সমাজ সচেতনতামূলক বার্তার প্ল্যাকার্ড হাতে স্কুলের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।
নেশা হোক বইয়ে, মাদকজাত দ্রব্যের নয়। শিশুমনে নেশামুক্তির পাঠদানে ‘স্টুডেন্টস উইক’-এ অভিনব উদ্যোগ ব্যারাকপুরের লাটবাগান উচ্চ বিদ্যালয়ে। জাতীয় এবং রাজ্য স্তরের বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বয়ঃসন্ধিকালে শিশুমনে নেশার প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। তাই, ছোট থেকেই স্কুল স্তরে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে এগিয়ে এল উত্তর ২৪ পরগনার এই স্কুল।
প্রতি বারই নতুন বছরে শিক্ষার মান উন্নয়নের স্বার্থে এবং শিক্ষার্থীদের সুরক্ষিত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে রাজ্যের শিক্ষা দফতর বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়। ২০২৩ থেকে রাজ্য জুড়ে সরকারি স্কুলগুলিতে বছরের প্রথম সপ্তাহে পালিত হয় ‘স্টুডেন্টস উইক’। এই প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে প্রতি বারই শিক্ষার্থীদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা বার্তাও পাঠিয়ে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্কুলগুলি এই সময়ে বিশেষ বিশেষ কর্মশালার মধ্যে দিয়ে পালন করে ‘স্টুডেন্টস উইক’। ২ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহভর নানা অনুষ্ঠান চলে। সে রকমই বিশেষ কিছু কর্মশালার আয়োজন করে লাটবাগান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে পড়ুয়ারাও।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃদুল বাগচী জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা পাঠের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। স্কুলের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির সমস্ত পড়ুয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয় ‘গ্র্যাজুয়েশন সার্টিফিকেট’। এই শংসাপত্র মূলত পড়ুয়াদের পড়াশোনার আগ্রহ বৃদ্ধির স্বার্থে দেওয়া হয় সমস্ত স্কুলেই।
কথায় প্রচলিত রয়েছে ‘সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে নরকবাস’। শিশু মনে ভাল-মন্দ এবং সর্বোপরি মাদক দ্রব্য ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করাই এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য। নেশার শুরুর পথ এবং পরবর্তীতে জীবন কতটা দূর্বিষহ হয়ে পড়তে পারে, সেই বিষয়েই সবিস্তার আলোকপাত করেন স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী এবং মনোবিদ পুর্ণিমা সান্যাল এবং সমাজসেবী নীলাঞ্জন সান্যাল।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে অনেক সময়ে পড়াশোনা বা স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে ছোট থেকেই ভীতি দেখা যায়। ‘স্টুডেন্টস উইক’ এই ভীতি দূর করার এক অভিনব মাধ্যম। পড়াশোনার পাশাপাশি এই ধরনের বিশেষ কর্মসূচি বহু সময়ে সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।’’
বাকি দিনগুলিতে আয়োজন করা হয় ‘রিডিং’, ‘রাইটিং’, ‘স্টোরি টেলিং’, ‘কুইজ’ প্রতিযোগিতার। স্কুল প্রাঙ্গণে বসে অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড হেল্প ডেস্ক। যেখানে রাজ্য সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন স্কলারশিপের বিষয়ে অবগত করা হয় শিক্ষার্থীদের। এ ছাড়াও এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও স্কুল মিলিত ভাবে পড়ুয়াদের সবুজায়নের বার্তা দেয়। বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করতে পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হয় চারা গাছ।
একদিন সায়েন্স-টেকনোলজি-ইঞ্জিনিয়ারিং-ম্যাথামেটিক্স (স্টেম) নিয়ে এগজ়িবিশন-র আয়োজন করা হয়। অন্য আর একদিন, বাংলার স্বাধীনতার নবজাগরণে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ব্যারাকপুর অঞ্চলের ইতিহাস তুলে ধরেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কানাইপদ রায়। শেষ দিন ‘হ্যাংলা পেটুক’ স্টল বসে। বর্তমান-প্রাক্তন প্রায় সকল পড়ুয়া নিজেরাই বিভিন্ন পদ বাড়ি থেকে রেঁধে নিয়ে আসে। যেন স্কুল প্রাঙ্গণেই খাদ্য মেলা!
উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের রূপায়িত বিভিন্ন প্রকল্পের বিষয়ে ছাত্র ছাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতেই মূলত ‘স্টুডেন্টস উইক’ পালনের উদ্যোগ। আবার বলা যায়, এই ধরনের অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের মনোবল বৃদ্ধি পাবে, তারা আরও বেশি স্কুলমুখী হবে— সেটাই লক্ষ্য। অন্য দিকে, সামনেই শুরু হতে চলেছে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা নিয়ে অনেক পরীক্ষার্থীই এই সময়ে চিন্তায়, ভয়ে থাকে। ‘স্টুডেন্টস উইক’-এর বিভিন্ন অনুষ্ঠান তাদেরও স্বস্তি দেবে বলে মনে করে শিক্ষা মহলের একাংশ।