আমেরিকায় তৈরি ‘এমকিউ-রিপার’ ঘাতক ড্রোন। ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরের আগেই সে দেশ থেকে ঘাতক ‘প্রিডেটর ড্রোন’ কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিল নয়াদিল্লি। বৃহস্পতিবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের উপস্থিতিতে ‘প্রতিরক্ষা ক্রয় পর্ষদ’ (ডিফেন্স অ্যাকিউজিশন কাউন্সিল)-এর বৈঠকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। মোদীর আসন্ন আমেরিকা সফরের সময়ই সে দেশ থেকে কয়েক ডজন হামলাকারী ‘এমকিউ রিপার’ ড্রোন কেনার বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হতে পারে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে।
ঘটনাচক্রে, লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা ফৌজের হামলায় ২০ জন সেনার শহিদ হওয়ার তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে হল এই সিদ্ধান্ত।আমেরিকায় তৈরি আধুনিক এমকিউ রিপার সিরিজ়ের ড্রোন কেনার চুক্তির অঙ্ক ৩০০ কোটি ডলার (প্রায় ২৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা) ছুঁতে পারে বলে ওই সূত্রের খবর।
এক দশক আগে তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মহম্মদ ওমর, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের প্রধান বায়তুল্লা মেহসুদ থেকে হালফিলে ইরানের জেনারেল কাশেম সোলেমানি এবং আল কায়দা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি হত্যায় ব্যবহার করা হয়েছিল এই ‘এমকিউ রিপার ড্রোন’। ভারত ওই সিরিজের ‘এমকিউ-৯বি সিগার্ডিয়ান’ সংস্করণটি কিনতে পারে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর।
আমেরিকার ‘জেনারেল অটোমিক্স অ্যারোনটিক্যাল সিস্টেমস’-এর ‘এমকিউ-৯ রিপার’ নামে এই হানাদার ড্রোন ৫০ হাজার ফুট উচ্চতায় থেকে শত্রুর উপর আঘাত হানতে পারে। এমকিউ-৯ রিপারের অস্ত্রভাণ্ডারের মধ্যে রয়েছে হেলফায়ার আর৯এক্স বা ‘নরকের আগুন’। ‘নিনজা বোমা’ নামে পরিচিত এই ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যেই জাওয়াহিরিকে বধ করেছিল আমেরিকা। এ ছাড়া এআইএম-৯ সাইডউইন্ডার স্বল্প পাল্লার ‘আকাশ থেকে আকাশ’ ক্ষেপণাস্ত্র এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গাইডেড বোমা জিবিইউ-৩৮ রয়েছে এই ঘাতক ড্রোনের অস্ত্রভান্ডারে।
২৭ ঘণ্টা ধরে এক টানা ওড়ার ক্ষমতা রয়েছে এই ঘাতক ড্রোনের। সর্বোচ্চ বহন ক্ষমতা ১,৭৪৬ কিলোগ্রাম। অর্থাৎ, শত্রুর এলাকার গভীরে ঢুকে হামলা চালানোর ক্ষমতা রয়েছে ‘এমকিউ-৯ রিপার’-এর। শক্রপক্ষের রেডারের নজরদারি এড়াতে সক্ষম এই হানাদার ড্রোন ৯৫০ অশ্বশক্তির ইঞ্জিনের সাহায্যে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৩০ কিলোমিটার গতিতে উড়তে সক্ষম।
এই ঘাতক ড্রোন হাতে এলে ভবিষ্যতে বালাকোটের ধাঁচে পাক অধিকৃত কাশ্মীর বা খাইবার-পাখতুনখোয়ায় জঙ্গি শিবিরে কোনও ঝুঁকি ছাড়াই হামলা চালাতে পারবে ভারতীয় সেনা। নেটো জোটের বাইরে ভারতই প্রথম দেশ, যারা আমেরিকা থেকে এই ঘাতক ড্রোন পেতে চলেছে। তবে ড্রোন বিক্রি করলেও আমেরিকার নির্মাতা সংস্থা ‘জেনারেল অটোমিক্স অ্যারোনটিক্যাল সিস্টেমস’ প্রযুক্তি হস্তান্তর করবে না ভারতকে। এমনকি, ভারতে এর উৎপাদনও হবে না বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর।