শনিবার নয়াদিল্লির নিগমবোধ শ্মশানে মনমোহন সিংহের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। ছবি: পিটিআই।
প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের শেষকৃত্যে ‘অশ্রদ্ধা’ এবং ‘অব্যবস্থা’র ৯ দফা নমুনা তুলে ধরল কংগ্রেস। শনিবার নয়াদিল্লির নিগমবোধ শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় মনমোহনের। কেন নির্দিষ্ট স্মৃতিসৌধে মনমোহনের শেষকৃত্য হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে কংগ্রেস। রাহুল গান্ধী সরাসরি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মনমোহনকে অপমান করার অভিযোগ তোলেন। এই আবহেই শেষকৃত্যে কী ভাবে মনমোহনের প্রতি ‘অশ্রদ্ধা’ প্রদর্শন করা হয়েছে এবং শ্মশানে কী কী ‘অব্যবস্থা’ ছিল, ৯ দফায় তার ব্যাখ্যা দিলেন কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা।
কী কী অভিযোগ কংগ্রেসের
১
শেষকৃত্যের সময় দূরদর্শন (ডিডি) ছাড়া আর কোনও সংবাদ সংস্থাকে ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। দূরদর্শন মূলত নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহকে ক্যামেরায় ধরেছে। খুব অল্প সময় মনমোহন সিংহের পরিবারকে দেখানো হয়েছে।
২
মনমোহন সিংহের পরিবারের জন্য মাত্র তিনটি আসন রাখা হয়েছিল। কংগ্রেস নেতারা বার বার মনমোহনের তিন কন্যা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য চেয়ার বৃদ্ধির কথা বলেন।
৩
গান স্যালুটের সময় প্রয়াত মনমোহনের স্ত্রী গুরশরণ কউরের হাতে যখন জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে, তখন প্রধানমন্ত্রী এবং অন্য মন্ত্রীরা উঠে দাঁড়াননি।
৪
শেষকৃত্যের সময় মনমোহনের পরিবারকে পর্যাপ্ত জায়গা দেওয়া হয়নি।
৫
সাধারণ মানুষকে বাইরে রাখা হয়। তারা শ্মশানের বাইরে থেকেই শেষকৃত্য দেখেন।
৬
অমিত শাহের কনভয় শেষকৃত্যে ব্যাঘাত ঘটায়। মনমোহনের পরিবারের সদস্যেরা যে গাড়িগুলি নিয়ে এসেছিলেন, সেগুলিকে বাইরে রাখা হয় এবং গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে পরিবারের সদস্যেরা গাড়ি খুঁজে নিয়ে আসেন।
৭
মনমোহনের দৌহিত্র এবং দৌহিত্রীরা শেষকৃত্য সম্পন্ন করার সময়ে স্থানাভাবে চিতার কাছে পৌঁছতে পারেননি।
৮
কূটনীতিকেরা কোথায় বসেছিসেন তা দেখা যাচ্ছিল না। অদ্ভুত ভাবে ভুটানের রাজা যখন উঠে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী তখনও বসে রইলেন।
৯
গোটা এলাকায় খুবই খারাপ ব্যবস্থাপনা ছিল। বহু মানুষ আসতে পারেন, এমন জায়গা রাখা হয়নি।
এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রের তরফে এখনও পর্যন্ত কিছু বলা না-হলেও শাসকদল বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, “কংগ্রেস, বিশেষত রাহুল গান্ধীর এই ধরনের হীন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। শোকের দিনে আমি বিশ্বাস করি কংগ্রেস এই ধরনের রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকবে।”
নিগমবোধ ঘাট শ্মশানে মনমোহনের শেষকৃত্যের সিদ্ধান্তে শুরু থেকেই আপত্তি জানাচ্ছে কংগ্রেস। তাদের প্রশ্ন, এর আগে দেশের কোনও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্য এই শ্মশানে হয়েছে কি? কংগ্রেসের দাবি ছিল, যমুনার তীরে রাজঘাটের আশপাশের কোনও জমিতে মনমোহনের শেষকৃত্য হোক, যেখানে ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, অটলবিহারী বাজপেয়ীদের স্মৃতিসৌধ রয়েছে। নিগমবোধ ঘাটে শেষকৃত্য হলেও ওই স্থান স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উপযুক্ত নয় বলে দাবি করে তারা।
স্মৃতিসৌধ নিয়ে বিতর্কের মাঝে শুক্রবার বেশি রাতে একটি বিবৃতি দেয় অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তারা জানায়, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের কাছ থেকে মনমোহনের স্মৃতিসৌধ তৈরির জন্য জায়গার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। সেই আবেদন গ্রহণ করেছে সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে মনমোহনের পরিবার এবং খড়্গের সঙ্গে কথাও বলেছেন বলে জানানো হয়। মনমোহনের পরিবারকে জানানো হয়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিসৌধের জন্য জায়গা বরাদ্দ করা হবে। তবে তার আগে ওঁর শেষকৃত্য এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হোক। কারণ, এ ব্যাপারে একটি ট্রাস্ট তৈরি করা দরকার। সেই ট্রাস্টকে জায়গা বরাদ্দ করবে কেন্দ্র।