে ‘ইন্ডিয়া’র চেহারার মতো।’’
বুধবার দুপুরের বিমানে কলকাতা থেকে মুম্বইয়ের উদ্দেশে রওনা হন মমতা। মুম্বই বিমানবন্দরে নেমেই সোজা চলে যান অমিতাভ, জয়া বচ্চনদের বাড়ি ‘জলসা’য়। সেখানে ছিলেন অভিষেক বচ্চন, ঐশ্বর্য রাই বচ্চন এবং তাঁদের কন্যা আরাধ্যাও। জলসা থেকে বেরিয়ে মমতা বলেন, ‘‘অমিতাভজি প্রতি বছর আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে থাকেন। এ বার আমি তাঁকে পুজোয় আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’’ তবে পুজোর কোন দিন ‘বিগ বি’ কলকাতায় আসবেন, না কি রেড রোডের কার্নিভালে থাকবেন বা আদৌ থাকবেন কি না, তা অবশ্য বুধবার স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি।
মমতা যে মুম্বই পৌঁছে প্রথমে বচ্চন-বাড়িতে যাবেন তা আগেই ঠিক ছিল। বুধবার অমিতাভ, অভিষেক-সহ সকলের হাতে বুধবার রাখিও বাঁধেন মমতা। এর পর তিনি যান শিবসেনার প্রয়াত প্রতিষ্ঠাতা বালাসাহেব ঠাকরের বাসভবন মাতোশ্রীতে। সেখানে বালাসাহেব-পুত্র উদ্ধবকেও রাখি পরান তৃণমূলনেত্রী। প্রসঙ্গত, মুম্বইয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ‘ইন্ডিয়া’র নেতা-নেত্রীদের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করছেন উদ্ধব ঠাকরে এবং এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার। বুধবার দুপুরে ছত্রপতি শিবাজি বিমানবন্দরে মমতাকে স্বাগত জানাতে পুত্র আদিত্যকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন উদ্ধব।
অমিতাভকে ভারতরত্ন
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে এক বছর আগেই অমিতাভকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার ‘জলসা’য় বচ্চন পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পরে বললেন, ‘‘আমার হাতে থাকলে আমি এক সেকেন্ডে অমিতাভজিকে ভারতরত্ন দিয়ে দিতাম। তবে আমরা জনগণের পক্ষ থেকে তাঁকে ভারতরত্ন ঘোষণা করতেই পারি।’’ প্রসঙ্গত, এর আগে যখন অমিতাভকে ভারতরত্ন দেওয়ার ব্যাপারে সওয়াল করেছিলেন মমতা, সে সময়ে প্রশ্ন উঠেছিল, রাষ্ট্রীয় সম্মান নিয়ে এই কথা বলা যায় কি না তা নিয়ে।
কী হতে পারে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে?
গত ২৩ জুন পটনায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশের আহ্বানে ১৭টি বিরোধী দলের প্রথম বৈঠক হয়। ১৭-১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুতে ২৬টি দলের শীর্ষনেতৃত্বের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মপ্রকাশ করে ‘ইন্ডিয়া’। আগামী বৃহস্পতি ও শুক্রবার মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র সহযোগী দলের নেতারা বৈঠকে বসছেন। সেখানে জোটের আহ্বায়কের নাম ঘোষণা এবং পতাকা প্রকাশ করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
এনসিপি প্রধান শরদ বুধবার জানিয়েছেন, ২৮টি দলের ৬৩ জন নেতা হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে অংশ নেবেন। সূত্রের খবর, প্রাক্তন সাংসদ তথা নাসিক-কোলাপুরের কৃষক নেতা রাজু শেট্টির স্বাভিমানী পক্ষ বিরোধী জোটে সামিল হতে পারে। মমতাকে বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘যা আলোচনা হওয়ার সেখানে হবে। তার আগে আমি কিছু বলতে পারব না।’’
প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বিতর্ক
গত ১৮ জুলাই বেঙ্গালুরুতে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে পরে বিরোধী জোটের ‘প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী’ সম্পর্কে জানানো হয়েছিল— সময়ই বিষয়টি ঠিক করে দেবে। কিন্তু মুম্বই বৈঠকের আগে আপ মুখপাত্র প্রিয়ঙ্কা এবং দলের মন্ত্রী আতিশীর পরস্পরবিরোধী মন্তব্য বিষয়টিকে অন্য মাত্রা দিল বলে মনে করা হচ্ছে। রাহুল গান্ধীর নাম নিয়ে জল্পনা চললেও বিরোধী জোটের বৃহত্তম দল কংগ্রেস এখনও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কাউকে তুলে ধরেনি। যদিও বেঙ্গালুরুর বৈঠকের পরে তৃণমূলের একাংশ মমতাকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে চেয়ে লোকসভার ভোট প্রচারে নামার বার্তা দিয়েছিল। ১৪ অগস্ট দলের সমাজমাধ্যম প্রচার সংগঠনের একটি সভায় ওই দাবি তোলা হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী।
দক্ষিণ কলকাতার উত্তম মঞ্চে দলের সমাজমাধ্যম প্রচার সংগঠন ‘ফ্যাম’-এর সভায় রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যায় আসন পেতে আমাদের এই প্রচারে যেতে হবে। কারণ, এ রাজ্যের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের উপরেই আস্থা রাখেন। সর্বোচ্চ শক্তি নিয়েই দিল্লির দরবারে তৃণমূলকে হাজির করতে হবে।’’ কুণালের এই দাবিকে সমর্থন করেছেন সভায় উপস্থিত মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। এ বারও কি তেমন হবে?