সিপিএমের বিধায়ক মবস্বর আলি ও তৃণমূল ছেড়ে সুবল ভৌমিক যোগ দিলেন বিজেপিতে। নিজস্ব চিত্র।
ত্রিপুরার বিধানসভা ভোটে সিপিএম ও কংগ্রেসের আসন সমঝোতার জেরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ এ বার প্রকাশ্যে আসতে শুরু করল। দলের টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন কৈলাসহরের সিপিএম বিধায়ক মবস্বর আলি। পাঁচ বছর আগে বামেদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ভোটে কৈলাসহরে মবস্বর জয়ী হলেও এ বার আসন সমঝোতায় প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি বীরজিৎ সিংহের জন্য ওই কেন্দ্রটি ছেড়ে দিয়েছে সিপিএম। অন্য কোনও কেন্দ্রেও তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি। মবস্বরের পাশাপাশি ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুবল ভৌমিকও শুক্রবার দিল্লিতে তাঁর পুরনো দল বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
সূত্রের খবর, আসন পাওয়া এবং প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বাম ও কংগ্রেস, দুই শিবিরেই স্থানীয় স্তরে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। যা প্রশমনের চেষ্টা চালাচ্ছেন রাজ্য নেতৃত্ব। এরই মধ্যে দু’টি আসনে প্রার্থী বদলও করেছে সিপিএম। মজলিশপুর মানিক দে’র পরিবর্তে সঞ্জয় দাস এবং আশারামবাড়ি কেন্দ্রে অঘোর দেববর্মার জায়গায় দিলীপ দেববর্মার নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে তারা।
বিধায়কের দলত্যাগ ‘দুর্ভাগ্যজনক ও অনভিপ্রেত’ বলে মন্তব্য করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরীর দাবি, ‘‘বিজেপির শাসনে ত্রিপুরায় যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের জন্যই সমঝোতা হয়েছে এবং কৈলাসহর কেন্দ্রটি কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিধায়ক মবস্বরের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল এবং তিনি খুশি মনে গ্রহণ করেছিলেন। আশ্চর্যের বিষয়, নিজের সিদ্ধান্তের বিপরীতে গিয়ে এখন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন!’’ কলকাতায় আজ, শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। পলিটবুরো সদস্য মানিক সরকার ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তপন চক্রবর্তী বৈঠকে যোগ দিতে এলেও নির্বাচনী কাজের জন্য জিতেন্দ্রেরা কলকাতায় আসছেন না।
যাঁকে জায়গা দিতে মবস্বরের আসন গিয়েছে বলা হচ্ছে, সেই কৈলাসহরের প্রাক্তন বিধায়ক ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিংহের বক্তব্য, ‘‘বিজেপিকে হটানোর জন্যই আসন সমঝোতা কংগ্রেস মেনে নিয়েছে। ফলে, বামফ্রন্টের সব দিক ভাবা উচিত ছিল।’’ তাঁর দাবি, মাত্র ১৩টি আসন কংগ্রেসকে দেওয়ায় কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। দিল্লিতে আলোচনা চলছে, এখনও প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। বীরজিতের দাবি, শেষ পর্যন্ত তাঁরা ১৯টি আসন চেয়েছিলেন সিপিএমের কাছে।
দিল্লিতে এ দিন বিজেপির সদর দফতরে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা, রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সম্বিত পাত্র প্রমুখের উপস্থিতিতে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন মবস্বর ও সুবল। সিপিএম-ত্যাগী বিধায়ক বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জনমুখী কাজ ঝড়ের গতিতে চলছে। সেই কর্মসূচিতে শামিল হওয়ার জন্যই বিজেপিতে যোগ দিয়েছি।’’ তৃণমূল-ত্যাগী সুবলেরও দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্যই গোটা বিশ্ব উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে চিনতে পেরেছে।’’ তাঁদের স্বাগত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মানিকের দাবি, ‘‘আমি নিশ্চিত, বিজেপিই ত্রিপুরায় সরকারে ফিরবে।’’ ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে বিজেপির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে দিল্লিতে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠকও হয়েছে। সেখানে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, জে পি নড্ডা-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।