Odisha Train Accident

উল্টে যাওয়া কামরা থেকে ঝুলছে যাত্রীদের হাত-পা, এখনও সেখানে পৌঁছতেই পারেননি উদ্ধারকারীরা

বালেশ্বরের কাছে বাহানগা বাজার স্টেশন এলাকা জুড়ে এখন শুধুই যান্ত্রিক আওয়াজ। শুক্রবার রাত থেকে থাকার কারণে মাথা আর কান ধীরে ধীরে ধাতস্থ হয়ে উঠেছে।

Advertisement
প্রচেতা পাঁজা
বালেশ্বর শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩ ১৩:২৯
Coromandel Express Accident: The horrible situation exposed on the daylight

ঘটনাস্থলে চলছে উদ্ধারকাজ। —নিজস্ব চিত্র।

রাতের অন্ধকারে আঁচ করা যায়নি। শনিবার ভোরের আলো ফুটতেই বোধগম্য হল, শুক্রবার রাতে কত বড় দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে! বাহানগা বাজারের কাছে যে জায়গায় দু’টি ট্রেন আর একটি মালগাড়ির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, তাকে কেন্দ্র করে যদি ৫০০ বর্গমিটারের একটা বৃত্ত কল্পনা করা যায়, গোটাটা জুড়ে তালগোল পাকিয়ে রয়েছে। উপড়ানো রেলের লাইন, দলা পাকিয়ে যাওয়া ওভার হেডের তার, তুবড়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক খুঁটি, একের উপর এক উঠে যাওয়া ট্রেনের কামরা— সব মিলিয়ে একেবারে লন্ডভন্ড অবস্থা।

রাতের অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেন এখন বদলে গিয়েছে ক্রেনের টানা যান্ত্রিক আওয়াজে। সেই সঙ্গে গ্যাস কাটারের ক্রমাগত কর্কশ শব্দ। রাত থেকে অনেকটা সময় ধরে একই জায়গায় রয়েছি বলে হয়তো, এ সব শব্দে ক্রমে মাথা আর কান অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। আশপাশের সকলেই নিচু স্বরে কথা বলছে। রাতে দেখেছিলাম, একের পর এক মৃতদেহ উদ্ধার। সকালের আলোয় সেই উদ্ধারকাজ আরও ত্বরান্বিত হয়েছে।

Advertisement

রাতভর চলেছে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া কামরা থেকে যাত্রীদের উদ্ধার করার কাজ। রাতে জেনারেটরের আলো থাকলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। দুর্ঘটনার অভিঘাত কতটা তা ঠিক মতো আন্দাজ করতে পারিনি। সকলেই ভোরের আলোর অপেক্ষা করছিলেন। সকাল হতেই দেখা গেল—কোনও এক দৈত্য যেন সব ওলটপালট করে দিয়েছে!

বাহানগা বাজারের এই জায়গাটায় যে কয়েক ঘণ্টা আগেও রেলের চারটে ট্র্যাক ছিল, দেখে তা বোঝা দায়। রেললাইন দুমড়েমুচড়ে গিয়ে ছিটকে পড়েছে অন্য কোথাও। চাকা আকাশের দিকে করে রেললাইন থেকে বেশ কিছুটা দূরে পড়ে রয়েছে ট্রেনের কামরা। কোনওটা আবার রেললাইন থেকে ছিটকে গিয়ে পড়েছে অনেক দূরে। একটা মালগাড়ি রয়েছে, যার উপর চেপে বসেছে একটা আস্ত ইঞ্জিন।

ট্রেনের তলায় পড়ে রয়েছে দেহ।

ট্রেনের তলায় পড়ে রয়েছে দেহ। —নিজস্ব চিত্র।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। তার পর অন্তত আড়াই ঘণ্টা রেলের তরফে কাউকে দেখা যায়নি এলাকায়। তাঁদের বক্তব্য, প্রাথমিক ভাবে উল্টেপাল্টে যাওয়া কামরা থেকে তাঁরাই উদ্ধার করেছেন যাত্রীদের। এর পর দুর্ঘটনার খবর চাউর হতেই একে একে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় উদ্ধারকারী দল।

শনিবার সকালে এখানে পৌঁছেছে বায়ুসেনার একটি দল। যে কামরাগুলিতে উদ্ধারকারীরা পৌঁছতে পেরেছেন সেখান থেকে বেরোচ্ছে একের পর এক দেহ। চাদরে মুড়ে তা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ময়নাতদন্তের জন্য। এই মৃতের স্তূপেই আবার কেউ কেউ জীবিত অবস্থায় রয়েছেন। তাঁদের পাঠানো হচ্ছে হাসপাতালে। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের চেহারা এমনই দুর্বিষহ যে, শনিবার সকাল পেরিয়ে বেলা হলেও এখনও বহু কামরায় হাত ছোঁয়াতে পারেননি উদ্ধারকারীরা। কারণ সেগুলি দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে এমন ভাবে যে, বলে না দিলে আলাদা করে ট্রেনের কামরা বলে চিনতে পারা দুষ্কর। অথচ উদ্ধারকারীরা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন জানালা বা দরজা থেকে ঝুলছে যাত্রীদের হাত-পা। তাঁরা জীবিত না মৃত? আপাতত উত্তর জানা নেই কারও। যদিও শনিবার দুপুরে যখন এই দৃশ্য দেখছে বাহানগা বাজার, তার ঘণ্টাখানেক আগেই দিল্লি থেকে রেলের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা বিবৃতি দিয়ে দেন, উদ্ধারকাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। অথচ বাস্তবচিত্র ভিন্ন।

আরও পড়ুন
Advertisement