প্রাক্তন প্রশিক্ষণরত আইএএস পূজা খেড়কর। —ফাইল চিত্র।
জালিয়াতি মামলায় বহিষ্কৃত হবু আইএএস পূজা খেড়করের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ করল দিল্লি হাই কোর্ট। গ্রেফতারি এড়াতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পূজা। অতীতে সেই মামলায় রক্ষাকবচ দিয়েছিল আদালত। তবে সোমবার সেই রক্ষাকবচ তুলে নিলেন বিচারপতি। একই সঙ্গে আদালত জানায়, পূজা শুধু ইউপিএসসি-র সঙ্গে নয়, দেশের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করেছেন!
গত মাসেই পূজার মামলার শুনানি শেষ হয়েছিল দিল্লি হাই কোর্টে। তবে রায় সংরক্ষিত রেখেছিলেন বিচারপতি। সোমবার রায় দেওয়ার সময় বিচারপতি জানান, প্রাথমিক যা তথ্য মিলেছে, তা থেকে পূজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মিলেছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, পূজা ইউপিএসসি পরীক্ষায় সংরক্ষণের সুবিধা পেতে যে নথি ব্যবহার করেছেন তা ভুয়ো। তিনি কোনও ভাবেই সেই সংরক্ষণের আওতায় পড়েন না। তিনি যা করেছেন তা বড় যড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়। তিনি প্রশাসনকে প্রভাবিত করা চেষ্টা করেছেন। আদালত আরও জানিয়েছে, যদি মামলাকারীর আগাম জামিন মঞ্জুর করা হয়, তবে তদন্তে প্রভাব পড়তে পারে।
আদালত রায় দেওয়ার সময় আরও বলে, ইউপিএসসি বিশ্বের অন্যতম সম্মানজনক একটি পরীক্ষা। এই পরীক্ষার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জালিয়াতি করে শুধু ইউপিএসসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নয়, গোটা দেশের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন পূজা।
জালিয়াতির দায়ে ইতিমধ্যে পূজার প্রশিক্ষণ এবং নিয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে ইউপিএসসি। তাঁকে সারা জীবনের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, আর কোনও দিন ইউপিএসসির কোনও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পূজা অংশ নিতে পারবেন না। ইউপিএসসি-র সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইতিমধ্যে দিল্লি হাই কোর্টের দ্বারস্থও হয়েছেন পূজা।
উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্রের পুণের অতিরিক্ত জেলাশাসক হিসাবে নিযুক্ত পূজার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়িতে মহারাষ্ট্র সরকারের স্টিকার, লালবাতি ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া অতিরিক্ত জেলাশাসকের কক্ষ ‘দখল’ করা এবং জেলাশাসকের সহকারীর কাছে বেআইনি দাবিদাওয়া পেশ করে সেই দাবি পূরণের জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। সেখান থেকে বিতর্কের সূত্রপাত। তার পর পূজার একের পর এক ‘কীর্তি’ প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে! জানা যায়, ইউপিএসসি পরীক্ষায় সংরক্ষণের সুবিধা পেতে ভুয়ো প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের আবেদন করেছিলেন তিনি। দু’বার ইউপিএসসি পরীক্ষায় সেই ভুয়ো মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জমাও দেন তিনি। এক বার দৃষ্টিশক্তির সমস্যার কথা উল্লেখ করে, আর দ্বিতীয় বার মানসিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে। তবে নিয়োগের আগে ২০২২ সালে এমসে প্রতিবন্ধকতার পরীক্ষার বন্দোবস্ত করা হলেও ছ’বার নানা অজুহাতে পূজা তা এড়িয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এত গলদ সত্ত্বেও তিনি কী ভাবে চাকরি পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।